Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৭.৯৬°সে

সারা দেশেই চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ  সারা দেশেই চলছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। পাল্লা দিয়ে নামছে ঢাকার তাপমাত্রাও। রোববার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সর্বনিম্ন ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। শনিবার রাজারহাটে ছিল ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ওয়েদার ফোরকাস্ট জানিয়েছে আজ সোমবার মাঝরাতে ঢাকার তাপমাত্রা নেমে আসতে পারে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সন্ধ্যা ৬টা থেকেই দ্রুত নামতে শুরু করবে তাপমাত্রা।
রাজধানীর পোস্তগোলা, শ্যামপুর, সূত্রাপুর, গেণ্ডারিয়া, সদরঘাট, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ ও গুলিস্তানসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুরনো হালকা কাপড় মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে থাকতে দেখা গেছে অনেককেই।পাশেই আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে। কেউ আবার বিছানা ছাড়াই শুয়ে আছে সড়কের পাশে, কেউ ফুটপাতে, কেউ গাছের তলায়, ব্রিজের নিচে হাত-পা মুড়ি দিয়েও শীতে কাপছে।
এদিকে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলসহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। সূর্যের দেখা তেমন মিলছে না। শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে বইছে হিমেল হাওয়া। এতে বেড়েছে ঠান্ডার তীব্রতা। এমন পরিস্থিতিতে দৈনিক কাজ না পেয়ে কষ্টে আছে শ্রমজীবী মানুষ। এছাড়া শীতজনিত রোগে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা। হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা। অনেকটাই বিপর্যস্ত জনজীবন। মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের এই শৈত্যপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে ছিন্নমূল ও দিনমজুররা আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলমান শৈত্যপ্রবাহ আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে স্বাভাবিক শীত থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। তবে আগামী জানুয়ারিতে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জানান, ‘শুক্রবার থেকে দেশে একটি মৃদু থেকে মাঝারি আকারের শৈত্যপ্রবাহ চলছে। পাশাপাশি বাতাসও প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই থেকে তিন দিন এই শৈত্যপ্রবাহ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর ধীরে ধীরে শৈত্যপ্রবাহ কমে স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকবে। আগামী দুই থেকে তিন দিন দিনের বেলা সূর্য থাকবে। তবে রাতের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমতে পারে। কিছুটা বাতাস প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, ‘ডিসেম্বরে শৈত্যপ্রবাহ শেষ হওয়ার পর জানুয়ারিতে আরও দুটি শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হলেও আরেকটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় সারাদেশের তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।’
এদিকে চলমান শৈত্যপ্রবাহে রবিবার রাজধানীসহ সারাদেশের তাপমাত্রা বেশ শীতল রয়েছে। ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রংপুর বিভাগের রাজারহাট ও তেঁতুলিয়ায় ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগসহ টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, যশোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ভোলা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। এই ২৪ ঘণ্টার পরের দুদিন আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। তার পরের পাঁচ দিনের প্রথমার্ধে তাপমাত্রা বাড়তে পারে। আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান খান বলেন, ২৪, ২৫ বা ২৬ ডিসেম্বরের দিকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে। কয়েক দিনে যেমন ধাপে ধাপে কমেছে, ওইরকম এক-দুই ডিগ্রি করে হয়তো বাড়বে।
ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষের জীবন যাত্রা। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ আর হতাশা। সন্ধা নামার সাথে সাথেই নিম্নগামী হয়ে পড়ছে তাপমাত্রা। ফাঁকা হয়ে পড়ছে বাজার ও রাস্তা-ঘাট।
স্থানীয় আবহাওয়া অফিস জানায়, গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে ওঠানামা করলেও রোববার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। জেলার কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষন কেন্দ্র পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, এ অবস্থা আরো কয়েকদিন পর্যন্ত চলতে পারে।
গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। তীব্র শীত কষ্টে ভুগছেন হতদরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন অনেকেই।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক  সময় সংবাদ লাইভকে জানিয়েছেন, শীতের কারনে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ডায়রিয়া। তবে শীত জনিত রোগের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন বলে জানান তিনি।
দিনের বেলা সুর্যের দেখা মেলায় তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও সন্ধার পর থেকে রাত যতই গভীর হয় তাপমাত্রা ততই নিম্নগামী হয়ে পড়ে। শীতের পরিমান কিছুটা কম থাকলেও রাতে কনকনে ঠান্ডায় ঘর থেকে বের হওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে জেলার সাড়ে ৪ শতাধিক চরাঞ্চলের দিনমজুর পরিবারের মানুষজন। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্টে ভুগছেন তারা।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের বালাডোবার চরের আমির হোসেন জানান, এতো বেশি ঠান্ডা পড়েছে যে কাজে যেতে পারছি না। গরম কাপড়ও নাই। বউ বাচ্চা নিয়ে খুবই কষ্টে রাত পার করছি।
উলিপুর উপজেলার তবকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, ঠান্ডা বেড়ে যাওয়ায় এবং প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে আমার ইউনিয়নের হতদরিদ্র পরিবারের মানুষ খুবই কষ্টে দিন কাঠাচ্ছে। আমি বিত্তবানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যেন তারা এসব অসহায় মানুষের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। সরকারী ও বেসরকারীভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, সরকারিভাবে জেলার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলার ৯ উপজেলায় গরম কাপড় কিনে বিতরণের জন্য ৬ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে পঞ্চগড়ের মানুষ। উত্তর দিক থেকে আসা কনকনে শীতল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে এখানকার শীতার্ত মানুষ। গতকাল শনিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। গত শুক্রবার এখানে এই মৌসুমের দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল তেঁতুলিয়ায়। শুক্রবার বিকেল থেকেই শুরু হয় উত্তর দিকে থেকে আসা হিমালয়ের হিম শীতল বাতাস। সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কনকনে শীতল হাওয়ায় কাঁপতে থাকে পঞ্চগড়ের মানুষ। রাত ৮টায় মধ্যে ফাঁকা হয়ে যায় বাজার-ঘাট। হালকা কুয়াশা কেটে গিয়ে গতকাল শনিবার সকালেই দেখা মেলে সূর্যের। এরপর থেকে সারাদিনই ছিল রোদ। তবে বিকেল থেকে আবার শুরু হয় উত্তরের শীতল বাতাস। তবে রোদের উত্তাপ থাকায় খুব বেশি একটা শীত অনুভূত হয়নি।
টানা পাঁচদিন ধরে কনকনে ঠান্ডার কবলে পড়েছে উত্তরের এই জনপথ। কনকনে শীতের কারণে সব থেকে কষ্টে রয়েছে দিনমজুর, ভ্যানচালক, ইজিবাইক চালক, পাথর শ্রমিক, চা শ্রমিকসহ ছিন্নমূল মানুষেরা। সকালের ঠান্ডায় কাজে যোগ দিতে দুর্ভোগে পড়ছেন এসব খেটে খাওয়া মানুষেরা। আবার দেরিতে কাজে যোগ দিলেও মালিকেরা অনেককে কাজে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। দিনভর নিরুত্তাপ সূর্যের আলোয় ঠান্ডা কোন অংশে কমছেই না। বিকেল হলেই উত্তরে হিমেল হাওয়ায় নেমে আসে কনকনে ঠান্ডার আবহ। আর সূর্যাস্তের পর থেকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় প্রয়োজন ছাড়া খুব কম মানুষই বাইরে বের হচ্ছেন।
এদিকে জেলার শীতবস্ত্র বিতানগুলোতে শীতের কাপড় কিনতে ভিড় করছে শীতার্ত মানুষগুলো। তবে গত বছরের চাইতে এবার কাপড়ের দাম দ্বিগুন বলে বেশি অভিযোগ ক্রেতাদের। তবে বিক্রেতারা বলছেন অন্য কথা। তাদের দাবি করোনা ভাইরাসের কারণে এবার চীনসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে শীতের কাপড় কম এসেছে। পুরোনো কাপড়ের গাইড খুলে বিক্রি করছেন তারা।
জেলার হাসপাতাল গুলোতে বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। প্রতিদিনই জেলার হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে দেখা যাচ্ছে রোগীদের। তবে চিকিৎসা নিতে আসা রোগির অনেকেই আবার হাসপাতালগুলোর বহিঃবিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে চলে যাচ্ছেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান বলেন, ইতোমধ্যে পঞ্চগড় জেলার জন্য ২১ হাজার ২শ’ কম্বল, পাঁচ হাজার শুকনো খাবার ও কম্বল কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কম্বল ও শুকনো খাবার ইতোমধ্যে পাঁচ উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। নগদ টাকার কম্বল ক্রয়ের প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বাড়াল সরকার
উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
৯৬ হাজার শিক্ষক নিয়োগ আবেদন শুরু, যেভাবে করবেন আবেদন
মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

আরও খবর