আলমগীর পারভেজ: অস্ত্র-বোমাবাজি শিখছে কিশোর-তরুণরা ফ্রি ফায়ার পাবজি টিকটকে। ক্ষতিকর বিবেচনায় দেশে অনলাইন গেম পাবজি এবং ফ্রি ফায়ার উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিন মাসের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আরো কিছু অনলাইন গেম এবং অ্যাপ বন্ধ করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়। এরআগে স্বরাষ্ট্র ও শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে এ দু’টি ক্ষতিকারক গেম বন্ধ করার বিষয়ে সুপারিশ করা হয়েছিল।
অভিভাবকদের অভিমত হচ্ছে, আদালত থেকে বন্ধের নির্দেশ দেয়া অনলাইন গেম ফ্রি ফায়ার ও পাবজি এতদিন দেশের কিশোর-তরুণদের কি শিখিয়েছে? দেখা গেছে, গেরিনা ফ্রি ফায়ার একটি অনলাইন অ্যাকশন-অ্যাডভেঞ্চার ব্যাটল রয়্যাল গেম যা তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণে খেলা হয়। গেমটি অন্যান্য খেলোয়াড়কে হত্যা করার জন্য অস্ত্র এবং সরঞ্জামের সন্ধানে একটি দ্বীপে প্যারাসুট থেকে পড়ে আসা ৫০ জন ও তার অধিক খেলোয়াড়কে অন্তর্ভুক্ত করে। খেলোয়াড়গণ তাদের যুদ্ধের শক্তি বাড়ানোর জন্য শুরুর অবস্থান চয়ন করতে, অস্ত্র এবং সরবরাহ নিয়ে মুক্ত করে।
এ ধরনের এডভেন্সার দুঃসাহসিক গেমে আসক্ত হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অত্যাধুনিক অস্ত্র, শত্রুকে পরাস্ত করতে গুলী ছোড়ার স্টাইল রপ্ত হয়ে যায় কোমলমতি তরুণ-কিশোরদের। ফলে এতে এক ধরনের আসক্তি বেড়ে নিজেদের মধ্যেও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যায় বলে মন্তব্য অপরাধ বিশেষজ্ঞদের। এর ফলে তরুণ প্রজন্ম যাকে কিশোর গ্যাং বলা হয়। ইতোমধ্যেই গেমে আসক্তি হয়ে এক কিশোর আরেক কিশোরকে হত্যা করেছে এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। এ ছাড়াও গেমে আসক্তির কারণে টাকা না পেয়ে এক কিশোর আত্মহত্যা করেছে।
বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক গবেষণা বলছে, দেশে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বিভিন্ন ডিজিটাল গেম খেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দিনে দু-তিন ঘণ্টা গেম খেলে কাটানোর প্রবণতা রয়েছে। দেশে তরুণদের মধ্যে বেশি জনপ্রিয় ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্লাস অব ক্ল্যানস, মাইন ক্র্যাফট, কাউন্টার স্ট্রাইক গ্লোবাল অফেনস্, কল অব ডিউটি ওয়ার জোনের মতো সহিংসতাপূর্ণ গেম। এসব গেমে অস্ত্রের ব্যবহার, মেরে ফেলা ও বোমাবাজি রয়েছে। সহিংসতাপূর্ণ গেম মানুষের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা নিয়ে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের দুটি গবেষণায় দুই ধরনের ফলাফল দেখা যায়। একটিতে দেখা যায়, যাদের মধ্যে সহিংসতাপূর্ণ মনোভাব থাকে, তারা এসব গেম খেলে সহিংস আচরণ করতে পারে। আরেকটি গবেষণায় বলা হয়, এ ধরনের ভিডিও গেম সাময়িক সময়ের জন্য হলেও সহিংস আচরণ উসকে দিতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থাও অনলাইন গেম আসক্তিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে গ্রহণ করেছে।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে বন্দুক দিয়ে মসজিদে মুসলমানদের হত্যা এবং সেই দৃশ্য ফেসবুক লাইভের বিষয়টি অনেকেই পাবজির সঙ্গে তুলনা করেন। সম্প্রতি নেপালে পাবজি নিষিদ্ধ করে দেশটির আদালত। একই কারণে ভারতের গুজরাটেও এ গেম খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। এমনকি গেমটি খেলার জন্য কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছিল। অনলাইন গেম ‘প্লেয়ার আননোনস ব্যাটলগ্রাউন্ডস’ (পাবজি)। সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব ও শিক্ষার্থী- কিশোর-কিশোরীদের সহিংস করে তুলছে এমন আশঙ্কা থেকেই গেমটি বন্ধ করা উচিত বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অভিভাবকরা মনে করছেন, শুধু তিন মাসের জন্যই নয়, এ ধরনের অসক্তিমূলক গেম স্থায়ী বন্ধ থাকা উচিৎ।