Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৭.৯৬°সে

হঠাৎ কেনো সংলাপের ডাক, বিএনপির দাবি নিরপেক্ষ সরকার

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ  বিএনপির একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেছে, সংলাপে যাওয়া বা না যাওয়া নিয়ে বিএনপির ভেতরে নানারকম মতভেদ রয়েছে।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপে বিএনপির দাবি-দাওয়ার বিষয়ে কোনো সমাধান হবে না। কিন্তু তখন সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে, বরং বিএনপি রাজি হয়নি, এমনটা সরকার কূটনৈতিকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করতে পারে।

বাংলাদেশে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করার জন্য নির্বাচন কমিশন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে আবারো আমন্ত্রণ জানিয়েছে ।

প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির পক্ষ থেকে এই আমন্ত্রণকে ‘সরকারের নতুন কৌশল’ বলে বর্ণনা করেছে দলটি, কিন্তু এখনো সংলাপে যাওয়া বা না যাওয়ার বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি।

মঙ্গলবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা রয়েছে।

এই বছরের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া সেই নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে।

এর আগে কমিশন যে সংলাপের আয়োজন করেছিল, সেখানে অংশ নেয়নি দেশের অন্যতম প্রধান এই রাজনৈতিক দল এবং তাদের মিত্র দলগুলো।

সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য কূটনৈতিক মহল থেকে বারবার তাগিদ দেয়া হচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটেই বিএনপিকে সংলাপে বসার জন্য পুনরায় আমন্ত্রণ জানাল কমিশন।

এই আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছে এমন সময়ে, যখন বহু বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর বিএনপি এবং অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে উঠতে দেখা যাচ্ছে।

অতীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নানারকম বাধা তৈরি করা হত। কিন্তু এবার দেশে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করার জন্য তাদের ছাড় দেয়া হয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

নির্বাচন কমিশনের ডাক
গত বছরের জুন মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে যে সংলাপের আয়োজন করেছিল নির্বাচন কমিশন। তাতে অংশ নেয়নি বিএনপি এবং তাদের মিত্র দলগুলো। তাহলে আবার কেন তাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে?

নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা তো চিঠিতেই উল্লেখ করেছি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে আলাপ আলোচনার জন্য তাদের ডেকেছি।’

তিনি বলেন, ‘এটাই উদ্দেশ্য, অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। প্রত্যেককে ডেকে কথা শুনতে চাই, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য কাজ করতে চাই।’

রহমান বলেন, ‘বিএনপিকে আগেও ডাকা হয়েছিল, তারা আসেননি। ভবিষ্যতেও তাদের ডাকা হতে পারে। ‘আমাদের আহ্বান অব্যাহত থাকবে।’

কমিশন জানিয়েছেন, প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ এবং অন্য দলগুলোকে নিয়েও আবারো সংলাপের আয়োজনের কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

তবে তিনি এটিও বলছেন, ‘অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তো আমরা বসেও থাকতে পারবো না। আমাদের সময় দিনদিন কমে যাচ্ছে।’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে বিএনপি।

সংলাপের আড়ালে সরকার?
নির্বাচন কমিশন আমন্ত্রণ জানালেও, দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন এর পেছনে সরকারের ইঙ্গিত থাকতে পারে। তারা মনে করছেন, নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ‘ডেভেলপমেন্ট পার্টনার’ অর্থাৎ পশ্চিমা দেশগুলোর একটি উদ্যোগ থাকায়, সরকার চাপের মধ্যে আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. সাব্বীর আহমেদ বলেন,‘একটা প্রেশার সরকারের ওপরে কাজ করছে, সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। ফলে নির্বাচন কমিশনের এই আমন্ত্রণের পেছনে সরকারের একটা ইঙ্গিত থাকতে পারে।’

তিনি বলেন,‘আমার মনে হয় না যে, হঠাৎ শুধু নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগের কারণেই এটা হয়েছে।’

অধ্যাপক আহমদের মতে, নির্বাচন কমিশনই যেহেতু বারবার বলেছে নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটা একটা রাজনৈতিক প্রশ্ন, তাহলে বিএনপির সাথে কমিশনের কী আলোচনা হবে?

তিনি বলছেন, ‘আমার মনে হয়, এটার পেছনে সরকারের একটা পরোক্ষ ভূমিকা থাকতে পারে, যাতে নির্বাচন ইস্যুতে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সাথে একটা আলোচনা শুরু হয়।’

তিনি মনে করেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় কমিশনের পক্ষে কোনোরকম মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নেয়া সম্ভব নয়। তবে সরকারি এবং বিরোধী দলের যে মুখোমুখি অবস্থান তৈরি হয়েছে, সেখানে হয়তো আলোচনার একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হতে পারে।

সংলাপে নিয়ে বিএনপির অনীহা
নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণের ব্যাপারে সোমবার পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। মঙ্গলবার দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণের ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণের আগে পর্যন্ত আমরা তো সবসময়েই আমাদের অবস্থান খুব ক্লিয়ারভাবে জানিয়ে আসছি। আমরা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচনে যাবো না। সরকারের বাইরে গিয়ে তো নির্বাচন কমিশন কিছু করতে পারবে না।’

একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের সাথে সংলাপ বা আলোচনায় তো নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে পারে বিএনপি। তাহলে সংলাপ নিয়ে কেন তারা সন্দেহের চোখে দেখছেন?

এই প্রশ্নের জবাবে ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের দাবি একটাই, আর সেটা হল নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, কোনো দলের অধীনে নির্বাচনে তারা যাবেন না।’

ফখরুল বলেন,‘সেই সমাধান তো এই কমিশন দিতে পারবে না, তাহলে তাদের সাথে সংলাপ করে কী লাভ হবে?’

বিএনপিতে মতভেদ
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, সামনের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হবে। তাই কৌশলে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসার ব্যাপারে আলোচনা করতে চায় কমিশন। কিন্তু তাতে কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে দলটির মধ্যে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

উপজেলায় এমপি মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনরা প্রার্থী হলে ব্যবস্থা
সব বিরোধী দলের উপজেলা নির্বাচন বর্জন
ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করবে বিএনপি
বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বৃদ্ধি হবে ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’: রিজভী
নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছিল : আমীর খসরু
মির্জা ফখরুল-খসরুর ‘প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট’ প্রত্যাহার, আজই মুক্তি

আরও খবর