Header Border

ঢাকা, রবিবার, ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শীতকাল) ২৬.৪৮°সে
শিরোনাম

করোনা মহামারির কারণে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় ভেঙে যাচ্ছে সাপ্লাই চেইন

আলমগীর পারভেজ : করোনাভাইরাস মহামারির কারণে  শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় ভেঙে যাচ্ছে সাপ্লাই চেইন।

গত ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে মোট ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলারের (৩৮ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন) পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। মোট রপ্তানি আয়ের ৮১ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে।

করোনাভাইরাস মহামারির দেড় বছর পেরোতে চললেও বিধি-নিষেধের কোনো পর্যায়ে কারখানা বন্ধ রাখতে হয়নি মালিকদের। কিন্তু এবার সংক্রমণের ভয়াবহতম পরিস্থিতির কারণে কারখানা বন্ধ রাখায় ভরা মৌসুমে রপ্তানির পণ্য যথাসময়ে পাঠাতে পারা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। তারা বলছেন, শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকায় ভেঙে যাচ্ছে সাপ্লাই চেইন। এদিকে কাজ ছাড়া পোশাক শ্রমিকদের বেতন দেয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক জোরালো হচ্ছে। কোনো কোনো পোশাক কারখানায় অর্ডারের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও লকডাউনে কারখানা বন্ধ থাকায় অর্ডার বাতিলের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সার্বিক দিক বিবেচনায় নিয়ে আবারও শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকপক্ষ।

গত বছরের শুরু থেকে চলা মহামারির কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমায় ক্রয় আদেশের দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল দেশের রপ্তানিমুখী প্রধান খাত তৈরি পোশাক। সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয় এবং ৫ আগস্টের পরও কারখানা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে এ খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। তাই সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলা রাখার প্রস্তাবও দিয়েছেন মালিকরা।

ঈদের পর ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষের শুরু থেকেই শিল্প-কারখানা লকডাউনের বাইরে রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন শিল্প মালিকরা। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্প-কারখানা খুলে দিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন মালিকরা। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এবং এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর নেতৃত্বে দলটি আলোচনায় অংশ নেয়। এছাড়া, আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন বিকেএমইএ’র সভাপতি সেলিম ওসমান, এফবিসিসিআই সভাপতি জসীম উদ্দীন, বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান এবং দুই সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম এবং খন্দকার রফিকুল ইসলাম। ডিসিসিআই রেজওয়ান রহমান এবং বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎ শেষে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকলে সমস্যা হচ্ছে সাপ্লাই চেইনটা ভেঙে যাচ্ছে। তাই আমরা মনে করি ইন্ডাস্ট্রি খুলে দেয়া দরকার। সেজন্য সেটা বলতে এসেছি এবং এটি দাবি জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অনেক দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছি। এই সময় যদি লকডাউনে সবকিছু বন্ধ রাখি তাহলে বাজার হারানোর একটা শঙ্কা থাকবে।

বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলাম। যে লকডাউন চলছে তা থেকে সব ধরনের শিল্প-কারখানা যেন আওতার বাইরে রাখা হয়, সে অনুরোধ করতে এসেছি। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত দেবেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব আশ্বস্ত করেছেন বলেও জানান তিনি। শুধু গার্মেন্টস নয়, সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতির জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আবারো অনুরোধ করেছি, এটাকে যেন লকডাউনের বাইরে রাখা হয়। সবকিছু বিচার বিবেচনা করে আমরা এ অনুরোধ জানিয়েছি। গত ১৮ জুলাই থেকে শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এ পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিককে টিকা দেয়া হয়েছে। যারা ফ্যাক্টরির আশেপাশে থাকেন তারা টিকা দিতে নিরাপদ অনুভব করেন, গ্রামে থাকলে টিকা দিতে চান না।

বিজিএমইএ সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো আমাদের প্রধান বাজারগুলো ইতোমধ্যে তাদের দোকানপাট খুলে দেওয়ায় পোশাক প্রস্তুতকারীরা সময়মতো পণ্য পাঠানো নিয়ে আমরা চাপের মুখে আছি। আমরা সরকারকে বিষয়টি বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছি।

এদিকে চলমান লকডাউনের কারখানা বন্ধ থাকায় ত্রিমুখী সমস্যায় পড়েছে পোশাক শিল্প। এছাড়া একদিকে সংক্রমণের বৃদ্ধির আশঙ্কায় সরকার কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বজায় রাখতে চাইছে, অন্যদিকে আইন অনুসারে কারখানা মালিকদের শ্রমিকদের মূল বেতনের অর্ধেকও দিতে হবে। আবার লকডাউনের কারণে বন্দরে অচলাবস্থা থাকায় বিদেশি ক্রেতাদের কার্যাদেশ বিমানে করে বা এয়ারফ্রেইটারে পাঠাতে হতে পারে, এতে খরচও বাড়বে, কমবে মুনাফা। সঙ্গে কার্যাদেশ হারানোর ঝুঁকিও নিতে হবে তাদের। তারমধ্যেই আবার নির্দিষ্ট সময়ে পুরো বেতন না দিলে আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন শ্রমিক নেতারা। এ পরিস্থিতিতে পোশাক শিল্প মালিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, বেতনের জন্য শ্রমিক অসন্তোষ, কার্যাদেশ এদেশ থেকে অন্যখানে চলে যাওয়া ঠেকানো এবং এয়ারফ্রেইট খরচসহ অদৃশ্য অনেক সমস্যা সমাধানে কারখানা খুলে দেওয়াই একমাত্র সমাধান হবে।

