Header Border

ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল) ২৯.৫১°সে
শিরোনাম
খিলগাঁও ও মেরাদিয়ার বুধবারের হাট নিয়ে কিছু স্মৃতি-আলমগীর পারভেজ দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে চলছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ গভীর রাতে দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ গারুড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রকল্যাণ পরিষদ কর্তৃক বার্ষিক বনভোজন অনুষ্ঠিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্রদলের ২০তম বিসিএস ফোরামের নতুন কমিটি : আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন,সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ্ আরেফ আব্দুল্লাহ আরেফের অভিযানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ক্যাশিয়ার রুহুল আমিন আটক! অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি

আর কত উদ্যোগ নিলে চালের দাম কমবে

আলমগীর পারভেজ: আর কি উদ্যোগ নিলে কমবে চালের দাম। সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও ভাঙতে পারেনি চালের সিন্ডিকেট। কি কারণে চালের দাম বাড়ছে তার কোন সঠিক উত্তর নেই ব্যবসায়ীদের কাছে। গত ছয় মাসে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় তেরো লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ওএমএস কার্যক্রমসহ অন্যান্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি বাড়িয়েছে সরকার। এসব উদ্যোগের কোনো প্রভাব নেই বাজারে। চালের দাম কমছে না, উল্টো বাড়ছে। চড়া দরেই চাল কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
জানা গেছে, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে নানা উদ্যোগ নিলেও কোন কাজে আসেনি। ফলে নানা অজুহাতে বাড়ছে চালের দাম। এতে করে ক্রেতার মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কিন্তু কোন লাভ নেই। ক্ষোভ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই তাদের। সরকার আমদানি শুল্ক কমেয়েছে। এল-সি তে জামানত কমিয়েছে,খোলা বাজার চাল বিক্রি করছে, মজুদ জানতে বিভিন্নভাবে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। দাম উল্টো বাড়ছেই। এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে আর কি উদ্যোগ নিলে চালের দাম কমবে।
চাল ব্যবসায়ী, সরকারের সংশ্নিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চালের চড়া দামের কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রকৃত উৎপাদন ও চাহিদার সঠিক তথ্য নেই। যে কারণে নীতি-উদ্যোগ ঠিকমতো কাজ করছে না। সরকারের হাতে যে মজুদ আছে, তা বাজারে হস্তক্ষেপ করার জন্য যথেষ্ট নয়। দেশের বাজারের সিংহভাগ সরবরাহ বড় ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া এবং ধানের দাম বাড়ার কারণে চালের দাম কমছে না।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের বাজারগুলোতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি মানের চালের দাম ৫০ থেকে ৫৬ টাকা। সরু চালের কেজি ৬০ থেকে ৬৮ টাকা। এই দর গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশি। গত বছরের তুলনায় মোটা চাল ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ, মাঝারি মানের চাল ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং সরু চাল ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে গত বছরের তুলনায় চালের দাম কমেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং এন্ড মনিটরিং ইউনিটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে চালের দাম গত বছরের তুলনায় কমেছে। এ তিন দেশ থেকে চাল আমদানি করা হলে আমদানির পরে দেশে সেদ্ধ চালের প্রতি কেজির দাম সর্বনিম্ন ৩২ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ৩৮ টাকা ১০ পয়সা হওয়ার কথা। সরকার ও ব্যবসায়ীরা যে চাল আমদানি করছেন তার অধিকাংশ আসছে এসব দেশ থেকে।
চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ৭ জানুয়ারি অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে চালের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। পাশাপাশি আমদানিতে সব ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। তবে আগাম কর ৫ শতাংশ ও আগাম আয়কর ৫ শতাংশ বহাল থাকে। মোট কর ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ সুবিধায় চাল আমদানি করা হয়। মাঝখানে কিছুদিন বিরতির পর গত ১২ আগস্ট থেকে চাল আমদানির শুল্ক আগের মতো করে কমানো হয়েছে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত এই কম শুল্কে চাল আমদানি করা যাবে।
সরকার চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে দেশের সকল সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ওএমএসের মাধ্যমে দুই লাখ ৫৯ হাজার টন চাল বিতরণ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। তথাপি এসব উদ্যোগের কোনো প্রভাব চালের দামে পড়েনি।
