মহামারি করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ ৭৭ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৯ হাজার ৬৬১ জনে। এর আগে গত ৮ এপ্রিল দেশে করোনায় সর্বোচ্চ ৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৩৪৩ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯৩৭ জনে। এর আগে গত ৭ এপ্রিল দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৬২৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
করোনা ভাইরাস নিয়ে গতকাল শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, এদিন সুস্থ হয়েছেন আরও ৩ হাজার ৮৩৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। এর আগের দিন শুক্রবার দেশে ৭ হাজার ৪৬২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। এ ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে মারা যান আরও ৬৩ জন।
এদিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ও প্রাণহানির পরিসংখ্যান রাখা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্যানুযায়ী, শনিবার পর্যন্ত বিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ কোটি ৫২ লাখ ৯৫ হাজার ৬২২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৫৫৯ জনের। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার ৯১৭ জন।
করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু হয়েছে বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩ কোটি ১৮ লাখ ২ হাজার ৭৭২ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৭৪ হাজার ৮৪০ জনের। আক্রান্তে ও মৃত্যুতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন এক কোটি ৩৩ লাখ ৭৫ হাজার ৪১৪ জন এবং মারা গেছেন ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৯৩৪ জন।
আক্রান্তে তৃতীয় এবং মৃত্যুতে চতুর্থ অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত করোনায় এক কোটি ৩২ লাখ ২ হাজার ৭৮৩ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৭ জনের। আক্রান্তের দিক থেকে চতুর্থ স্থানে ফ্রান্স রয়েছে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ৫০১ জন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৯৮ হাজার ৩৯৫ জন।
আক্রান্তের দিক থেকে রাশিয়া রয়েছে পঞ্চম স্থানে। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৯৮৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন এক লাখ দুই হাজার ২৪৭ জন। এ ছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩তম।
এদিকে গবেষণা বলছে, বাজার এবং গণপরিবহন থেকেই এখন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এখন পর্যন্ত দেশে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই হয় বাজারে গেছেন, নয়তো গণপরিবহন ব্যবহার করেছেন। সম্প্রতি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) এক প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য বলছে, বাজার ও গণপরিবহন ছাড়া যেসব জায়গা থেকে মানুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে উপাসনালয়, সভা-সেমিনারের মতো জনসমাগমস্থল, স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে ভ্রমণ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া এবং পর্যটনকেন্দ্রও রয়েছে।
করোনায় আক্রান্ত রোগীদের হিস্ট্রি (ইতিহাস) পর্যালোচনা করে সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ এসব উৎসস্থল চিহ্নিত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আইইডিসিআরের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক তাহমিনা শিরিন বলেন, তারা গত ৫ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ হাজার আক্রান্ত ব্যক্তির তথ্য পর্যালোচনা করেছেন। এর ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
ওই রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআর বলছে, ৬১ শতাংশ রোগীর বাজারে যাওয়া এবং গণপরিবহন ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে। সংক্রমিত হওয়া ব্যক্তিদের অন্তত ৩০ শতাংশ জনসমাগমস্থল (সভা–সেমিনার) এবং উপাসনালয়ে গিয়েছিলেন।
ওই সাড়ে আট হাজার রোগীর তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে গিয়েছিলেন ২৬ শতাংশ, করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এসেছিলেন ২২ শতাংশ। এ ছাড়া আন্তবিভাগ ভ্রমণ করেছিলেন ১৩ শতাংশ, সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন ১২ শতাংশ।
আইইডিসিআর আক্রান্ত রোগীদের ‘কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং’ (রোগীর সংস্পর্শে আসা সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করা)–এর কাজটি করে আসছে। এই সময় রোগীদের কাছ থেকে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোর মধ্যে আছে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি সংক্রমিত হওয়ার আগে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন এবং কোথা থেকে সংক্রমিত হয়েছেন বলে ধারণা করেন। রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত সব তথ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও সরবরাহ করা হয়। দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় গত সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারা দেশে সরকার নানা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। তবে এই বিধিনিষেধ ঢিলেঢালাভাবে কার্যকর হচ্ছে। প্রথমে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া সত্তেও গত বৃহস্পতিবার থেকে দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। গতকাল থেকে শপিং মলও নির্দিষ্ট সময়ের জন্য খোলা থাকছে। খোলা জায়গায় সব কাঁচাবাজার স্থানান্তরের নির্দেশনা থাকলেও তা নিশ্চিত হয়নি।
আইইডিসিআরের পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে। বাজার খোলা জায়গায় নিয়ে আসার নির্দেশনা আছে, এটিও নিশ্চিত করতে হবে। কোথাও বদ্ধ জায়গায় বাজার হলে সেখানে যাতে জনসমাগম বেড়ে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে দেশে নতুন রোগীর সঙ্গে মৃত্যুও খুব দ্রুত বাড়ছে। ১০ দিন ধরে প্রতিদিনই অর্ধশতাধিক মানুষের মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই ১০ দিনে ৫৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চার দিন ধরে মৃত্যু ৬০–এর ওপরে। এই চার দিনে ২৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।