সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট: পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানগুলোতে এবারও বসছে কোরবানির পশুর হাট। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট বসবে বলে জানিয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। এরইমধ্যে হাট ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, এবার গাবতলীর স্থায়ী পশুর হাটসহ সবকটি হাটে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে টিম থাকবে।
হাটের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরীন সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও একটি নির্দেশনা আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, দূরত্ব মেনে কীভাবে হাট করা যায় এটা আমরা চেষ্টা করব। এবার দুই সিটিতে মোট ২৯টি হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় রয়েছে ১৮টি। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) ১১টি। মেয়াদ হবে ঈদের দিনসহ আগের পাঁচ দিন।
ডিএসসিসির সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার দক্ষিণে ১৪টি অস্থায়ী হাট বসানো হবে। আর স্থায়ী হাট থাকবে চারটি। গত ১৪ জুন হাটের ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। ডিএসসিসির এবারের অস্থায়ী হাটগুলো হলো- উত্তর শাহজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘ মাঠ, হাজারীবাগের ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি মাঠসংলগ্ন উন্মুক্ত এলাকা, কামরাঙ্গীরচরের ইসলাম চেয়ারম্যানবাড়ির মোড় থেকে বুড়িগঙ্গার বাঁধ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট, শ্যামপুর বালুর মাঠ, মেরাদিয়া বাজার, আরমানিটোলা মাঠ, লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাবসংলগ্ন গোপীবাগ বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়ামসংলগ্ন বিশ্বরোড, দনিয়া কলেজ মাঠসংলগ্ন খালি জায়গা, ধূপখোলা মাঠ, সাদেক হোসেন খোকা মাঠের পাশে ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনাল, আমুলিয়া মডেল টাউন এবং লালবাগের রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ।
এছাড়া ঢাকা দক্ষিণের স্থায়ী চারটি হাট হলো-সারুলিয়া পশুর হাট, সারুলিয়া কাঁচাবাজার, ডেমরা বাজার ও কায়েতপাড়া বাজার। অন্যদিকে ডিএনসিসির ১১টি হাটের মধ্যে অস্থায়ী ১০টি হলো—উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) পশুর হাট, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাব নগর) ব্লক-ই, সেকশন ৩-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইন, মিরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং), উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরে বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত, কাওলা শিয়ালডাঙ্গা ভাষানটেক রাস্তার নির্মাণাধীন অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত অংশ এবং পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনী বাজারমুখী রাস্তার উভয় পাশ। আর গাবতলীতে বসবে স্থায়ী হাট।
রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানগুলোতে যে হাটগুলো বসছে তার মধ্যে সবচাইতে বড় হাট হলো গাবতলীতে বসা স্থায়ী গরুর হাটটি.তার পরেই রয়েছে মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী মেরাদিয়া হাট.এ হাটে সব সময় ক্রেতা-বিক্রেতায় জমজমাট থাকে।দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চল থেকে ব্যাপারিরা ভিড় করে থাকে ঐতিহ্যবাহী মেরাদিয়া পশু হাটে।জেলার প্রাণি সম্পদ বিভাগ, পুলিশ প্রশাসনকে হিমসিম খেতে হয় এত বড় পশু হাটের ব্যাবস্থাপনা ও আইনশৃংখলা ঠিক রাখতে।
ঢাকা জেলাতে পশু হাট গুলোর মধ্যে মেরাদিয়া হাট অন্যতম হওয়ার বড় কারন এ হাটের বয়স শত বছর পেরিয়ে গেছে। মেরাদিয়া হাটের পর ঢাকা জেলায় অনেক গরু-ছাগলের হাট হলেও এতদিনেও মেরাদিয়া হাটের কদর কমেনি একবিন্দুও। প্রতি বছরই ক্রেতা বিক্রেতায় ভরপুর থাকে এ হাটটি। দেশের বিভিন্ন জেলা হতে পাইকাররা গরু-ছাগল কিনে নিয়ে ট্রাকবোঝায় করে গিয়ে বিক্রি করতে নিয়ে আসে এ হাটে । এ বছর করোনার কারণে জমজমাট হতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে ঈদের আরো বেশকিছুদিন বাকি থাকায় এবছরও আশায় আছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
গাজিপুরের আমতলা গ্রামের স্থানীয় গরু ব্যাবসায়ী আসাদুল ইসলাম বলেন,গাবতলীর পরেই আশপাশের এলাকার মধ্যে সবচাইতে বড় হাট মেরাদিয়া হাট । কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রচুর পরিমাণ গরু ছাগল আমদানি হয় এই হাটে। আমরা গ্রাম এলাকা থেকে গরু-ছাগল কিনে এই হাটে বাইরের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করি।ঈদের সময় একটু বাড়তি আয়ের জন্য নাওয়া খাওয়া ভুলে জোর দিয়ে ব্যাবসা করি। এ বছর অন্যবারের মত ব্যাবসা হচ্ছে না। দেখা যাক কোরবানির আগ পর্যন্ত কী হয়?
মেরাদিয়া হাট কর্তৃপক্ষ সময় সংবাদ লাইভকে বলেন,কোরবানির আরোতো বেশ কিছুদিন বাকি আছে। আশা করছি বাইরে থেকে ব্যাপারি আসলে অন্য বছরের তুলনায় হাট জমজমাট হবে এবং অন্যন্যবারের তুলনায় বেচা-বিক্রি বেশী হবার আশা রাখছি।
প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন বলেন, মেরাদিয়া হাটে মেডিকেল টিম বসানো হবে। ক্রেতারা চাইলে স্টরওয়েড বা হরমোন পরীক্ষার জন্য আমাদের সহায়তা নিতে পারবেন। হাটগুলোতে পশু পরীক্ষা করে স্টরওয়েড বা হরমোন দিয়ে মোটাতাজাকরণ করার প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
খিলগাঁও থানা পুলিশের পক্ষ হতে বলা হয়েছে, মেরাদিয়া হাটে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও তদারকি অব্যাহত থাকবে। ক্রেতা বিক্রেতারা টাকা পরিবহনে অসুবিধা মনে করলে পুলিশের সহায়তা নিতে পারবেন। সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করবে পুলিশ।