Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ৩১শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (বসন্তকাল) ২৯.৯৬°সে

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তায় বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

আলমগীর পারভেজ: ঈদের সময় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে লাখ মানুষের রাজধানী ঢাকা ত্যাগ এবং আবার ফিরে আসার কারণে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। সরকারের পক্ষ থেকেও লকডাউন বাড়ানোর ব্যাপারে ভারতীয় ধরনের দিকেই নজর রাখা হচ্ছে বলে জানানো হচ্ছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান লকডাউন আরও বাড়ানো হবে কিনা- তা ভারতের করোনা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে তিনি বলেন, দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ কবে থেকে চলবে তা নির্ভর করছে ভারতের করোনা পরিস্থিতির ওপর। আমরা ভারতের দিকে নজর রাখছি। গত কয়েক দিন ভারতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা কমছে। সেটা আমরা লক্ষ্য রাখছি। এরপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
তিনি আরও বলেন, লকডাউন বাড়বে কিনা সেজন্য আরও এক সপ্তাহ দেখব। এ সময়ের মধ্যে ভারতের একটি চিত্র আমরা পেয়ে যাব। তারপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে সরকার।
এদিকে মানুষ যেভাবে কোভিড-১৯ বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করছে, তাতে সামনে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সারাবিশ্বে উদ্বেগের হয়ে দাঁড়ানো করোনার চারটি ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে পরিচিত বি.১.৬১৭ ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে। প্রতিবেশী দেশটিকে বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলে এটি এখন বিশ্বের নানা স্থানে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু, এ অবস্থাতেও বাংলাদেশে বিধি-নিষেধ শিথিল করা হয়েছে, সামাজিক দূরত্ব মানতে মানুষের অনীহা দেখা যাচ্ছে। টিকাদান কর্মসূচিও অনিশ্চিতয়তার মধ্যে পড়েছে। ফলে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে।
ঈদুল ফিতরের আগে সরকার করোনা সংক্রান্ত বিধি-নিষেধ শিথিল করে দেয়। তবে, মানুষের ঈদযাত্রা থামানোর জন্যে গণপরিবহন বন্ধ রাখা হয়। এরপরও গ্রামের বাড়িতে ঈদ উদযাপন করতে স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে লাখো মানুষ রাজধানীসহ বড় শহরগুলো ছেড়ে গেছেন।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা ইতোমধ্যে টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার ক্ষেত্রে ১৪ লাখের বেশি ডোজের ঘাটতি রয়েছে। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি মৃত্যুহার কমায়। মোট ৩৭ লাখ ৮৩ জন করোনার টিকার দুই ডোজ পেয়েছেন। প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জন।
টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারত ও নেপালের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এড়াতে এখন মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান মো. সায়েদুর রহমান  মনে  করেন, ‘কয়েক সপ্তাহ পর সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা আবারও চাপে পড়তে পারে। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতির জন্যে  প্রস্তুত থাকতে হবে।
সায়েদুর রহমান মনে করেন, ভারতের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের উচিত প্রতিটি জেলা হাসপাতালে নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং শহরগুলোর সব হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটরের ব্যবস্থা করা। রোগীদের থাকার ব্যবস্থা করার জন্যে এই সময়ের মধ্যে সরকারের কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতালও তৈরি করা উচিত বলে মত দেন তিনি। বড় শহরগুলোকে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা এই শহরগুলো থেকে বের হবেন, তাদের ঢোকার অনুমতি দিতে হবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর।’
এছাড়া কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সতর্ক করেছেন যে, যেহেতু করোনাভাইরাস পরিবর্তিত হতে থাকে এবং এরইমধ্যে বিশ্বের সব উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সেহেতু এখানে একটি নতুন ভ্যারিয়েন্ট তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ভ্যারিয়েন্ট আরও মারাত্মক হতে পারে। যে চারটি ভ্যারিয়েন্টকে ‘বৈশ্বিক উদ্বেগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার মধ্যে চতুর্থটি হচ্ছে ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া বি.১.৬১৭। অন্য তিনটি দ্রুত ছড়ানো ও মারাত্মক ভ্যারিয়েন্ট প্রথম শনাক্ত হয় যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে।
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ যেভাবে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় ছুটে যাচ্ছে, তাতে ঈদের পর বাংলাদেশে ভারত ও নেপালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সম্প্রতি সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
তিনি বলেন, ‘মানুষ বেপরোয়াভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ঈদের পর ভারত ও নেপালের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বাংলাদেশে।’
বিএসএমএমইউর সাবেক ভিসি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম আশঙ্কা করছেন, সংক্রমণের হার আরও বাড়তে পারে এবং সামনে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচুর ভিড় দেখা যেতে পারে। বাড়তে পারে মৃত্যুও।
তিনি বলেন, ‘আমাদের অক্সিজেনের উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়াতে হবে। কিছু ফিল্ড হাসপাতালও প্রস্তুত করা দরকার। এগুলো করতে না পারলে সর্বনাশা পরিস্থিতি তৈরি হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

জামিন নামঞ্জুর, সাংবাদিক শামসুজ্জামান কারাগারে
সত্য তথ্য প্রকাশ করলে সরকার বাধা দেবে না : আইনমন্ত্রী
ভিকারুননিসার দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
বগুড়ায় মেডিকেল ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৮
রমনা থানার মামলায় গ্রেপ্তার সাংবাদিক শামসুজ্জামান, নেওয়া হয়েছে আদালতে
শ্রীপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শ্রমিকের মৃত্যু

আরও খবর