সময় সংবাদ সম্পাদকীয়ঃ মহান আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সাঃ) যে সমস্ত বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে বলেছেন এবং ওলামাদের বর্ণনা থেকে যেসব বিষয় আল্লাহ্ ও তার রাসূল (সাঃ) কর্তৃক হারাম হওয়ার অকাট্য দলীল রয়েছে, সেগুলোই কবীরা গুনাহ।গুনাহ দুই প্রকার কবীরা গুনাহ ও সগীরা গুনাহ। কবীরা গুনাহ থেকে মাফ পেতে চাইলে তওবা করতে হবে। যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায় তবে আল্লাহ্ পাক সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
আল্লাহ্ পাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন (সূরা আন-নিসা-৩১) ‘যে বিষয়গুলো সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে পার, তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব।‘
কবীরা গুনাহ কয়টি সে সম্পর্কে হাদীসে নির্দিষ্ট সংখ্যা পাওয়া যায়নি। হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে অভিমত ব্যক্ত করল, কবীরা গুনাহ তো সাতটি। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বললেন, প্রায় সাতশ’টি। তবে তওবা করে ক্ষমা প্রার্থনা করলে কোন কবীরা গুনাহ আর কবীরা থাকে না, তা মাফ হয়ে যায়। সগীরা গুনাও বারংবার করতে থাকলে তা সগীরা থাকেনা, কবীরা গুনাহর রূপ ধারন করে। অন্যত্র বর্নিত আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, কবীরা গুনাহ প্রায় সত্তরটি।
অপরাধের মাত্রায় সকল কবীরা গুনাহ সমান নয়। কোনটা বেশী গুরুতর আবার কোনটা কম গুরুতর। আল্লাহ্ তায়ালার সাথে শিরক করা সবচেয়ে গুরুতর কবীরা গুনাহ। এটা এত জঘন্য পাপ যে, এতে লিপ্ত ব্যক্তি অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে এবং তার অপরাধ ক্ষমার অযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ পাক বলেছেন (সূরা আন-নিসা-৪৮) ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করবেন না, যে লোক তাঁর সাথে অন্যকে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করবেন এর নিম্ন পর্যায়ের গুনাহ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।‘
নিম্নে ধারাবাহিক ভাবে ১০০ টি কবীরা গুনাহের বর্ণনা দেয়া হলঃ
(১) আল্লাহর সাথে শিরক করা। এটি সবচেয়ে জঘন্যতম কবীরা গুনাহ। উদাহারন স্বরূপ- চন্দ্র-সূর্য, পাথর, বৃক্ষ, মানুষের তৈরী মূর্তী বা দেব-দেবী, ফেরেশতা, নবী ওলী, গ্রহ-নক্ষত্র, জ্বিন ইত্যাদিকে আল্লাহর সমতুল্য মনে করা ও এদের উপাসনা করা।
(২) ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে হত্যা করা বা খুন করা।
(৩) জাদু-টোনা করা বা এতে লিপ্ত হওয়া। জাদু-টোনায় বিশ্বাস স্থাপন করা।
(৪) নামাযে অবহেলা করা বা নামাযের ব্যাপারে উদাসীন থাকা। সময় মতো নামায আদায় না করে নামাযের সময় চলে যাওয়ার পর তা আদায় করা। নামায পরিত্যাগ করা।
(৫) সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও যাকাত আদায় না করা।
(৬) বিনা ওযরে রমজান মাসের রোজা না রাখা বা পরিত্যাগ করা।
(৭) সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও হজ্জ না করা।
(৮) পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া বা তাদেরকে কোনভাবে কষ্ট দেয়া। তাদেরকে কটু কথা বলা, অভিসম্পাত করা। তাদের প্রতি সদয় আচরন না করা।
