Header Border

ঢাকা, শুক্রবার, ১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ৩৮.৪৪°সে
শিরোনাম
খিলগাঁও ও মেরাদিয়ার বুধবারের হাট নিয়ে কিছু স্মৃতি-আলমগীর পারভেজ দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে চলছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ গভীর রাতে দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গারুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রকল্যাণ পরিষদ কর্তৃক বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্রদলের ২০তম বিসিএস ফোরামের নতুন কমিটি : আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন,সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ্ আরেফ আব্দুল্লাহ আরেফের অভিযানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ক্যাশিয়ার রুহুল আমিন আটক! অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি

অবৈধপথে ইউরোপ যাওয়ার শীর্ষে বাংলাদেশীরা

আলমগীর পারভেজ: অবৈধপথে ইউরোপ যাওয়ায় শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশীরা। এদেশে যুদ্ধ নেই, দারিদ্র্যের কষাঘাতও আফ্রিকার দেশগুলোর মতো তীব্র নয়, বরং অনেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার রোলমডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। তারপরও দলে দলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশীদের ইউরোপ যাওয়ার প্রচেষ্টা অবাক করেছে সবাইকে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর সূত্রে এইসব তথ্য জানা যায়। ইউরোপীয় সীমান্ত ও কোস্টগার্ড সংস্থা বা ফ্রন্টেক্সের তথ্যমতে, ২০০৯ সাল থেকে এপর্যন্ত অন্তত ৬০ হাজার বাংলাদেশী অবৈধভাবে ইউরোপ গিয়েছেন। এভাবে যারা ইউরোপ ঢুকছেন, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তারা সাধারণত ১৮টি রুট ধরে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টা করেন। তবে বাংলাদেশী অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রধান রুট হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগর।
এদিকে নভেল করোনাভাইরাস জনিত মহামারিতে গত বছর থেকেই গভীর সংকটে পড়েছে গোটা বিশ্ব। সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন মেয়াদে সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে প্রতিটি দেশই। তবে শত কড়াকড়িতেও থেমে নেই অবৈধ পথে ইউরোপে অভিবাসনের প্রচেষ্টা। সংক্রমণের ভয় উপেক্ষা করেই গত দেড় বছরে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন ৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশী। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় বাংলাদেশীদের অবস্থান বর্তমানে বিশ্বে চতুর্থ।
চলতি বছরের ২৬ জুলাই পর্যন্ত ইতালি, গ্রিস, স্পেন, সাইপ্রাস ও মাল্টায় পৌঁছেছে অন্তত ৪৭ হাজার ৪২৫ জন শরণার্থী ও অভিবাসনপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩৩২ জনই বাংলাদেশী। অর্থাৎ, কপালজোরে জীবিত অবস্থায় ইউরোপের তীরে পৌঁছানো প্রতি সাতজনের একজন বাংলাদেশের নাগরিক।
এধরনের অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই পাচারের শিকার হয়ে লিবিয়া, তিউনিসিয়া, বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় পৌঁছান। নিশ্চিতভাবে প্রাণ হারিয়েছেন অজ্ঞাত বহু লোক। ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার পথে অন্তত ৯৩৭ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যুর খবর রেকর্ড করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, যাদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশী।
আফ্রিকান উপকূল থেকে রওয়ানা দেয়া লোকদের মধ্যে বাংলাদেশীদের সংখ্যা এত বেশি কেন, তা জানার চেষ্টা করেছে ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষগুলো। তবে কারণটি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তালিকার শীর্ষে থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম কিছুটা বেমানানই বটে! শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে তিনটি হচ্ছে আফ্রিকার (তিউনিসিয়া, আইভরি কোস্ট ও মিসর), আরেকটি হলো যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া। ভৌগলিকভাবেও এসব দেশ থেকে সবচেয়ে দূরের অবস্থান বাংলাদেশের। ধারণা করা হয়, এসব বাংলাদেশীর একটি বড় অংশই পাচারকারীদের হাতে পড়ে সাগরপথে ইউরোপ রওয়ানা দেয়। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাচারকারী চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারের পর জানা গেছে, কতটা ভয়ংকর এই যাত্রা। অবৈধপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এভাবে ইউরোপ যেতে কখনো কখনো কয়েক বছর লেগে যায়। শুধু লিবিয়া উপকূল পর্যন্ত পৌঁছাতেই অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় ভুক্তভোগীদের। তাছাড়া, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে আর্থিক সংকট বেড়ে যাওয়াও মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রায় প্ররোচিত করছে বলে মনে করা হয়।
অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডিসপ্লেসমেন্ট ট্র্যাকিং ম্যাট্রিক্সের হিসাবে, ২০২০ সালে সাগর ও স্থলপথ দিয়ে ইতালি, মাল্টা, স্পেন বা গ্রিসে প্রবেশ করেছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার বাংলাদেশী। অবৈধ মানবপাচারের এ পথগুলো দিয়ে গমনেচ্ছুদের ঢাকা পার করার সময় একটি চক্রের অধীনে রাখা হয়। এরপর দুবাই বা ইস্তানবুল অথবা সুদানে তাদের হস্তান্তর করা হয় দ্বিতীয় চক্রের হাতে। সেখান থেকে উড়োজাহাজে করে লিবিয়া যাওয়ার পর তৃতীয় চক্রের হাতে যান বাংলাদেশীরা। সেখান থেকে নৌকায় উঠিয়ে দেয়ার পর চতুর্থ চক্র ও সর্বশেষ ইউরোপ নেমে পঞ্চম চক্রের হাতে পড়েন বাংলাদেশীরা। এ পথগুলো দিয়ে লিবিয়া পৌঁছতে জনপ্রতি ৫ থেকে ৯ লাখ টাকা করে খরচ করতে হয়। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সব স্থানে অর্থ পরিশোধ করা না হলে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মুক্তিপণ ও অপহরণের মতো ঘটনাও

