Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৯.৯৬°সে

শিথিল হচ্ছে সড়ক আইন

সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ শেষ পর্যন্ত জয়টা হলো পরিবহন নেতাদেরই। তাদের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে শিথিল করা হচ্ছে বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন। নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে পাস হয় আট বছর ধরে ঝুলে থাকা আইনটি। কার্যকর করা হয় ২০১৯ সালের ১ নভেম্বর। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা অবশ্য তখনই আইনটিকে কঠোর ও তাদের স্বার্থবিরোধী আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নামেন। আইন শিথিলের দাবিতে সারাদেশেই বন্ধ করে দেন যান চলাচল। ওই সময় ব্যাপক জনদুর্ভোগের মুখে নয়টি ধারার প্রয়োগ স্থগিত রাখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বাধীন সরকারের কমিটি। এর মধ্যে তলে তলে জল গড়িয়েছে বহুদূর।

আইনের বিভিন্ন ধারা সংশোধান করে জেল-জরিমানা কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সর্বাত্মক লকডাউন শুরুর একদিন আগে গত ১৩ এপ্রিল সংশোধিত আইনের খসড়াটি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এক মাস সময় দিয়ে আগামী ১৩ মে পর্যন্ত খসড়ার ওপর অংশীজন ও জনসাধারণকে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। এর পর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পেশ করা হবে।

অনুমোদন পেলে উত্থাপন করা হবে সংসদে। সেখানে পাস হলেই কার্যকর হবে সংশোধনী আইনটি। এদিকে মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ৩৪টি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়ে সরকারকে কয়েক দফা চিঠি দিয়েছিল। তাদের সঙ্গে বছর দুয়েক আলোচনার পর সংশোধনের যে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের দাবিরই প্রতিফলন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, আইনের ১২৬টি ধারার ২৯টিতেই পরিবর্তনের প্রস্তাব এনেছে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়। ভারী ও মাঝারি মোটরযানের সংজ্ঞাসহ আটটি বিষয়ের সংজ্ঞাও পরিবর্তনের প্রস্তাব করা হয়েছে সংধোনীর খসড়ায়। তবে সবচেয়ে স্পর্শকাতর পরিবর্তনের প্রস্তাবটি হলোÑ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জরিমানা পাঁচ থেকে কমিয়ে তিন লাখ করা। এ অপরাধের মামলা জামিন অযোগ্য থাকলেও, পরিবহন নেতাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জামিনযোগ্য করা হচ্ছে। আর সেটি কার্যক্রর হলে, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করা এবং গাড়ির আকার আকৃতি পরিবর্তনের মামলায় আসামির জামিন পেতে বাধা থাকবে না।

আইন সংশোধনের এ উদ্যোগকে পরিবহন নেতাদেরই দাবি পূরণ বলছেন নিরাপদ সড়ক চাই-এর (নিসচা) চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। কঠোর সড়ক আইনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এ চিত্রনায়ক সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, ‘পরিবহন নেতাদের চাপে আইনটি পরিবর্তন করা হলে সড়ক আরও অনিরাপদ হবে। সবার সম্মিলিত চেষ্টার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একটি গণজাগরণ তৈরি হয়েছিল আইনটির পক্ষে। সে কারণেই আইনটি হয়েছিল।’

সড়ক পরিবহনে সবচেয়ে আলোচিত ধারা ১০৫-তে জরিমানা কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে দ-বিধি ৩০৪(খ) ধারায় চালকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ধারায় সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছর কারাদ-। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তা বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছিল। সঙ্গে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান। আইনের সংশোধনীতে জরিমানা কমিয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব আনা হয়েছে। এতে বলা হয়েছেÑ আদালত অর্থদ-ের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবেন।

আইনের ৪০ ধারা লঙ্ঘন অর্থাৎ গাড়ির আকার আকৃতি পরিবর্তনের অপরাধে ৯৮ ধারা অনুয়ায়ী সর্বোচ্চ তিন বছর জেল এবং সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ধারায় পরিবর্তন না হলেও, অপরাধটিকে জামিনযোগ্য করার প্রস্তাব করা হরেছে। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালিয়ে কাউকে আহত করার অপরাধে ৯৮ ধারায় হওয়া মামলাও জামিনঅযোগ্য। খসড়ায় এ দুটি ধারাকে জামিনযোগ্য করার সুপারিশ এসেছে। এ ধারায় সংঘঠিত অপরাধকে আপসযোগ্য করারও প্রস্তাব হয়েছে খসড়ায়। তবে প্রাণহানির ক্ষেত্রে আগের মতো ১০৫ ধারা জামিন অযোগ্যই থাকছে।

পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা কমানোর দাবি করেছিলেন। আইনের ৫ নম্বর ধারায় আছে, পেশাদার চালক হতে অষ্টম শ্রেণি পাস করতে হবে। সংশোধনের খসড়ায় বলা হয়েছেÑ তিন চাকার যানবাহনের পেশাদার চালক পঞ্চম শ্রেণি পাস করলেই লাইসেন্স পাবেন। আর ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে পরীক্ষা দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে পারবেন বাস-ট্রাকের কন্ডাক্টর বা সুপারভাইজার। তাদের জন্য কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত-ই রাখা হয়নি। আইনের ১৪ ও ১৫ ধারা সংশোধন করে কন্ডাক্টরের সঙ্গে সুপারভাইজার পদটি যুক্ত করা হয়েছে। এ পদে কাউকে নিয়োগ দিলে নিয়োগপত্র দিতে হবে মালিককে।

