সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃজাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে মহাহিসাব নিয়ন্ত্রক (সিজিএ) কার্যালয়ের রাজস্ব আহরণের তথ্যে বড় ধরনের গরমিল থেকেই যাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, হিসাব পদ্ধতি ও ট্রেজারি চালান জমায় গরমিল হওয়ায় সিজিএর সঙ্গে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের পার্থক্য দেখা দেয়। এই গরমিলের কারণে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা পরিচালনায় অসুবিধা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সঙ্গে সিজিএর রাজস্ব আদায়ের পার্থক্য থাকে। মূলত হিসাব পদ্ধতির তারতম্যের কারণেই এমনটি হয়।
প্রতি অর্থবছর শেষে জুলাইয়ে এনবিআর ঘটা করে রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরে। সংশোধিত লক্ষ্য কখনো কখনো আদায় হলেও বেশিরভাগ বছরেই ঘাটতি থাকে। তবে সংশোধিত লক্ষ্যের কাছাকাছি যাওয়ায় এনবিআরের কর্মকর্তারা সব সময় তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন।
কিন্তু অর্থবছর শেষ হওয়ার কয়েক মাস পর সেই তৃপ্তির ঢেঁকুর মিলিয়ে যায়। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত চূড়ান্ত হিসাবে দেখা যায়, এনবিআরের দেখানো রাজস্ব আদায়ের চেয়ে আরও কম টাকা আদায় হয়েছে। এনবিআরের রাজস্ব আদায় নিয়ে প্রতিবছরই পার্থক্য থাকে।
সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ‘নগদ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র বৈঠকে এ সংক্রান্ত হিসাবে সোর্স তথ্যের সঙ্গে ‘টিএসএ’ (ট্রেজারি সিঙ্গেল অ্যাকাউন্ট) ও ‘আইবাস++’ (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম)-এর তথ্যে বড় ধরনের গরমিলের কথা জানানো হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি হিসাবে গরমিল নিরসনে মিলকরণ অব্যাহত রাখা এবং এ লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’, হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। একই সঙ্গে হিসাব মিলকরণের অগ্রগতি অর্থ বিভাগকে নিয়মিত অবহিত করতেও বলা হয়েছে।
বৈঠকে অর্থ সচিব আবদুর রউফ তালুকদার জানান, সরকারি হিসাবের মিলকরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। তবে হিসাবের গরমিল সর্বনি¤œ পর্যায়ে নামিয়ে আনতে এবং গরমিলের প্রকৃত ব্যাখ্যা থাকতে হবে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে এনবিআরের হিসাবে ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেখা যায়, এর পরিমাণ ২ লাখ ১৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। হিসাবের পার্থক্য ৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা। এর আগের অর্থবছরে এনবিআরের চেয়ে ৭১৫ কোটি টাকা কম আদায় দেখানো হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে। ওই অর্থবছরে এনবিআর ২ লাখ ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা আদায় দেখিয়েছিল।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি ১৩ হাজার ৫০৫ কোটি টাকার পার্থক্য হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ওই বছর এনবিআর ১ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা আদায় করেছে। অন্যদিকে এনবিআর বলেছে, ওই বছর ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩ কোটি টাকা আদায় করেছে। একইভাবে ২০১৫-১৬ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যথাক্রমে হিসাবের পার্থক্য হয় ৯ হাজার ২৯৭ কোটি ও ১১ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ওই তিন বছরেই সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা হিসাবের পার্থক্য হয়।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক-কর বাবদ অনেক ভুয়া চালান জমা পড়ে। শুল্ক-কর কর্মকর্তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই ওই টাকা নিজেদের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেন। পরে যখন চেকটি ভুয়া প্রমাণিত হয়, তখন এনবিআরের হিসাবে গরমিল হয়।
সরকারি হিসাবে গরমিলের কারণ হিসেবে বৈঠকে জানানো হয়, চলমান ‘আইবাস++’-এর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে সরকারের আয়-ব্যয় হিসাব সম্পূর্ণ অটোমেশন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হবে। তখন সরকারি হিসাবে গরমিলের আর কোনো সুযোগ থাকবে না। তবে টেকনিক্যাল কারণে কোনো গরমিল থাকলেও সেটি এখনকার মতো ব্যাপক না হয়ে সহনীয় মাত্রায় থাকবে বলে বৈঠকে অভিহিত করা হয়।