Header Border

ঢাকা, রবিবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল) ২৪.৫৩°সে
শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় ! সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় ! অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায় ! ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরাইলকে বয়কটের আহ্বান এরদোগানের আজ ঢাকায় সমাবেশ,৯ মহানগরে শোভাযাত্রা;নতুন বার্তা দেবেন তারেক রহমান মোজাম্মেল-শাহরিয়ার-শ্যামল ৭ দিনের রিমান্ডে ডিসি নিয়োগ নিয়ে আজও বিক্ষোভ সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে ৯টি দফা দাবি জানিয়েছে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর ট্রাস্ট’। ভারত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রভুত্বের রাজনীতি করেছে: মির্জা ফখরুল

খোঁজ মিলছে না যুবলীগ চেয়ারম্যানের

ডেইলি নিউজ রিপোর্ট॥ ব্যাংক হিসাব তলব ও দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর যুবলীগের দাপুটে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ‘খোঁজ’ মিলছে না। প্রতিদিন একবার হলেও রাজধানীর ধানমণ্ডিতে নিজের প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণা কেন্দ্রে যেতেন, সেখানেও যান না প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে। আর দলীয় কার্যালয়ে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে যান না ২৪ দিন ধরে। নেতাকর্মীরাও তাঁর সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না। সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলছেন না। ধরছেন না তাঁদের ফোন।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ওই বাসা থেকে অস্ত্র ও ইয়াবা পাওয়া যায় বলে র‍্যাব জানায়। পরে তাঁর বিরুদ্ধে গুলশান থানায় মাদক, অস্ত্র ও মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করে র‍্যাব। ওই দিন সন্ধ্যায় মতিঝিলের ফকিরাপুল এলাকায় খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ইয়ংমেনস ক্লাবে অভিযান চালায় র‍্যাব। ওই ক্যাসিনোতে জুয়া খেলা অবস্থায় নারী ও পুরুষ মিলে ১৪২ জনকে আটক করা হয়। পরে তাঁদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

একই রাতে রাজধানীর ওয়ান্ডারার্স ক্লাব, গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনি মার্কেটের পাশে মুক্তিযোদ্ধা ক্লাব ও বনানীতে গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান অভিযান চালায় র‍্যাব।

এরপর ওই অভিযান ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেন যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি অ্যারেস্ট করবেন, আমি বসে থাকব না। আপনাকেও অ্যারেস্ট হতে হবে। কারণ আপনিই প্রশ্রয় দিয়েছেন।’

যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আপনি বলছেন ৬০টি ক্যাসিনো আছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৬০ জন আপনারা কি আঙুল চুষছিলেন? যে ৬০ জায়গায় ক্যাসিনো সেই ৬০ জায়গায় থানাকে অ্যারেস্ট করা হোক। সেই ৬০ জায়গায় যে র‍্যাব ছিল তাদের অ্যারেস্ট করা হোক। আমি অন্যায় করেছি, আপনি কী করেছেন? আপনিই প্রশ্রয় দিয়েছেন। আমি জানি না, আপনিই জানেন। আমি ক্যাসিনো দেখিনি। আমার খুব সখ জাগছে ক্যাসিনো দেখতে, নিয়ে যাবেন আমাকে?’

পরে অবশ্য নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান। অভিযানকে স্বাগত জানান।

এরপর আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেপ্তার হন। শামীম ও খালেদকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের নাম। সম্রাটের পর যুবলীগের পদ বাণিজ্যে আলোচনায় আসে কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানের নাম। আনিস যুবলীগ অফিসের কর্মচারী ছিলেন। আনিস ও সম্রাট দুজনই ওমর ফারুকের আশীর্বাদপুষ্ট। ওমর ফারুকের আশকারায় তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ক্যাসিনোর অবৈধ আয় থেকে ওমর ফারুককে নিয়মিত মাশোয়ারা দিতেন বলে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাব তলব করা হয় ওমর ফারুকের।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৩ অক্টোবর যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, ওমর ফারুক চৌধুরীর নামে থাকা সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন, বিবরণীর তথ্য তিন কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে। এরপর তিনি নিজেকে ব্যর্থ সভাপতি হিসেবে বক্তব্য দেন মিডিয়াতে।