ফিটনেসবিহীন গাড়িকে সনদ দিলে বিদ্যমান আইনের ২৫(২) ধারায়, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। আইন সংশোধন করে এবার দায়মুক্তি দেওয়া হচ্ছে কর্মকর্তাদের। খসড়ায় বলা হয়েছেÑ কোনো অবস্থাতেই ত্রুটিপূর্ণ কোনো যানবাহনকে ফিটনেস সনদ প্রদান করা যাবে না। সনদ দিলে কর্মকর্তার কী শাস্তি হবে, তা অবশ্য বলা নেই।

লাইসেন্স ছাড়া কেউ গাড়ি চালালে বিদ্যমান আইনের ৬৬ ধারায় ছয় মাসের জেল বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা বিধান রয়েছে। এ ধারাটি সংশোধন করে জরিমানা কমিয়ে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনের খসড়ায়। ধারা ৬৯ অনুযায়ী ভুয়া লাইসেন্স বানালে সর্বোচ্চ দুবছর জেল এবং অনধিক পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান। সংশোধনের খসড়ায় ভুয়া বা জাল লাইসেন্সের জন্য অনধিক এক বছরের জেল বা ২৫ হাজার টাকার জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে। বাতিল হওয়া লাইসেন্সে গাড়ি চালানোর জরিমানা ২৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে করা হচ্ছে ১০ হাজার।

যাত্রীবাহী পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা নিলে বিদ্যমান আইনের ৮০ ধারা অনুযায়ী এক মাস কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তবে সেই জরিমানা কমিয়ে পাঁচ হাজার টাকা করার প্রস্তাব এসেছে। অতিরিক্ত ভাড়া নিলে বিদ্যমান আইনে চালকের লাইসেন্স থেকে এক পয়েন্ট কর্তনের বিধান। খসড়ায় তা বাদ দেওয়া হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশা বা ভাড়ায় চালিত গাড়ির মিটারে কারসাজির শাস্তি ছিল ছয় মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। খসড়া প্রস্তাবে জরিমানা কমিয়ে ২৫ হাজার নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

আইনের ৮৫ ধারা অনুযায়ী, ট্রাফিক সিগন্যাল (সংকেত) জরিমানা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। তা কমিয়ে এক হাজার টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে লাইসেন্স থেকে পয়েন্ট কাটার বিধান থাকছে। শব্দ ও বায়ু দূষণকারী গাড়িকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান সংশোধন করে পাঁচ হাজার টাকা প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অবৈধ পার্কিং, পার্কিং দখল করে যাত্রী ও পণ্য উঠানো নামানোর জরিমানা পাঁচ হাজার থেকে কমিয়ে এক হাজার করার প্রস্তাব এসেছে। এ অপরাধে চালকের লাইসেন্স থেকে দোষ সূচক এক পয়েন্ট কর্তনের শাস্তি বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে।

ধারা ৮৬ অনুযায়ী, সড়কের জন্য ক্ষতিকর ওভারলোডিংয়ের (ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত পণ্যবহন) সর্বোচ্চ এক বছর জেল এবং এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান। আইনের সংশোধনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছেÑ গাড়ির মালিক, পণ্যবহনকারী প্রতিষ্ঠান বা ঠিকাদার ওভারলোডিং করলে সর্বোচ্চ এক বছর জেল বা এক লাখ টাকা জরিমানা হবে। তবে চালক এ অপরাধ করলে সর্বোচ্চ তিন মাস জেল অথবা জরিমানা হবে ২৫ হাজার টাকা।

আইনের ৮৮ ধারা অনুযায়ী, গাড়িতে নির্ধারিত মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টি করে এমন হর্ন বা যন্ত্রাংশ সংযোজনের শাস্তি তিন মাসের জেল বা সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা জরিমানা। সংশোধনীর খসড়ায় তা কমিয়ে এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে। ৮৯ ধারা অনুযায়ী, পরিবেশ দূষণকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ গাড়ি চালানোর শাস্তি তিন মাসের জেল বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা। সংশোধনীর খসড়ায় তা কমিয়ে এক মাসের জেল বা ১০ হাজার টাকা জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পণ্যবাহী বা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে জীবন ও সম্পদের ক্ষতির শাস্তি আইনের ৯৮ ধারা অনুযায়ী তিন বছর জেল বা তিন লাখা জরিমানা। আইনের সংশোধনীতে একই শাস্তি সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ধারাটি আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে। দ্রুতগতি গাড়ি চালিয়ে ওভারটেকিংয়ের কারণে দুর্ঘটনা ঘটালেও একই শাস্তি হবে। চালক ও তার সহকারীর সঙ্গে সহায়তাকারীকেও আইনের আওতায় আনা হবে। অন্যান্য শাস্তি কমলেও দুর্ঘটনার পর গাড়ি ভাঙচুরের সাজা বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে সংশোধনীতে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা দ্বিগুণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

সময় সংবাদ লাইভ।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা হবে ৫ ঘণ্টার
থাইল্যান্ড গেলেন প্রধানমন্ত্রী
তাপদাহে হিট অ্যালার্টের মেয়াদ আরও বাড়াল আবহাওয়া অফিস
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন

আরও খবর