(৯)আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা।
(১০) যিনা ব্যভিচার করা। নিজের স্ত্রী/স্বামী ব্যতীত অন্য কোন নারী/পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করা।
(১১)সুদ দেয়া বা সুদ নেয়া, সুদ লেখা বা তাতে সাক্ষী থাকা।
(১২)এতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা।
(১৩) সমকামিতার সম্পর্ক স্থাপন করা।
(১৪) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) –এর প্রতি মিথ্যাচার করা।
(১৫) জিহাদের ময়দান থেকে পলায়ন করা।
(১৬)শাসক কর্তৃক জনগনকে প্রতারণা করা। জনগনের প্রতি জুলুম করা।
(১৭) অহংকার করা, দাম্ভিকতা প্রকাশ করা, ঔদ্ধতা দেখানো।
(১৮) মদ পান করা বা নেশা জাতীয় কিছু খাওয়া বা পান করা। মদ বা নেশা জাতীয় কিছু তৈরীতে সংশ্লিষ্ট হওয়া।
(১৯)জুয়া-হাউজি ইত্যাদিতে লিপ্ত হওয়া।
(২০) কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া।
(২১)সতী-সাধ্বী মু‘মিন নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করা (২২)অন্যের মাল বা সম্পদ চুরি করা।
(২৩)ডাকাতি, রাহাজানি, অপহরণে লিপ্ত হওয়া।
(২৪) গনীমতের মাল আত্মসাৎ করা।
(২৫)মিথ্যা কথা বলা
(২৬)মিথ্যা শপথ করা বা মিথ্যা কসম খেয়ে পন্য বিক্রী করা। ভেজাল পণ্য বিক্রয় করা। আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা
(২৭) কারো প্রতি জুলুম-অত্যাচার করা বা জুলুমে সহায়তা করা।
(২৮)অবৈধ পথে অর্থ উপার্জন করা। ঘুষ দেয়া বা নেয়া (২৯)হারাম খাদ্য গ্রহন করা।
(৩০) আত্মহত্যা করা।
(৩১)চাঁদাবাজি করা বা অন্যায়ভাবে জোরপূর্বক কিছু আদায় করা।
(৩২)বিচারক কর্তৃক অন্যায়ভাবে বিচার করা। বিচারকার্যে সত্য ও ন্যায়ের পথে না থাকা।
(৩৩)পুরুষের জন্য মহিলার আকৃতি গ্রহণ করা বা মহিলার পোষাক পরিধান করা এবং মহিলার জন্য পুরুষের আকৃতি গ্রহণ করা বা পুরুষের পোষাক পরিধান করা।
(৩৪) শরীয়ত অনুযায়ী পর্দা মেনে না চলা।
(৩৫) পরিবারবর্গের যে কোন অশ্লীল কাজকে প্রশয় দেয়া। (৩৬)তালাক প্রাপ্ত নারীকে হিলা করা।
(৩৭) প্রস্রাবের ছিটা থেকে পবিত্র না হওয়া।
(৩৮) রিয়া বা লোক দেখানো এবাদত করা।
(৩৯) আমানতের খিয়ানত করা।
(৪০)দান/উপকার করে খোটা দান করা।
(৪১)তকদীর অবিশ্বাস করা বা অস্বীকার করা।
(৪২)প্রতিবেশীকে কষ্ট দেয়া
(৪৩)মানুষের গোপন কথা চুপিসারে শ্রবন করা। ।
(৪৪)চুগলখোরি করা (ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা আরেকজনের নিকট লাগোনো)
(৪৫) কোন মুমিনকে অভিসম্পাত করা।
(৪৬) ওয়াদা করে তা ভঙ্গ করা।
(৪৭)গণকের কাছে ধর্না দেয়া বা গণকের কাছে অদৃশ্যের খবর জানতে চাওয়া বা তা বিশ্বাস করা।
(৪৮)অদৃশ্যের খবর জানার দাবী করা
(৪৯)রাসূল (সা:)এর নামে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করা
(৫০)মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করা।
(৫১)মানুষ বা যে কোন প্রানীর ছবি আঁকা।
(৫২) স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের অধিকার খর্ব করা। স্বামীর শরীয়ত সম্মত আদেশে স্ত্রীর অবাধ্য হওয়া। (৫৩)মানুষের বংশ মর্যাদায় আঘাত হানা।
(৫৪)মৃতের উদ্দেশ্যে উচ্চস্বরে ক্রন্দন করা।
(৫৫)ঘরের দেয়ালে অথবা কাপড়ে বা ক্যালেন্ডারে জীব-জন্তুর ছবি রাখা।
