Header Border

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৭.৯৬°সে

ঘাটতি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টিআইবির ১২ দফা সুপারিশ

সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ প্রাণহানি কমানো, দুর্যোগ মোকাবেলার একটি কাঠামোবদ্ধ মডেল প্রস্তুত করা, এবং তা অনেক দেশ কর্তৃক অনুসরণসহ বাংলাদেশ দুর্যোগ মোকাবেলায় যথেষ্ট সুনাম অর্জন করলেও এখাতে এখনো যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধনের সুযোগ আছে এবং এখনই আত্মতুষ্টির সুযোগ নেই। কারণ ক্রমবর্ধমান প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বিদ্যমান সুশাসনের ঘাটতির কারণে এখনো বছরে জাতীয় আয়ের প্রায় দুই দশমিক দুই শতাংশ ক্ষতি হয়। এসব ঘাটতি নিরসন করা গেলে দেশের জাতীয় আয়ের বিশাল এই ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়: ঘূর্ণিঝড় আমফানসহ সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে ১২ দফা সুপারিশ প্রদান করে সংস্থাটি।

প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. নেওয়াজুল মওলা এবং জলবায়ু অর্থায়নে পলিসি ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার কাজী আবু সালেহ। গবেষক দলের অপর সদস্যরা হলেন জলবায়ু অর্থায়নে পলিসি ইন্টিগ্রিটি প্রজেক্টের ম্যানেজার মো. মাহ্ফুজুল হক, জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন ইউনিটের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. রাজু আহমেদ মাসুম এবং সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মু. জাকির হোসেন খান।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় আমফানসহ সাম্প্রতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসনের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনা করার উদ্দেশ্যে ২০২০ সালের ১৮মে থেকে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে এই গবেষণার তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও প্রতিবেদন প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই গবেষণার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য হলো সাম্প্রতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সুশাসনের অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জসমূহ পর্যালোচনা করা এবং গবেষণায় প্রাপ্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সুপারিশ প্রদান করা। গুণগত পদ্ধতিতে পরিচালিত এই গবেষণায় প্রয়োজন অনুযায়ী সংখ্যাগত তথ্যও ব্যবহার করা হয়েছে। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য, আইন ও নীতি’র প্রতিপালন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, সক্ষমতা, অংশগ্রহণ, অনিয়ম-দুর্নীতি ও সমন্বয়- সুশাসনের এই ৭টি নির্দেশকের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, সেনডাই ফ্রেমওয়ার্ক ফর ডিজাস্টার রিস্ক রিডাকশন এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার, এবং দুর্যোগ বিষয়ক জাতীয় আইন, নীতি এবং আদেশাবলী প্রতিপালনে ঘাটতি রয়েছে। সুন্দরবনসহ পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় কয়লা ও এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুৎ স্থাপন, দুর্যোগে ক্ষয়-ক্ষতি’র সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ এবং ক্ষয়-ক্ষতির প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রকাশে ঘাটতি, আন্তর্জাতিক উৎস হতে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহে সক্ষমতার ঘাটতিসহ দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবসা ভিত্তিক ‘বীমা ও বন্ড’ ব্যবস্থার প্রতি নির্ভরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সতর্কবার্তা ঝুঁকিপূর্ণ জনসাধারণের বোধগম্য না করতে পারাসহ স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশে কাঠামোবদ্ধ নির্দেশিকার অনুপস্থিতি যেমন রয়েছে তেমনি দুর্যোগ প্রস্তুতি, সাড়াদান ও পরবর্তী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম সংক্রান্ত তথ্য উন্মুক্তকরনে (প্রকাশ ও প্রচার) ঘাটতিও রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন-২০১২, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০১৫, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণ নীতিমালা-২০১১, দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী ২০১৯ সহ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধানে উল্লেখিত সুনির্দিষ্ট নির্দেশাবলী প্রতিপালনে ব্যত্যয় হয়েছে।

গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, পূর্বে সংঘটিত দুর্যোগসহ সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড় আমফান মোকাবেলায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। স্বচ্ছতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো দুর্গম এলাকায় দুর্যোগের পূর্বাভাস সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ ও সতর্কতামূলক বার্তা প্রচারসহ আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে হট লাইনের নম্বর প্রচার করা হয় নি; স্থানীয়ভাবে ত্রাণ ও সুবিধাভোগীর তালিকা এবং মন্ত্রণালয়ের সুনির্দিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভাগ ও জেলা ভিত্তিক তদারকি প্রতিবেদন করার দায়িত্ব থাকলেও এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয় নি।

জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো চিহ্নিত করা, দুর্যোগের আগেই ঝুঁকিপূর্ণ অবকাঠামো মেরামত এবং প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে যেমন ঘাটতি ছিলো, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো দ্রুত মেরামত করা হয় নি। রাজনৈতিক বিবেচনায় তহবিল বরাদ্দের কারণে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত জেলাসমূহে কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিয়মিত মেরামতের ঘাটতির করণে বাঁধের মোট ৮৪টি পয়েন্ট ভাঙ্গাসহ ২৩৩ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যা মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে দুর্গত এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আমফান আঘাত হানার ৬ মাস পরেও সাতক্ষীরার আশাশুনিতে বাঁধ সংস্কার না করায় ঘর-বাড়ি পানির নিচে তলিয়ে প্রায় ২০ হাজার মানুষ গৃহহীন থেকেছে।

এছাড়া দুর্যোগ বিষয়ক মহড়ার আয়োজন, যথাযথভাবে ত্রাণের চাহিদা নিরূপণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী শনাক্ত ও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর উদ্যোগের ঘাটতি ছিলো। জমির দীর্ঘমেয়াদী ক্ষয়-ক্ষতি বিবেচনায় না নেয়ায় শুধুমাত্র উপকূলীয় জেলাগুলোতে ঘূর্র্ণিঝড় আমফান পরবর্তী প্রথম বছরান্তে কৃষিতে প্রাক্কলিত ক্ষতির পরিমাণ হবে প্রায় ২,০৩৫ কোটি টাকা এবং আগামী দুই থেকে তিন বছর প্রায় ৬১ হাজার ৬০২ হেক্টর জমি ব্যবহার অনুপযোগী থাকার ঝুঁকি রয়েছে।

গবেষণায় পূর্ববর্তী দুর্যোগসমূহের মত আমফানেও দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষমতা, অংশগ্রহণ ও সমন্বয়ে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সক্ষমতার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রচার পদ্ধতি আধুনিকায়নসহ সতর্কবার্তা সাধারণ জনগণের জন্য বোধগম্যভাবে প্রচার করতে না পারা, চাহিদা অনুযায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণ ও প্রস্তুতে ঘাটতি, স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণের চাহিাদসহ পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদে ঘটতি উল্লেখযোগ্য। দুর্যোগে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর গৃহস্থালী সম্পদের নিরাপত্তা, মূল্যবান সম্পদ নিরাপদ স্থানে স্থানান্তরের জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন এবং জরুরি চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা এবং স্যানিটেশন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংস্কার ও পুনঃনির্মাণে পদক্ষেপের ঘাটতিসমূহ এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

এছাড়া দুর্যোগ মোকাবেলায় নির্মিত আশ্রয়কেন্দ্রর স্থান নির্বাচনে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণ না করা, বাঁধ নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে স্থানীয় নাগরিক ও জনগণের অংশগ্রহণে নিশ্চিত না করা, দুর্যোগ সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারে সমন্বয়ের ঘাটতি, আশ্রয়কেন্দ্রের অভিন্ন নকশা প্রণয়নে ঘাটতি এবং আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগকালীন সুযোগ-সুবিধা এবং ব্যবহার উপযোগীতা নিশ্চিতে ঘাটতির বিষয়গুলো এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

এছাড়া স্থানীয় জনপ্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং আন্তপ্রাতিষ্ঠানিক সমন্বয়ের ঘাটতির ফলে দুর্গম এলাকায় যথাসময়ে ত্রাণ না পৌঁছানো, একই সুবিধাভোগীর একাধিকবার ত্রাণ পাওয়াসহ বিবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। যেমন, দুর্যোগ সহনশীল বাঁধ, রাস্তা, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে যেমন অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে তেমনি আশ্রয়কেন্দ্র/বাঁধ নির্মাণে রাজনৈতিক ক্ষমতার ব্যবহার ও ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
আশ্রয়কেন্দ্র ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং ত্রাণ বিতরণে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার উদাহরণও এই গবেষণায় উঠে এসেছে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন

আরও খবর