Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৮.৯৬°সে

তিনশ ছুঁইছুঁই ব্রয়লার মুরগি।

সময় সংবাদ রিপোর্টেঃ   দুই মাস হতে চলল, দেশের বাজারে ব্রয়লার মুরগির দামের ঊর্ধ্বগতি থামছেই না। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে গতকাল সোমবার ঢাকায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা বা তারও বেশি দামে বিক্রি হয়ে রেকর্ড গড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ ব্যবস্থায় জটিলতা তৈরি হওয়ায় দাম বাড়ছে এবং আরও বাড়বে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, করোনা পরবর্তী সময় থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত লোকসানে পড়ে যেসব খামারি ব্যবসা বন্ধ করেছেন, তারা আবার উৎপাদনে ফিরলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। সেজন্য কমপক্ষে ছয় মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিরা।

জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি দাম ছিল সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা, যা কোনো কোনো সময় ১৩০ টাকায়ও বিক্রি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পর থেকে উৎপাদন খরচের অজুহাতে বাচ্চা ও খাদ্যের দাম বাড়াতে থাকে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি। প্রতি পিস বাচ্চার দাম পর্যায়ক্রমে ৫৫ টাকায় অবস্থান করে। মার্চের শুরুতে ৬৫ টাকায় পৌঁছায়। বর্তমানে ৭০ বা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রতি ৫০ কেজির এক বস্তা পোলট্রি খাদ্য ৩ হাজার ৭০০ টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ওষুধ ও আনুষঙ্গিক সামগ্রীর খরচ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন থেকে বিরত থাকেন সাধারণ খামারিরা। ফলে বাজারে সরবরাহ কমতে থাকে। আর এই সুযোগে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে থাকা খামার ও চুক্তিভিত্তিক খামারে উৎপাদন বাড়াতে থাকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।

এ সময়ে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে ব্রয়লার মুরগির দাম। যদিও বাজার নিয়ন্ত্রণে সব পক্ষর এক সভায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলেছে, করপোরেট পর্যায়ে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, যা খামারি পর্যায়ে ১৬৭ টাকা; কিন্তু সেই মুরগি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১৪ টাকয়, যা খুচরা পর্যায়ে তখন বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা পর্যন্ত। আর এই দাম কোনোভাবে যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন উপস্থিত সবাই। যেজন্য প্রয়োজনে আমদানি করে ডিম ও মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণ করার ঘোষণা দিয়েছিল ভোক্তা অধিদপ্তর। একই সভায় সরকারের উচ্চপর্যায়ে অভিযোগের সিদ্ধান্তের পাশপাশি ভোক্তার স্বার্থে অনেক সিদ্ধান্ত থাকলেও তার কোনোটি বাজারে প্রভাব ফেলেনি। বরং দাম আরও বেড়ে এখন ২৮০ থেকে ২৯০ টাকায় পৌঁছেছে।

বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার কালবেলাকে বলেন, যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে দাম আরও বাড়বে। লাভ ভালো হওয়ায় খামারিরা বাচ্চা চাইলেও পাচ্ছে না। আবার যেখানে পাচ্ছে সেখানে কাগজে-কলমে ৬৫ টাকা হলেও ৮০ টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না। করপোরেট কোম্পানির সঙ্গে যারা চুক্তিতে যাচ্ছে তাদের বাচ্চা দেওয়া হচ্ছে। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক খামারি তাদের থেকে বাচ্চা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, বাজার ভালো থাকলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাচ্চার উৎপাদন ও খাত সংশ্লিষ্ট সামগ্রীর নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে। যেজন্য প্রান্তিক খামারিরা ইচ্ছা থাকলেও উৎপাদনে থাকতে পারেন না। আর এ সুযোগে খামারিদের সঙ্গে চুক্তি করে বহুজাতিক কোম্পানি। পর্যায়ক্রমে দেশের পোলট্রি খাত তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে। প্রান্তিক খামারি বলতে দেশে কোনো কিছু থাকবে না।

পরিস্থিতির বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক কালবেলাকে বলেন, করোনা থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক খামারি খাত থেকে বেরিয়ে গেছে। খামারিরা ধারণা করতে পারেনি—হঠাৎ বাজার এই পর্যায়ে আসবে। যেজন্য এখন চাইলেই উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না। বাজারে একটি সংকট তৈরি হয়েছে। মূলত সামনে রমজান। এর আগে পিকনিক মৌসুম, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বিয়ের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান একসঙ্গে চলতে থাকায় বাজারে ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। একই সময়ে প্রান্তিক খামারে উৎপাদন বন্ধ থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থায় সমস্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে উৎপাদনে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো লাভবান হচ্ছে।

বাজারে বাচ্চার সংকটের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা তো সাধারণত চাহিদা ও জোগানের ওপর নির্ভর করে। দীর্ঘমেয়াদি লোকসানের কারণে প্রান্তিক খামারিরা এখন ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। আবার চাহিদা না থাকায় সে পরিমাণ বাচ্চাও উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে বাজারে সরবরাহ কম হচ্ছে। সামনে রমজান ও ঈদ। এ উপলক্ষে অনেক খামারি বাচ্চা তুলছেন। আশা করছি, আগামী এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার ১২তম আন্তর্জাতিক ‘পোলট্রি শো’ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষিমন্ত্রী ড. মো আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, পোলট্রি দাম সহসাই কমবে না। মুরগির দাম কমার জন্য আরও হয়তো ছয়-সাত মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে এই যে এত দাম, জানি না কীভাবে এটির সমাধান হবে। এই বাজার কেন অস্থির তা বিশ্লেষণ করে খুঁজে বের করতে হবে। কৃষির সব কিছুই পারস্পরিক নির্ভরশীল। মুরগি-ডেইরি করতে ফসল লাগে। মুরগির খাবার ভুট্টা, সয়াবিন থেকে তৈরি হয়। এসবের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে অস্বাভাবিক। দীর্ঘদিন খামারিরা লস করেছে, অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে, নতুন বাচ্চা তোলেনি, যার কারণে উৎপাদন ও সরবরাহ অনেক কমেছে। এ কারণে বাজার অনেক চড়া, মানুষ কিনতে পারছে না। উৎপাদনটা বাড়লে হয়তো পরিস্থিতির কিছু পরিবর্তন হবে, এর জন্য সময় দরকার।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন

আরও খবর