চলতি মাসেই তিউনিসিয়ান রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছিল, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ প্রবেশের চেষ্টাকালে নৌকা ডুবে অন্তত ১৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়েছে। ৮ জুলাই তিউনিসিয়ান নৌবাহিনী মাঝসমুদ্র থেকে ৪৯ জন বাংলাদেশী অভিবাসনপ্রত্যাশীকে উদ্ধার করে। একই পথে গত ৩ জুলাই অন্তত ৪৩ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নৌকাডুবির পর নিখোঁজ হন, যাদের মধ্যে বাংলাদেশীরাও ছিলেন। গত ১৮ মে থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত সাত শতাধিক বাংলাদেশী অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নৌকাডুবির পর উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তিউনিসিয়ান নৌ কর্তৃপক্ষ। তারা ওই ৩ হাজার ৩৩২ বাংলাদেশীর অংশ, যারা চলতি বছরে ইউরোপ যাওয়ার পথে উদ্ধার বা আটক হয়েছেন।
জাতিসংঘ বলছে, করোনাকালে মহামারি ঠেকাতে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ ও অভিবাসন ব্যবস্থাপনা করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। বৈধভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে এখন বেশ কড়াকড়ি আরোপ করেছে ইউরোপের দেশগুলো। ইউএনএইচসিআরের তথ্য বলছে, লকডাউন আর প্রবেশে কড়াকড়ি থাকলেও ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধ প্রবেশের চেষ্টায় থাকা এসব মানুষের প্রধান গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অংশ যায় লিবিয়া থেকে। অন্যান্য দেশের তুলনায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার কাতারে প্রথম সারিতে আছেন বাংলাদেশীরাই। আর এ কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারানোর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউএনএইচসিআরের পরিচালন তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করেছে সংস্থাটি। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি তিউনিসিয়ার নাগরিক উদ্ধার করা হয়েছে। যার সংখ্যা ১৪ হাজার ৬৪৯। এর পরই রয়েছে আলজেরিয়ার ৯ হাজার ৪৬৬ জন ও মরক্কোর ৫ হাজার ৩৯৯ জন। সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশের অবস্থান ৪ নম্বরে। এছাড়া এ অঞ্চল থেকে ইউরোপে প্রবেশের চেষ্টায় শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, আইভরিকোস্ট ও মালি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীদের সিংহভাগেরই লক্ষ্য ইতালি। প্রথম ধাপে লিবিয়া যেতে বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ পর্যন্ত কয়েকটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করে। ইউরোপে প্রবেশের আগে অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশীদের উদ্ধার হওয়ার ঘটনাও রয়েছে। পরবর্তী সময়ে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের ফেরত নিয়ে আসতে হয়।
এ প্রসঙ্গে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশের ক্ষেত্রে অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের নাম আসায় তা আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। মধ্য আয়ের দেশসহ বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং করা হলেও যুদ্ধ চলমান দেশগুলোর মানুষের অবৈধভাবে প্রবেশের সঙ্গে বাংলাদেশীরা কেন প্রবেশ করছে, আন্তর্জাতিক ফোরামে তার উত্তর দিতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তিনি বলেন, গত এক যুগে প্রায় ৫৫ হাজার বাংলাদেশী অবৈধভাবে ইতালি প্রবেশ করেছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক সংস্থা আইওএম বলছে, এ বছরের ২০ মে পর্যন্ত ৭৪৩ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। সংস্থাটির তথ্য থেকে আরো জানা যায়, গত বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার সংখ্যা ছিল ২০ হাজার ১১ জন, এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ হাজার ৭৩৪ জনে। গত বছর পাঁচ মাসে ২৯০ জন মারা গেলেও এ বছর মারা গেছেন ৭৪৩ জন।

ইউএনএইচসিআরের গত মার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসের তুলনায় ২০২১ সালের প্রথম তিন মাসে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়ার হার বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় লিবিয়া উপকূল থেকে ইতালি যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে ১৪৩ শতাংশ। গত বছর সাড়ে চার হাজার শরণার্থী লিবিয়া থেকে ইতালি গেলেও এ বছর তিন মাসে গেছেন প্রায় দেড় হাজার। এ বছর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ইতালি প্রবেশকৃতদের মধ্যে ৬১ শতাংশই লিবিয়া থেকে এসেছে। পাশাপাশি লিবিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী ইতালি ও মাল্টায় প্রবেশ করেছেন, সংখ্যায় যা ৭৯৪। এ তালিকায় অন্যান্য দেশের মধ্যে আছে সুদানের ৪১৮ জন, গিনির ৪১৬, ইরিত্রিয়ার ৩৭২, আইভরিকোস্টের ৩৪৮, মালের ২৯৬, মিসরের ২৭৬, মরক্কোর ২১৮, ক্যামেরুনের ১৮২ ও সোমালিয়ার ১৩৮ জন। এ তালিকায় থাকা বাংলাদেশীরা সবাই ইতালি গেছেন বলে জানায় ইউএনএইচসিআর।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে চলছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
গভীর রাতে দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্রদলের
২০তম বিসিএস ফোরামের নতুন কমিটি : আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন,সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ্ আরেফ
আব্দুল্লাহ আরেফের অভিযানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ক্যাশিয়ার রুহুল আমিন আটক!
অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর

আরও খবর