(৫৬)মুসলিম সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা।
(৫৭)কোন মুসলিমকে গালি দেয়া, কষ্ট দেয়া অথবা তার সাথে ঝগড়া বা লড়াইয়ে লিপ্ত হওয়া।
(৫৮) দাস-দাসী, দুর্বল শ্রেনীর মানুষ এবং জীবজন্তুর প্রতি নিষ্ঠুর আচরন করা।
(৫৯) অহংকারবশত টাখনুর নীচে পোষাক পরিধান করা। (৬০)আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে পশু জবেহ করা।
(৬১)মাপে বা ওজনে কম দেয়া।
(৬২) কোন অপরাধীকে আশ্রয় দান করা।
(৬৩)ঝগড়া-বিবাদে অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করা
(৬৪)গীবত তথা কারো অসাক্ষাতে তাঁর দোষ চর্চা করা।
(৬৫)পুরুষের রেশমি পোশাক এবং স্বর্ণ ও রৌপ্য পরিধান করা।
(৬৬) মনিবের কাছ থেকে গোলামের পলায়ন।
(৬৭)জমিনের সীমানা পরিবর্তন করা বা পরের জমি জবর দখল করা।
(৬৮) পিতা ব্যতীত অন্য কাউকে পিতৃরূপে স্বীকৃতি দেয়া।
(৬৯)তর্ক-বিতর্কের মাধ্যমে সত্যের বিরোধীতা করা।
(৭০)পথিককে নিজের কাছে অতিরিক্ত পানি থাকার পরেও না দেয়া।
(৭১) সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে মুখ মণ্ডলের চুল তুলে ফেলা বা ভ্রু চিকন করা। পরচুলা ব্যবহার করা। সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে দাঁত চিকন করা।
(৭২) চুল বা দাড়িতে মেহেদী ব্যাতীত কালো বা অন্য কোন রঙ লাগানো।
(৭৩)বিপরীত লিঙ্গের প্রতি কামনার দৃষ্টিতে তাকানো।
(৭৪) আল্লাহর আযাব-গযব সম্পর্কে উদাসীন থাকা।
(৭৫) আল্লহর রহমত হতে নিরাশ হওয়া।
(৭৬) বিনা ওযরে জুম্মা ও জামায়াত ত্যাগ করা।
(৭৭) কোন প্রকার ক্ষতিকর অসিয়ত করা।
(৭৮) ধোকাবাজি বা প্রতারনা করা। বিশ্বাস ঘাতকতা করা।
(৭৯) কোন মুসলমানের গোপনীয় বিষয় অন্যের কাছে প্রকাশ করা।
(৮০)সাহাবী (রাঃ)-দের কাউকে গালি দেয়া।
(৮১)কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা। কবরে বা মাজারে সিজদা করা।
(৮২)মুসলিম শাসকের সাথে কৃত বাইআত বা আনুগত্যের শপথ ভঙ্গ করা।
(৮৩)স্ত্রীর পায়ু পথে যৌন ক্রিয়া করা।
(৮৪) ঋতুকালীন স্ত্রী সহবাস করা।
(৮৪)অস্ত্র দ্বারা ভয় দেখানো বা তা দ্বারা কাউকে ইঙ্গিত করা।
(৮৫)নামাযরত অবস্থায় মুসল্লির সামনে দিয়ে গমন করা।
(৮৬) ভ্রান্ত মতবাদ জাহেলী রীতিনীতি অথবা বিদআতের প্রতি আহবান করা।
(৮৭) মহিলাদের সুগন্ধি লাগিয়ে বাহিরে বের হওয়া।
(৮৮) মুহরিম ছাড়া মহিলাদের সফর।
(৮৯)বিনা প্রয়োজনে তালাক চাওয়া।
(৯০) শ্রমিকের পাওনা বা মজুরী পরিশোধ না করা। মজুরী কম দেয়া।
(৯১)বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি করা।
(৯২)ঋণ পরিশোধ না করা।
(৯৩)গান-বাজনা শ্রবন করা।
(৯৪)স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জনসম্মুখে বা অন্যের কাছে প্রকাশ করা।
(৯৫)অনুমতী ব্যতীত অন্যের ঘরে প্রবেশ করা।
(৯৬) মহিলাদের পাতলা কাপড় পরিধান করা।
(৯৭)স্বর্ণ বা রৌপ্যের তৈরি পাত্র ব্যবহার করা।
(৯৮)স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অবদান অস্বীকার করা।
(৯৯) আল্লাহর উপর ভরসা না করে তাবিজ-কবজ, রিং, সুতা ইত্যাদির উপর ভরসা করা।
(১০০)দুনিয়া কামানোর উদ্দেশ্যে দীনী ইলম অর্জন করা। কোন ইলম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জানা সত্যেও তা গোপন করা
জয়নুল আবেদীন, সম্পাদক, সময় সংবাদ লাইভ