সময় সংবাদ রিপোর্ট : বেঁচে থাকার জন্য খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। জান্নাতেও আল্লাহ পাক বান্দার জন্য খাবারের ব্যবস্থা রেখেছেন। পরিমিত সুষম খাদ্য দেহকে সুস্থ সবল রাখতে সাহায্য করে। মহান আল্লাহ পাক বলেন, তোমরা খাও ও পান করো কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না (সূরা আল আরাফ-৩১)।
কোনো কিছুই অতিরিক্ত ভালো নয়। খাবার গ্রহণও তার ব্যতিক্রম নয়। নিম্নে পরিমিত ও কম খাবার প্রসঙ্গে ইসলাম ও বিজ্ঞান কী বলে সে সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক।
বেশি খাবার গ্রহণে যেসব রোগব্যাধি সৃষ্টি হয় প্রফেসর রিচার বার্ড তার একটি তালিকা করেছেন-
মস্তিষ্কের ব্যাধি (Brain Diseases), চক্ষু রোগ (Eyes Diseases), জিহ্বা ও গলার রোগ (E. N.T. Diseases), বক্ষ ও ফুসফুসের ব্যাধি (Chest and lungs Diseases), হৃদরোগ (Heart and Valves Diseases), যকৃত ও পিত্তের রোগ (Liver And Gall bladder Diseases), ডায়াবেটিস (Diabetec), মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণ (Brain Hemorrhage), উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), দুশ্চিন্তাগ্রস্ততা (Depression), অর্ধাঙ্গ রোগ (Paraliysis), মনস্তাত্ত্বিক রোগ (psychological Diseases)।
অধিক খাবার গ্রহণে সৃষ্ট অসুবিধাগুলো- শরীর ভারী হওয়া, কাজে অলসতা আসা, বদহজম হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হওয়া, মেদ ভুঁড়ি হওয়া, গ্যাসট্রাইটিস, বুক জ্বালা, পেটে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, মস্তিষ্কে অলসতা আসা, স্থূলতার দরুন চলাফিরায় সমস্যা হওয়া ও মানুষ দ্বারা তিরস্কৃত হওয়া, শারীরিক ফিটনেসের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়া।
প্রখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি রহ: বলেন, ধীরে ধীরে কম খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন। যে ব্যক্তি অধিক খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, সে যদি হঠাৎ করে খাবার কমিয়ে দেয় তাহলে তা তার সহ্য হবে না, দুর্বলতা সৃষ্টি হবে ও কষ্ট বৃদ্ধি পাবে। (ইহইয়াউল উলুম)
হজরত হাসান বসরি রহ: বলেন, মুসলমানের দৃষ্টান্ত হলো বকরি ছানার মতো যার জন্য এক মুষ্টি পুরনো খেজুর, এক মুষ্টি ছাতু এক ঢোক পানিই যথেষ্ট (ফাজায়েলে সাদাকাত)।
একজন দার্শনিকের কাছে যখন হুজুরে আকরাম সা:-এর নির্দেশনা শোনানো হলো তখন সে বলতে লাগল- এর চেয়ে উত্তম ও শক্তিশালী কথা আমি আজ পর্যন্ত শুনিনি।
হজরত সালমান ফারসি রা:-কে কেউ বলল দুনিয়ার কোষাগার তো আপনার নিয়ন্ত্রণে তার পরও আপনি অনাহারে থাকেন কেন? তিনি বললেন, নিজের উদরপূর্তি করে ক্ষুধার্তদের যেন ভুলে না যাই, এ জন্য ক্ষুধার্ত থাকি।
এ ছাড়া ক্ষুধার্ত থাকলে কিয়ামতের দিনের ভুক পিয়াসের কথা মনে হয়, আল্লাহর শাস্তির ভয়ও সৃষ্টি হয়।
প্রফেসর ব্রাউন নিজ lectures of prof.Browne তার গ্রন্থে লিখেছেন, হায়েছ ফালদা আল সাকাফি নামক এক হেকিম রাসূল সা:-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করলেন যে, আমার কাছে কোনো রোগী আসে না কেন? এদের কোনো রোগব্যাধি হয় না? রাসূল সা: বললেন, এরা তখন খাবার খায় যখন তীব্র ক্ষুধা পায় আর ক্ষুধা অবশিষ্ট থাকতেই খাবার ত্যাগ করে।
বাদশাহ হারুনুর রশিদ একবার চারজন ডাক্তারকে একত্র করলেন। তার মধ্যে একজন ছিল হিন্দুস্থানি, দ্বিতীয়জন রোমীয়, তৃতীয়জন ইরাকি, চতুর্থজন সওয়াদি- তারপর চারজনকেই সম্বোধন করে বললেন, আপনারা এমন একটি ওষুধের নাম বলুন, যা কোনো কিছুর জন্যই ক্ষতিকর নয়। হিন্দুস্তানি চিকিৎসক বললেন, আমার মতে সেই জিনিস হলো হালিলাহ সিয়াহ বা কাল হালিলাহ। ইরাকি ডাক্তার বললেন, আমার মতে সেই জিনিস হলো হুব্বুর রালাদ। রোমীয় ডাক্তার বললেন, ওষুধ কোনো কিছুর জন্য ক্ষতিকর নয় তা হলো গরম পানি। সর্বশেষ সাওয়াদি ডাক্তার বললেন, উপরিউক্ত সব মন্তব্য ভুল। কেননা, কাল হালিলাহ পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি করে। আর গরম পানি পাকস্থলীকে করে দেয় শিথিল। তারপর সব হাকিম মিলে বললেন, তাহলে এবার আপনি বলুন, যে ওষুধটা কোনো কিছুর জন্যই ক্ষতিকর নয়। তখন সাওয়াদি হাকিম বললেন, তা হলো অধিক আগ্রহ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত আহার না করা ও খানার কিছু চাহিদা থাকা অবস্থায় খানা ত্যাগ করা- এ কথার ওপর সব ডাক্তার একমত পোষণ করেন।
রাসূল সা: বলেছেন, ‘পেটের এক-তৃতীয়াংশ আহারের জন্য এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য এক তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য’ (মযাকুল আরেফিন)।
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘দু’জনের খাবার তিনজনের জন্য এবং তিনজনের খাবার চারজনের জন্য যথেষ্ট।’ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় জাবের রা: থেকে বর্ণিত- নবী সা: বলেছেন, ‘একজনের খাবার দু’জনের জন্য, দু’জনের খাবার চারজনের জন্য এবং চারজনের খাবার আটজনের জন্য যথেষ্ট’ (বুখারি-৫৩৯২, মুসলিম-২০৫৮, তিরমিজি-১৮২০, আহমাদ : ৭২৭৮, ৯০২৪)।
আতিয়্যাহ বিন আমির আল-জুহানি (মাকবুল) থেকে বর্ণিত- আমি সালমান রা:-এর কাছে শুনেছি, তাকে আহার করতে পীড়াপীড়ি করা হলে তিনি বলতেন, আমার জন্য যথেষ্ট যে আমি রাসূল সা:-কে বলতে শুনেছি, দুনিয়াতে যেসব লোক ভূরিভোজ করে, তারাই হবে কিয়ামতের দিন অধিক ক্ষুধার্ত (ইবনে মাজাহ-৩৩৫১)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘কাফির সাত আঁতে আহার করে অর্থাৎ বেশি পরিমাণ খায়, আর মুমিন এক আঁতে আহার করে অর্থাৎ কম খায়’ (বুখারি-৫৩৯৩)।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া