উৎপাদন বৃদ্ধি, কম শুল্কে আমদানির ব্যবস্থা এবং সরকারি পর্যায়ের সরবরাহ বাড়ানোর পরে চালের দাম কমছে না কেন- জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং বাজার স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বাজারে ধানের সরবরাহ কম। বাড়তি দামের আশায় অনেক কৃষক ধান বিক্রি করেননি। আবার চালের চাহিদাও বেড়েছে। করোনার কারণে মানুষ ঘরে থাকছে। আগে বাইরে যেসব খাবার খেত সেগুলো খাচ্ছে না। ফলে ঘরে খাবারের চাহিদা বেড়েছে। আবার পোলট্রি খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণী খাদ্য তৈরিতে চালের ব্যবহার বেড়েছে। বাড়তি উৎপাদন ও আমদানি হলেও প্রকৃত চাহিদা কত তা স্পষ্ট নয়। এসব কারণে চালের দাম বেড়েছে। তবে আশা করা যায়, শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে আউশ ও আমন মিলিয়ে এক কোটি ৭৭ লাখ টন ধান উৎপাদন হয়েছে, যা আগের ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় সাড়ে সাত লাখ টন বেশি। আবার বোরোর ফলনও ভালো হবে বলে আশা করছে সংস্থাটি। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ১৩ লাখ ৫১ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এ ক’দিনে সরকার দুই লাখ ২৭ হাজার টন আমদানি করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে চাল আমদানি বাবদ গত অর্থবছরে মূল্য পরিশোধ হয়েছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ৪০ গুণ বেশি। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার পুনরায় কম শুল্কে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে। ইতোমধ্যে ৩১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ৮২ হাজার টন সেদ্ধ ও আতপ চাল আমদানির অনুমোদনও দেয়া হয়েছে।
চালের দাম বাড়ছে কেন তার কারণ কয়েকজন মিল মালিক, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়। কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, দেশে ছোট চাল ব্যবসায়ীরা ব্যবসা থেকে ছিটকে পড়েছেন। অনেক ছোট চালকল এখন বন্ধ। ফলে বিভিন্ন জেলার স্থানীয় সরবরাহ কমে গেছে। বড় বড় কিছু চালকল পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন একশ্রেণির ব্যবসায়ী, যারা আড়তদার বা পাইকারি ব্যবসায়ী নন। কিন্তু প্রচুর চাল কিনেছেন। তারা বলেন, সরকারকে চাল বা ধান সরবরাহ করার যোগ্য রাইস মিল কমে গেছে। সরকার চকচকে পলিশ চাল সংগ্রহ করতে চাচ্ছে। হাস্কিং মিল এই চাল সরবরাহ করতে পারছে না। অন্যদিকে এই চাল সরবরাহ করছে গুটি কয়েক অটোরাইস মিল। এতে সরকার অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। নিরাপদ মজুদ গড়ে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বাজারে হস্তক্ষেপ করার সক্ষমতাও সরকারের কমেছে। এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী।
জয়পুরহাটের মদিনা রাইস মিলের মালিক কে এম লায়েক আলী বলেন, চালের উৎপাদন, মজুদ, সংগ্রহসহ সামগ্রিক বিষয়ে পরিসংখ্যানগত সমস্যা রয়েছে। মিলারদের কাছে কী পরিমাণ চাল মজুদ আছে, কত বিক্রি হচ্ছে এবং কার কাছে বিক্রি হচ্ছে- তার বিস্তারিত তথ্য সরকারের কাছে থাকে। কারণ, প্রতি ১৫ দিন পরপর মিলগুলো জেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রককে এ বিষয়ে রিপোর্ট করে। কিন্তু মিল থেকে চাল বের হওয়ার পরে কোথায় কীভাবে থাকছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য কারও কাছে থাকে না। গত এক থেকে দেড় বছর ধরে আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বাইরেও একশ্রেণির মৌসুমি ব্যবসায়ী মিল থেকে চাল কিনছেন। তারা কোথায় বাজারজাত করছেন তা দেখা দরকার। অন্যদিকে চালের দাম বাড়তি থাকায় অনেক কৃষকের ঘরেও ধান রয়েছে। ফলে উৎপাদন অনুযায়ী বাজারে সরবরাহ হয়েছে বা হচ্ছে, তা ঠিক নয় বলে তিনি মনে করেন।
ব্যবসায়ীরা বলেন, চালের দাম বিষয়ে সরকারকে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এর দাম কোন পর্যায়ে কেমন হবে। উৎপাদন খরচের ওপর ভিত্তি করে এটি ঠিক করা উচিত। একজন মিলার ৫০ বা ৫২ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করছেন। ঢাকার পাইকারি বাজারে সেই চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে বা তারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও, জয়পুরহাট, পাবনা, কুষ্টিয়া, রংপুর থেকে যাওয়ার পর এক কেজি চালের দাম পাইকারি পর্যায়ে কেন ১০ টাকা বেড়ে যাচ্ছে, তা ভাবা দরকার। এসব এলাকা থেকে কমপক্ষে ১৫ টন চাল নিয়ে একটি ট্রাক যায়, যার ভাড়া ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মাল ওঠানো, নামানো, আড়ত ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে কোনোভাবেই কেজিতে দুই টাকার বেশি খরচ হয় না।
ঠাকুরগাঁওয়ের ন্যাশনাল রাইস মিলের মালিক মাহমুদ হাসান রাজু বলেন, চালের বাজারে এক ধরনের অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে। ছোট মিল টিকতে পারছে না। অধিকাংশ মিলই বন্ধ। বাজারের সিংহভাগ দখল বড় ব্যবসায়ীদের হাতে। ফলে বাজারে সরবরাহকারী কমে গেছে। দেশের সব মিল উৎপাদনে থাকলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে। সরকারকে সব মিল চালু রাখার উদ্যোগ নিতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে চলছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
গভীর রাতে দেশ ছাড়লেন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ
‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্রদলের
২০তম বিসিএস ফোরামের নতুন কমিটি : আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন,সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ্ আরেফ
আব্দুল্লাহ আরেফের অভিযানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ক্যাশিয়ার রুহুল আমিন আটক!
অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর

আরও খবর