যুবলীগের চেয়ার‍ম্যান এরপর সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খান ৬ অক্টোবর দেশ ত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর। তখন ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘আমি দেশ ছেড়ে পালাব কেন? আমি দেশেই আছি, দেশেই থাকব। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নন। আমি যদি কোনো অপরাধ করি তাহলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমি মানুষ, আমি রাজনীতি করি। আমার দেশত্যাগে যদি নিষেধাজ্ঞা দিয়ে থাকে সরকার তাহলে আমার সেটা মেনে নিতে হবে। আমি বলতে পারি না যে আমি সম্পূর্ণ নিরপরাধ। আমার অপরাধ পেলে অবশ্যই আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে প্রশাসন। তবে আমি দেশ ছেড়ে পালাব না।’

সেদিন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ওমর ফারুক চৌধুরী আরো বলেন, ‘বিচারক কখন শাস্তি দেন? যখন আপনি নিজের মনের কাছে অপরাধী থাকবেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমি অপরাধী না। তাহলে আমি দেশ ছেড়ে পালাব কেন? পালিয়ে গেলে তো বিচারকের শাস্তি দিতে সুবিধা হবে। আমি অপরাধী না- এ কথা বলার সুযোগ থাকবে না। যেহেতু সব কিছু একটা বিচারিক প্রক্রিয়ার দিকে যাচ্ছে সেহেতু বিচারে যা হয় হবে, আমি অপরাধী সাব্যস্ত হলে আমার শাস্তি হবে। আমি পালাব না। আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাকে গ্রেপ্তার করলে আমার কাজ হবে আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করা। অপরাধ হচ্ছে প্রমাণের বিষয়।’

ওই বক্তব্যের পর আস্তে আস্তে চুপসে যান ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁকে আর প্রকাশ্যে ও গণমাধ্যমে দেখা যায়নি। এদিকে গত বুধবার যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলন নিয়ে কথা বলতে ওমর ফারুক চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কথা বলেননি।

এদিকে গত শুক্রবার যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডিয়াম সভায়ও হাজির হননি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। কাউন্সিলের আগে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে তাঁর অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। যুবলীগের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য তাঁকে দায়ী করা হয়। তাঁর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভার দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে ওমর ফারুক চৌধুরীর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

যুবলীগের একটি সূত্র বলছে, আসন্ন কংগ্রেসে ওমর ফারুক চৌধুরীকে সভাপতিত্ব করতে দেওয়া হবে না।

যুবলীগের দাপুটে চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রিয় স্থান ছিল নিজের প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণা কেন্দ্র। নিয়ম করে প্রতিদিন অন্তত একবার ধানমণ্ডির ওই অফিসে আড্ডা দিতেন তিনি। পছন্দের জায়গা হওয়ায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাপিয়ে এই যুব গবেষণা কেন্দ্রই হয়ে ওঠে নেতাকর্মীদের রাজনীতি চর্চার চারণভূমি। আর এখানে বসেই সারা দেশের যুবলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ধানমণ্ডির সেই প্রিয়স্থানেই তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যান না যুবলীগ চেয়ারম্যান। আর ২৪ দিন ধরে যান না দলীয় কার্যালয়েও।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্যার, এখন ধানমণ্ডির ৮/এ সড়কে ইস্টার্ন হেরিটেজ নামে তাঁর বাসায় রয়েছেন। তবে তিনি কারো সঙ্গে দেখা করেন না।’

যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাসার চার দেয়ালের মধ্যে গত ২৪ দিন ধরে সময় কাটাচ্ছেন ওমর ফারুক চৌধুরী। অনেকটাই সাংবাদিক ও লোকজনকে আড়াল করে চলছেন তিনি ।

এ দিকে ওই বাসার আশপাশের ও যুবলীগের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে বাসার সামনে প্রায়ই নেতাকর্মীদের লাইন লেগে থাকত। অভিযান শুরুর পর প্রথম দিকে অনেক নেতাকর্মী যুবলীগ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আসত। কিন্তু কয়েক দিন হলো সেখানে কারো দেখা মিলছে না।

এদিকে যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেসের তারিখ ঘোষণার পর চাঙা ভাব দেখা দিয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। পদপ্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নেতাকর্মীদের অনেকে ধারণা করেছিলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনের কার্যালয়ে আসবেন। তবে তিনি আসেননি আজও।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায় !
ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরাইলকে বয়কটের আহ্বান এরদোগানের
আজ ঢাকায় সমাবেশ,৯ মহানগরে শোভাযাত্রা;নতুন বার্তা দেবেন তারেক রহমান

আরও খবর