সময় সংবাদ রিপোর্ট : উন্নয়নের জোয়ার ফুলে-ফেঁপে উপচে পড়ায় দারুন বিরম্বনায় সাধারন মানুষ।স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে জিম্মি হয়ে সাধারণ মানুষ না পারছে মুখ ফুটে কিছু বলতে না পারছে আরাম-আয়েশে চলাফেরা করতে। শুধুমাত্র উন্নয়নের কথা ও রূপক গল্প শুনেই কোনমতে দিন পার করছে সাধারণ মানুষ।
হ্যাঁ এমনটাই প্রতিদিনের গল্প এখন বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের। এই উপজেলা থেকে সংসদে পরপর কয়েকবার প্রতিনিধিত্ব করে আসছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেত্রী রত্না আমিন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহা জোটের অংশ হয়ে এই আসনটি কয়েকবার যাবত উপহার পেয়ে আসছে জাতীয় পার্টি। কিন্তু উপহারের বিন্দু পরিমাণ মূল্য দিয়ে আসতে পারেনি স্থানীয় সংসদ সদস্য বরং সাধারণ মানুষ তার কাছে একরকম জিম্মি হয়ে গেছে।তার চারপাশে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ দ্বারা বলয় তৈরি করে এলাকার উন্নয়ন কুক্ষিগত করে সাধারণ মানুষকে এ জিম্মি করতে পেরেছে। বিগত এক যুগের মধ্যেও এই উপজেলার কোনো ইউনিয়নেই যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
স্থানীয় সংসদ সদস্যের মাথার ওপর সকল অভিযোগ তুলে দিয়ে একরকম হাত-পা গুটিয়েই আছে এই উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা।অধিকাংশ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান থাকার সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সহজ পাচ্ছে না। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা একরকম ভঙ্গুর দশায় পরিণত হয়েছে।
এই উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।এর মধ্যেও প্রতিটি ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা প্রতিদিন উন্নয়নের গল্প শুনে সকাল শুরু করেন এবং উন্নয়নের গল্প শুনতে শুনতেই রাতে ঘুমিয়ে পড়েন কিন্তু দিনের আলোতে কোন উন্নয়নের ছবি দেখা যায় না।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রয়াত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সৈয়দ মাসুদ রেজা ও বিএনপির সমর্থিত সংসদ সদস্য আবুল হোসেন খানের হাত ধরে যে উন্নয়নের ছোঁয়া কিছুটা লেগেছিল তা এখন অনুন্নয়নের শ্যাওলায় ঢাকা পড়ে গেছে। এই উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো অবহেলিত ইউনিয়ন হচ্ছে ১৩ নং পাদদেশে পড়ে ইউনিয়ন।পার্শ্ববর্তী বরগুনা-বেতাগীর বিবিচিনি ইউনিয়ন এবং পটুয়াখালীর-মির্জাগঞ্জের মাধবখালী ইউনিয়নের সাথে জেলা সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত এই ইউনিয়নটি এখন পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও ইউনিয়নের সাথে অবহেলার দিক দিয়ে চ্যাম্পিয়ন ও উদাহরণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
আলহাজ্ব সৈয়দ মাসুদ রেজার আমলে জেলা সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত রাস্তাটিতে মাটির প্রোলেপ পড়লেও আজও পর্যন্ত ইটের সাক্ষাৎ পায়নি। অথচ প্রায় দুই যুগ যাবৎ এই ইউনিয়নটিতে সরকারদলীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিদ্যমান রয়েছে। এই ইউনিয়নের মধ্যেও আবার সবচেয়ে অবহেলিত হচ্ছে ৯ নং ওয়ার্ডটি। এই ওয়ার্ড থেকে বলা হয় ভোলার ব-দ্বীপের মত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপময় ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের সাধারণ মানুষ মনে করে আমরা ১৩ নং পাদদেশিপুর ইউনিয়নের বাহিরের লোক। কারণ এই ইউনিয়নের অন্যান্য ওয়ার্ডে ছিটে ফোঁটা উন্নয়ন হলেও সেখান থেকে উন্নয়নের কোন বিন্দুকনা ভুলেও এই ওয়ার্ডে এসে পড়েনা।
এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা বয়বৃদ্ধ ফজলুল হক মল্লিকের সাথে কথা বলে জানা যায় বিগত দুই যুগ ধরেও এই এলাকার কোন রাস্তাঘাটে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এবং সেটা নিয়ে এই ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের কোন মাথা ব্যথা তিনি দেখেননি। তিনি বলেন জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে নির্বাচন এলে স্থানীয় প্রতিনিধিদের ছবি দুই একবার দেখা যায় কিন্তু ভোটাভুটির পরে তাদের চেহারা বেমালুম ভুলে যান এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।
স্থানীয় আরো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জানা যায় তারা সরকার ঘোষিত যে উন্নয়নমূলক ও সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা তার বাস্তবিক রূপ এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা দেখতে পায় না। এলাকার রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট বহুদিন যাবত সংস্কার না করায় তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এ বিষয় স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাথে দীর্ঘদিন যাবত ধরনা দিয়েও কোনো ফলাফল আসছেনা।
স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, এই ওয়ার্ডের কিছু লোহারপুল ও ব্রীজ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে শুধু চলাচলের অনুপযুগী নয় বরং যে কোন মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবে এলাকার সাধারণ মানুষ ও স্কুল কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরা। এলাকার সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ দেখার মত যেন কেউ নেই। এমনকি স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের জোর প্রচেষ্টায় কিছু যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হয়েও এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রঘুনাথপুর গ্রামের একাধিক রাস্তা ও ব্রিজ,কালভার্ট। সউদদোগী এসব ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় তারা বহু কষ্টে কিছু উন্নয়নমূলক স্কিম পাশ করিও স্থানীয় প্রতিনিধিদের তদারকির অভাবে সে কাজগুলো শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন করতে পারেননি। এরমধ্যে ভরপাশা রঘুনাথপুর গ্রামের এক কিলোমিটারের একটি রাস্তা তিন বছর যাবত কাজ করেও পিচ ঢালাই হয়নি। ভাঙ্গা এট এমনভাবে বেঁচে রাখা হয়েছে যে সাধারণ মানুষ এখন সহজে হাঁটতেও পারছে না।
এছাড়াও আশেপাশের সকল রাস্তা এখন খানাখন্দ ও মৃত্যু কুপে পরিণত হয়েছে। বিগত কয়েক যুগ যাবত এইসব রাস্তাগুলোতে উন্নয়নের হাতের ছোয়া না পাওয়াতে সাধারণ জোয়ারের পানির স্রোতের তোপের মুখে সহজে ভেঙে যাচ্ছে। ফলে এইসব এলাকার কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। একটি সুইচগেটের অভাবে পানির স্রোতকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ।ফলে কৃষকরা জমি চাষ থেকে শুরু করে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত কোমর পানির মধ্যেই ডুবাডুবি করতে হচ্ছে।
তাই এসব এলাকার সাধারণ মানুষরা আশার আলোর পথপানে চেয়ে আছেন এবং তারা মনে করছেন তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা উপলব্ধি করে এই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গরাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।