Header Border

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৪২.৯৩°সে

বিশ্বব্যাপী মহামারির দ্বিতীয় ধাক্কায় মুখ থুবড়ে দেশের পোশাক খাত

সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট ঃ গত বছরের শেষে বড়দিন ঘিরে আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদা বাড়লে বাংলাদেশের রপ্তানিতেও গতি আসবে বলে উদ্যোক্তারা আশা করছিলেন, কিন্তু সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ রপ্তানিকারকদের আশায় গুড়ে বালি।  অগাস্ট ও সেপ্টেম্বর 2020 মাসে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির ভালো খবর এসেছিল পোশাক খাত থেকে কিন্তু অক্টোবর মাসে এসে সেই ধারায় ছেদ পড়ে যা এখনো অব্যহত আছে। বিশ্ববাজারে কমছে অর্ডারের পরিমাণ। একইসঙ্গে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় দিশেহারা পোশাক শিল্প মালিক ও এ খাতের ব্যবসায়ীরা।
পোশাক শিল্প  মালিকরা বলছেন, পণ্যমূল্য কমে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ যাচ্ছে বেড়ে। রপ্তানির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের জন্য নতুন কার্যাদেশ এসেছে আগের বছরের তুলনায় কম। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতে পড়েছে। মহামারির প্রথম ঢেউয়ের ধাক্কা সামলে উঠে দাড়াঁতে শুরু করলেও দ্বিতীয় ঢেউ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতকে রক্ষায় বিদেশি ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। একইসাথে সঙ্কটকালে নতুন বাজার খুঁজতেও দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন।
মার্কিন সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, করোনার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে। গত বছর দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি কমেছে ১০ শতাংশেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বৃহত্তম উৎস দেশ চীন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ। জানা গেছে, করোনা শুরু হওয়ার আগে থেকেই মার্কিন পোশাকের বাজার উত্থান-পতনের মধ্যে ছিল। এর মধ্যে করোনার আঘাত দেশটির তৈরি পোশাক আমদানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। এর ধারাবাহিকতায় দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির দিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে ভিয়েতনাম সব সময়ই এগিয়ে ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির প্রভাবে প্রতিযোগিতায় দুই দেশের মধ্যে ব্যবধান আরো বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  আরো জানিয়েছেন, আমাদের পোশাকের প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে যদি রপ্তানির ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলেই দেশের রপ্তানি খাতের পুনরুদ্ধার হবে, নইলে হবে না। কারণ যে দেশ বা অঞ্চলেরই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভোক্তা বা গ্রাহকের ক্রয়ের অভ্যাস ও ক্ষমতা একটি বড় নিয়ামক। তাই ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা থাকলে সেটার ব্যবহার করতে হবে।
মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ সালে বিশ্ববাজার থেকে ৮ হাজার ৩৭০ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পোশাক আমদানি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে ২৩.৪৬ শতাংশ কমে গত বছর এ আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৪০৭ কোটি ডলারে। এ সময় শীর্ষ ১০ উৎস দেশের মধ্যে ৯টি থেকেই আমদানি কমিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাড়িয়েছে শুধু কম্বোডিয়া থেকে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে ভিয়েতনাম থেকে তৈরি পোশাক রপ্তানি ৭.২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৫৭ কোটি ডলারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে এ রপ্তানির পরিমাণ নেমে এসেছে ভিয়েতনামের অর্ধেকেরও নিচে। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের ১১.৭৩ শতাংশ কমে নেমে এসেছে প্রায় ৫২৩ কোটি ডলারে। এ সময় শীর্ষ ১০ উৎস দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পোশাক আমদানি সবচেয়ে বেশি কমিয়েছে চীন থেকে। গত বছর চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ৩৯ শতাংশের বেশি।
পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, পোশাক খাতের বৈচিত্র্য আনা একটি মৌলিক প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা আমাদের সেটাই শিখিয়ে দিচ্ছে। এটাই এখন বাস্তবতা। অপ্রচলিত বাজারে আমাদের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে এ মহামারির ক্ষতি থেকে ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারই প্রবৃদ্ধি ও পুনরুদ্ধারের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, গত বছর দেশে সংক্রমণ শনাক্তের প্রথম মাস মার্চ থেকেই পোশাক রফতানি ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হতে থাকে। এপ্রিলের শুরুতে প্রায় ৩০০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ স্থগিত হয়। জুনের শুরুতে পোশাক কারখানাগুলো সীমিত আকারে তাদের কার্যক্রম চালু করলে স্বস্তি আসে এ খাতে। তবে বৈশ্বিক করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আবার বাতিল হতে থাকে অর্ডার। পোশাকশিল্প মালিকরা জানান, দ্বিতীয় ধাক্কায় আমরা অনেক বেশি ইফেক্টেড হয়েছি। আমাদের অর্ডার কমে গেছে। করোনার প্রথম ধাক্কায় কিছু অর্ডার হোল্ড হয়েছিল, কিন্তু পরে ক্রেতারা সেগুলো পুনরায় দেয়। কিন্তু সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর পরিস্থিতি খারাপ হয়ে গেছে। গার্মেন্টস এমন একটা ব্যাপার, ফ্লোরে যদি কমপক্ষে ৯০ শতাংশ অর্ডার না থাকে, তাহলে লোকসানে চলতে হয়। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো সেপ্টেম্বরের শেষ থেকেই লসে চলছে।
রফতানি আয়েও প্রভাব পড়েছে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সব মিলিয়ে রফতানি কমেছে ৫৭৩ কোটি ডলার বা প্রায় ৪৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পোশাক রফতানি কমে গেছে ৫৬০ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারের, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৪৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। ইপিবি সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এক হাজার ৫৫৪ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৯৯ শতাংশ কম। আর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ১২ শতাংশ কম। চলতি বছরের প্রথমার্ধে তৈরি পোশাক রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৬২১ কোটি ডলার।
সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য জানায় মহামারিকালে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি পোশাক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।। এ বিষয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ময় সংবাদ লাইভকে  জানান, গত বছরের মার্চে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে তারা শ্রমিকদের বেকারত্বসহ পোশাক খাতের সার্বিক অবস্থা জানতে জরিপ শুরু করেন। দেশের প্রায় সাত শতাধিক কারখানার ওপর সাত মাস ধরে জরিপ শেষ হয় অক্টোবরে। এই সাত মাসে ৭ শতাংশ বা ২৩২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে। এছাড়া লে অফ ঘোষিত হয়েছে ২ দশমিক ২ কারখানায়। ৩০ শতাংশ বন্ধ হওয়া কারখানা শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে পারেনি।
গত বছর পোশাক খাতের শ্রমিক-কর্মকর্তাদের ছয় মাসের বেতন ভাতা দিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার ঋণ দেয় সরকার। দুই বছরের কিস্তিতে সেই ঋণ পরিশোধে গার্মেন্টস মালিকদের সুযোগ দেয় সরকার। তবে গত বছরের নভেম্বরে ঋণ পরিশোধে আরও এক বছর সময় চেয়ে খোলা চিঠি দেন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। চিঠিতে তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্তত ছয় মাসের জন্য স্থগিত অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্তত আরও এক বছর বাড়ানোর দাবি জানান। এর আগে গত বছরের আগস্টে ফের প্রণোদনা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় বিজিএমইএ। চিঠি প্রাপ্তির কথা নিশ্চিত করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের মত।
অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ঋণ সহায়তা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাহস করে কারখানা চালু করাসহ আরও কিছু কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল। এখন যেহেতু নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, আগের পদক্ষেপগুলো মূল্যায়ন করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া উচিত।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান জানান, মহামারীর সঙ্কট মকাবেলায় সরকার যে প্রণোদনামূলক ঋণ দিয়েছে, তার প্রায় অর্ধেকটাই নিয়েছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। সঙ্কটে ওই ঋণ বেশ ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এখন এর প্রকৃত প্রভাব কতটা হয়েছে তা নিশ্চিত হতে একটি বিশদ পর্যালোচনা প্রয়োজন। কোনো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দিয়ে এই মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হবে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, পণ্যমূল্য কমে যাচ্ছে, উৎপাদন খরচ যাচ্ছে বেড়ে। রপ্তানির পরিমাণও কমে যাচ্ছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসের জন্য নতুন কার্যাদেশ এসেছে আগের বছরের তুলনায় কম। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের যে দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে, তার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক খাতে পড়তে শুরু করেছে বলে মনে করছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, শিল্প আজ সবচেয়ে মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। যথাযথ পুনর্গঠনের সুযোগ এমনকি প্রস্থান নীতি না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেওলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিল এবং ফোর্স মেজার্স ক্লোজেজ-এর কারণে শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো টালমাটাল পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক হতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ২০২১ সালের জানুয়ারির ৩য় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশনা এমন সময়ে দেয়া হলো, যখন কিনা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ-এর কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ৬ মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরো অতিরিক্ত ১ বছর (বর্তমানে ২৪ মাস) সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দূরুহ হবে। তিনি বলেন, পোশাক রপ্তানির এই সার্বিক পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে- এ শিল্পের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হচ্ছে। এর জন্য এখনই প্রস্তুতি নেয়া প্রয়োজন। কিন্তু এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আমাদের একার (উদ্যোক্তাদের) পক্ষে সম্ভব নয়।
তিনি তথ্য দেন, গত বছরের বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পোশাকের রপ্তানিমূল্য আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর কেবল সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিমূল্য কমেছে আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। বর্তমানে পণ্যমূল্যে কমে যাওয়াটাই রপ্তানিকারকদের বেশি বিপদে ফেলছে। তিনি বলেন, এখন আবার পশ্চিমা দেশগুলোতে মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। ফলে রপ্তানির ভলিউম আবার কমে যেতে পারে। ক্রেতাদের সাথে আলোচনা করে আমরা পোশাক শ্রমিকদের জন্য একটি তহবিল গঠনের বিষয়ে জার্মানী ও ইউরোপিয় ইউনিয়নকেও আহ্বান জানাই। এর পরপরই জার্মানি বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য ২০ মিলিয়ন ইউরো বেকার তহবিল গঠনে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও জানান তিনি। করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে থেকেই পোশাকের দরপতন শুরু হতে থাকে। যা করোনার পরে তীব্র আকার ধারণ করে। ২০১৪-২০১৯ এই ৫ বছরে পোশাক রপ্তানি মুল্য হারিয়েছে গড়ে বছরে প্রায় ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে সারা পৃথিবীতে পোশাকের দরপতন হয় ৫ দমমিক ২৩ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এই দরপতন ছিল ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। দর পতনের এই ঋণাত্মক ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্ব বাজারে পোশাকের দরপতন হয়েছে অক্টোবর মাসে ৪ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং নভেম্বরের ১ থেকে ২০ তারিখ পর‌্যন্ত হয়েছে ৪ দশমিক ৯২ শতাংশ।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ কারখানা সঙ্কটে রয়েছে, যেখানে শ্রীলঙ্কায় এই হার ৩১ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সঙ্কট দীর্ঘায়িত হয়ে আগামী বছর পর্যন্তও স্থায়ী হতে পারে। পোশাক খাতের সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার, মালিক, শ্রমিক ক্রেতাদের সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার সুপারিশ করেন মোয়াজ্জেম।
বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক বলেন, প্রথম সঙ্কট থেকে আমরা কিছুটা উত্তরণ করতে পারলেও এখন দ্বিতীয় সঙ্কটে পড়েছি। এই সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য আমাদের আঞ্চলিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে।

