সময় সংবাদ রিপোর্ট:যাত্রা শুরু করেছে নতুন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যের এ মঞ্চটি আরও শরিক খুঁজছে। জামায়াতে ইসলামী বাদে ২০-দলীয় জোটের অন্য শরিক দলগুলোকে দ্রুতই এ জোটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সরকারের বাইরের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে আনতে শেষ চেষ্টা চালানো হবে বলে জোট নেতারা জানিয়েছেন। গত শনিবার নানা নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে জোটে ঠাঁই হয়নি বিকল্পধারা বাংলাদেশের। ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বাদ পড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বেশ খুশি। তবে জোট নেতাদের আশা, বি. চৌধুরী শেষ পর্যন্ত নতুন জোটে আসবেন। জোট সম্প্রসারণের এ প্রক্রিয়ার মধ্যেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে ঢাকায় গোলটেবিল বৈঠক, চলতি মাসে ঢাকার বাইরে সিলেট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম শহরে জনসভা করবে। এর বাইরে বেশকিছু কর্মসূচি হাতে নেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঢাকার বাইরে জনসভার মাধ্যমে সিলেট থেকে কর্মসূচি শুরু করতে চায়। কর্মসূচি নির্ধারণ ও আন্দোলন সফলে শরিক দলের নেতাদের নিয়ে একটি স্টিয়ারিং কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের নেতারা জানান, আজ সোমবার অথবা মঙ্গলবার বৈঠক করে সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে। নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের পরদিন বিকালে মতিঝিলে নিজের চেম্বারে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন ড. কামাল হোসেন। বিকালে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতারা। আজ বিকালে গুলশানে বিএনপি ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠক করবেন। আজ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের বৈঠক হবে।
বিএনপি ও জোট নেতারা জানান, সব বৈঠকের আলোচনার বিষয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে কার্যকর করা। ঐক্যফ্রন্টের একাধিক নেতা বলেন, তারা পুণ্যভূমি সিলেটে প্রথম জনসভা করতে চান। যদি সরকার অনুমতি না দেয়, তা হলে ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে রোডমার্চ করবেন। জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জামায়াত বাদে ২০-দলীয় জোটের শরিক যারা রয়েছেন তারাসহ সরকারের বাইরের সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলকে এ জোটে চাই। আশা করি, বি. চৌধুরী সাহেবও আসবেন। আমরা দ্রুতই কর্মসূচি চূড়ান্ত করব। বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে যে বিরোধীজোট তৈরি হয়েছে, তাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে বি. চৌধুরীর বিকল্পধারার অনুপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্নের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, এখানে কোনো ষড়যন্ত্র নেই। তাদের নিজেদের সিদ্ধান্তেই তারা আসেনি। ৭ দফা ও ১১ লক্ষ্য নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য; দুবারের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না, এমনকি দলীয় পদেও নাÑ এ শর্তগুলো সামনে আনা হবে। মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য এ শর্ত দেবে। গত শুক্রবার উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাসায় মান্না উল্লেখ না করলেও তাদের কিছু কথা আছে বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে এ নিয়ে আলোচনা করার সময় পাননি। তার আগেই নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংশ্লিষ্ট এক নেতা বলেন, ১১ অক্টোবর ছিল বি. চৌধুরীর জন্মদিন। পরের দিন ১২ অক্টোবর রাতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে আবদুর রব ফুল নিয়ে বি. চৌধুরীর বারিধারার বাসায় যান। সেখানে বি. চৌধুরীর পুত্র মাহী বি. চৌধুরীর সঙ্গে আবদুর রবের কথা হয়। মাহীর কথাবার্তায় আবদুর রবের সন্দেহ হয়। এখান থেকেই সূত্রপাত হয় বি. চৌধুরীকে বাদ দিয়েই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট দ্রুত ঘোষণার। যার কারণে ক্ষমতার ভারসাম্যসহ নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়নি। গণফোরামের এক নেতা বলেন, মাহী ছোটখাটো বিষয় নিয়ে এমনভাবে কথা বলতেন যেটা কেউ মানতে পারেননি। মাহী যে একটা ঘটনা ঘটাবে, তারা আগেই টের পেয়েছেন। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে মাহীর বক্তব্যেও তার প্রমাণ আছে। সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, বি. চৌধুরী জাতীয় ঐক্য থেকে বাদ পড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বেশ খুশি দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা বেশ সোচ্চার।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাষায়, চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হওয়ার পর থেকে বিএনপির সঙ্গে বি. চৌধুরীর সম্পর্ক ছিল বৈরী। সম্প্রতি জাতীয় ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তিন নেতা বাসায় গিয়ে দলের অতীত কর্মকা-ের জন্য তার কাছে দুঃখ প্রকাশও করেন। কিন্তু বি. চৌধুরীর মধ্যে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে না পেয়ে তাকে নিয়ে বিএনপিতে সন্দেহ বেড়ে যায়। দলটির হাইকমান্ড বার্তা পাঠায়, বি. চৌধুরী অবস্থান পরিষ্কার না করলে তাকে ছাড়াই যেন বৃহত্তর ঐক্য গঠন করা হয়। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, বি. চৌধুরী সাহেবের মতো ব্যক্তিত্ব জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে থাকলে ভালো হতো; এখন তিনি নেইÑ তাতেও ক্ষতি নেই। কারণ, দেশের মানুষ গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাওয়ায় সরকার একা হয়ে পড়েছে। যারা আছেন, তারাও দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘বি. চৌধুরী সাহেবকেও আমরা চাই, তিনি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা না করলে নতুন জোটে আসবেন বলে প্রত্যাশা করি।’ সংশ্লিষ্ট জোট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও জোট কীভাবে পরিচালিত হবে, নেতৃত্বে কে থাকবে, তা নিয়ে একটি কাঠামো তৈরি করা হবে। যদিও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি। সে ক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেন সবার সিনিয়র। দেশে-বিদেশে তার ভালো পরিচিতিও রয়েছে। তার পরও তিনি চান, দলগত যৌথ নেতৃত্ব। জাতীয় ঐক্য পরিচালিত হবে দলগত যৌথ নেতৃত্বের মাধ্যমে। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যৌথ নেতৃত্বে চলবে। তবে কোনো কর্মসূচি হলে সেখানে ড. কামাল হোসেনই মূল ফোকাস থাকবেন। ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মনসুর বলেন, সময় বলে দেবেÑ কে নেতৃত্ব দেবেন। এটা বলে-কয়ে হয় না। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শত বাধার মধ্যে নতুন জোটের আত্মপ্রকাশে দেশের মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে। মানুষ মনে করে, নতুন এ জোট তাদের ভোটাধিকার ও আইনের শাসন এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হবে।