সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট: গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫২ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৯০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৭৫ জন।
করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে অনেকের কোনো লক্ষণ-উপসর্গ ছিল না। এসব উপসর্গহীনরা নীরবে করোনা সংক্রমণের ছড়াচ্ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
চীনে প্রতি ৪ জন রোগীর মধ্যে একজনের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ-উপসর্গ ছিল না। বাংলাদেশেও অনেকের লক্ষণ-উপসর্গ নেই। এ ধরনের রোগীর লক্ষণ-উপসর্গ না থাকলেও অন্যদের ঠিকই সংক্রমিত করে যাচ্ছেন। যাদের লক্ষণ-উপসর্গ আছে তারা সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহার বা আসোলেশনে যাচ্ছেন।
কিন্তু যাদের উপসর্গ নেই তারা পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী বা আশপাশের মানুষের সঙ্গে মিশছেন। এতে তিনি না জেনেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়াচ্ছেন। করোনার সংক্রমণ বিস্তারের ক্ষেত্রে লক্ষণ-উপসর্গ থাকা রোগীর তুলনায় উগসর্গহীন রোগীরা বেশি বিপজ্জনক।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৯০ করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ ছাড়া রোগীও রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, যেসব করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, তার মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ ছিল না এমন রোগীও আছে। তবে যে পরিমাণ লক্ষণ-উপসর্গহীন পাওয়া গেছে তার পরিসংখ্যান এ মুহূর্তে নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, যাদের করোনা পজেটিভ অথচ লক্ষণ-উপসর্গ নেই এমন মানুষ অনেক আছেন। এটি সব দেশেই হয়ে থাকে। আমাদের এখানে তাই হচ্ছে। তবে যাদের করোনার লক্ষণ-উপসর্গ নেই, কিন্তু পজিটিভ। এ ধরনের করোনা রোগীরা বেশি বিপজ্জনক। কারণ লক্ষণ-উপসর্গ দেখা দিলে তারা পরীক্ষা করান, আলাদা থাকেন। কিন্তু যাদের লক্ষণ নেই, তারা তো নিজেই জানেন না তিনি করোনা আক্রান্ত। এতে রোগী হয়ে না জানার কারণে তিনি অন্যদের সঙ্গে মিশে সংক্রমিত করে যাচ্ছেন। লক্ষণ-উপসর্গহীন করোনা রোগীরা নীরবে সংক্রমণ বেশি ছড়াবেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, যাদের করোনার লক্ষণ-উপসর্গহীন তাদের বিএসএমএমএমইউর ফিভার ক্লিনিকে এসে পরীক্ষার কথা আমরা বলে আসছি। লক্ষণ-উপসর্গহীন কাউকে এখানে আসতে নিরুসাহিত করছি। কারণ যারা লক্ষণ-উপসর্গ থাকে তিনি অন্যকে সংক্রমিত করবেন।
গতকাল শনিবার দুপুর আড়াইটায় দেশের কোভিড-১৯ সম্পর্কিত সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে প্রতিষ্ঠানটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ৫৫২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে আরও ৫ জন মারা গেছে।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, বর্তমানে সারাদেশে ৩১টি ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় ৬১৯৩টি নমুনা সংগ্রহ এবং ৫৮২৭টি পরীক্ষা হয়েছে। এসব নমুনা পরীক্ষার আক্রান্ত ৫৫২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৭৯০ জন। গতকালের তুলনায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ বেশি। তিনি বলেন, করোনায় আক্রান্তের হার ঢাকা বিভাগে বেশি। মোট আক্রান্তের ৮৩ দশমিক ৭০ শতাংশ এ বিভাগে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগে ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ, সিলেট বিভাগে ১ দশমিক ৭ শতাংশ, রংপুর বিভাগে ১ দশমিক ৮০ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ২ দশমিক ২০ শতাংশ, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, বরিশাল বিভাগে ১ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং রাজশাহী বিভাগে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৭৫ জনে। নতুন করে যারা মারা গেছেন তার মধ্যে ৩ জন পুরুষ ও ২ জন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৩ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৭৭ জন।
অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ১৬৮ জনকে। এখন পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ৬৩২ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৫৮ জন। এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন ১ হাজার ২২ জন। সারাদেশে আইসোলেশন শয্যা ৯৬৩৮টি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৩৯৪৪টি। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৬৯৪টি। এসব হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা ৩৪৯টি ও ডায়ালাইসিস শয্যা ১০২টি রয়েছে।