এদিকে করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্য পোশাক খাতকে রক্ষায় বিদেশি ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এই সঙ্কটকালে নতুন বাজার খুঁজতেও দেশের পোশাক শিল্প মালিকদের পরামর্শ দিয়েছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সঙ্কট সামাল দিলেও এখন মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এই ঢেউয়ে সঙ্কট আরও গভীরে পৌঁছেছে। এর ফলে ক্রেতারা এখন অর্ডারের পরিমাণ ও মূল্য কমিয়ে দিয়েছে। এতে সঙ্কট আরও বাড়ছে।
ক্রেতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্রেতারা যদি পোশাকের অর্ডার ঠিক রাখার পাশাপাশি মূল্যও কিছুটা বাড়িয়ে দেন, তাহলে এখাতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে। দেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের উদ্দেশে টিপু মুনশি বলেন, আমাদের নতুন নতুন বাজারে ঢুকতে হবে। যদি আমরা ঠিকমতো নতুন বাজারে ঢুকতে পারি, তাহলে হয়ত সঙ্কট কিছুটা কমতে পারে। তৈরি পোশাক খাতে সরকারের দেওয়া ঋণ সহযোগিতার সময় আরও বাড়ানো দরকার বলেও স্বীকার করেন তিনি।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন

আরও খবর