ডেইলি নিউজ রিপোর্ট॥ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সম্রাটের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে চিকিৎসক ডা. মহসিন আহমেদ এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘সম্রাটের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। গতকাল যতগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে তার সবগুলো রিপোর্ট ভালো এসেছে। তবে রাতে তার হৃদস্পন্দন অনিয়মিত ছিল।’
তিনি বলেন, ‘সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা মিলিয়ে বর্তমানে তিনি ভালো আছেন। তাকে আরও ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।’
চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে ড. মোহসীন বলেন, ‘তার জীবনের কোনো ঝুঁকি নেই এবং তাকে বিদেশে নেওয়ারও প্রয়োজন নেই।’
বুধবার সকালে সম্রাটের অসুস্থতার কথা জানিয়ে আদালতকে চিঠি দিয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার ইকবাল কবির চৌধুরী।
এদিকে, সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুই মামলায় ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ড শুনানি জন্য ১৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেছেন আদালত।
অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক দুই মামলায় গত সোমবার সম্রাটকে গ্রেপ্তার দেখানো পূর্বক ২০ দিনের রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল আজ। তবে অসুস্থতার কারণে তাকে আদালতে উপস্থিত না করানোয় ঢাকার মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী নতুন এ দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার বুকে ব্যথা অনুভব করলে সকাল সাড়ে ৭টায় সম্রাটকে কারাগার থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর ঢামেক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ।
হৃদরোগ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাবেক এই যুবলীগ নেতাকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। এসময় শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরা সেখনে উপস্থিত ছিলেন। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্রাটকে হাসপাতালে ভর্তি করে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিন নম্বর শয্যায় স্থানান্তর করে।
ভর্তির পর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান, সার্জারি বিভাগের ডা. আশরাফুল হক সিয়াম এবং কার্ডিওলজি বিভাগের ডা. ফাদিয়া আফরোজ ঝুমার সমন্বয়ে ৩ সদস্যের প্রাথমিক একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক সিসিইউতে কর্মরত একজন চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সম্রাটের হৃদযন্ত্রে ১৯৯৮ সালে বাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার যদি বাল্বে কোন সমস্যা হয়, তাহলে তার শ্বাসকষ্ট হবে, শরীরে ঘাম হবে, রক্তের ঘনত্ব বাড়বে। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে এ ধরনের কোন উপসর্গ পাই নি। তাছাড়া তিনি স্বাভাবিক কথা বলতে পারছেন এবং হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা তরল খাবারও স্বাভাবিক ভাবে খেতে পারছেন।
এসময় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টটিউিট ও হাসপাতালে পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিচালককে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যরা সম্রাটকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেন। এছাড়া কয়েকটি পরীক্ষার ফলফল পেতে সময় লাগবে। তাই সব মিলিয়ে বুধবার তার ২৪ ঘন্টার পর্যবেক্ষণ ফলাফল এবং বাকী পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে নাকি ছেড়ে দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর পরপরই হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান জানান, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের অবস্থা স্বাভাবিক। তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বেশকিছু জরুরী পরীক্ষা করানো হয়েছে, যার রিপোর্ট ভালো। তবুও তাকে ২৪ ঘণ্টার জন্য অবজারভেশনে রাখতে হচ্ছে। কারণ যেকোনো হৃদরোগের রোগী এলে নিয়মানুযায়ী পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।