জানা গেছে, কাজ ছাড়া শ্রমিকদের বেতন দেয়ার সামর্থ্য না থাকায় পোশাক শিল্প মালিকদের একটি গ্রুপ এখাতের উদ্যোক্তাদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ’কে কারখানা খুলে দেয়ার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন- বিকেএমইএ’র নেতারাও চাপের মুখে পড়েছেন। কারণ বেশ কিছু কারখানার মালিক সংগঠনকে কাজ ছাড়া বেতন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। কিছু উদ্যোক্তা নোটিশ দিয়ে জানিয়েছেন যে, ঈদুল আহার ছুটি মাত্র সাত দিনের, অর্থাৎ গত ২৬ জুলাই পর্যন্ত হিসাব করা হবে। আর এরমধ্যে সরকার কারখানা খুলে দেওয়া সিদ্ধান্ত না নিলে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলমান লকডাউনের অবশিষ্ট দিনগুলি সাধারণ ছুটি হিসেবে গণ্য করা হবে। আবার ৫ আগস্টের পর সরকার কারখানা সচল করার সিদ্ধান্ত নিলে, শ্রমিকদের মাসের প্রথম সাত কার্যদিবসের বেতন আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলে আসবে। তবে পোশাক শিল্পের উভয় সংগঠনই জানিয়েছে তাদের সদস্যরা বিদ্যমান বিধিমালা মেনে চলবে এবং আগামী ১ আগস্ট থেকে কারখানা খুলে দিতে তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনাও করছে।

বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান জানিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে কারখানা খুলে দিতে আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি। নাহলে অনেক কারখানা নিয়মিত মজুরি ও ছুটির ব্যাপারে শ্রম আইনের আশ্রয় নিতে পারে। সরকার ১ আগস্ট থেকে পুনরায় কারখানা চালুর অনুমতি দিলে সংগঠনটি অতিরিক্ত ছুটি হিসাবে জুলাইয়ের শেষ চার-পাঁচ দিন বিবেচনা করার জন্য নিজ সদস্যদের অনুরোধ করবে।

এদিকে শ্রমিক নেতারা বলছেন, ১৪ দিনের লকডাউনের পরও যদি সরকার কারখানা চালু করতে না দেয়, তাহলে শ্রম আইনের আওতায় মালিকেরা মজুরি কর্তন ও দেরিতে বেতন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা কঠোর আন্দোলন করে রুখে দেওয়া হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলো জানান, গেল বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে শ্রমিকেরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তাই আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই, কারখানা মালিকেরা এবার যেন লকডাউনের সুযোগ নিয়ে তা আরেকবার পুনরাবৃত্তি করার সুযোগ না পায়। তারা বলছেন, লে-অফের মাধ্যমে শ্রমিকের পাওনা কমিয়ে দেওয়া আমরা মেনে নেব না। রাষ্ট্র কারখানা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে, এখন কারখানা মালিকরা অক্ষম হলে, দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ- এর প্রতিষ্ঠাতা ও মুখ্য নির্বাহী মোস্তাফিজ উদ্দিন জানান, সরকার কারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তা শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ, অন্য দেশে অর্ডার চলে যাওয়া ঠেকানো এবং এয়ারফ্রেইট খরচ কমানোর মতো অনেক সমস্যার সমাধান করবে।

এদিকে কারখানা মালিকরা বলছেন, গত বছরের শুরু থেকে চলা মহামারির কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমায় ক্রয় আদেশের দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছিল দেশের রপ্তানিমুখী প্রধান খাত। সংক্রমণ পরিস্থিতি যদি আরও খারাপ হয় এবং ৫ আগস্টের পরও কারখানা বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে তারা বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন। সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে তৈরি পোশাক কারখানার কর্মীদের গণটিকাদানের পাশাপাশি শেষ পর্যায়ে থাকা ক্রয় আদেশের কাজগুলো সারতে সীমিত সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কারখানা খোলার প্রস্তাব রেখেছেন মালিকরা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুন, জুলাই ও অগাস্ট মাস হচ্ছে পোশাক রপ্তানির ‘পিক টাইম’। সারা বছরের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ রপ্তানি হয় এই সময়ে। পশ্চিমের দেশগুলোতে ক্রিসমাস ও উইন্টার সিজনের অর্ডারগুলো এখন শিপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। তাই এই পরিস্থিতিতে পণ্য দিতে না পারলে তারা বিলম্বে এই পণ্যগুলো নিয়ে বিক্রি করতে পারবে না। যথাসময়ে জাহাজে পণ্য পাঠাতে না পারলে পরে কার্গো বিমানে পাঠাতে পরিবহন ব্যয় ৩/৪ গুণ বেড়ে যাবে। শ্রমিকদের বেতন দিতে হবে, ব্যাংক ঋণ দিতে হবে। সবমিলে আমরা উৎকণ্ঠায় আছি।

রফতানিকারকরা বলছেন, কারখানাগুলোর সাপ্লাই চেইনে এমন অনেক অর্ডারও রয়েছে যেগুলোর প্রায় ৯০ শতাশ কাজ হয়ে গেছে; শুধু ফিনিশিং বা কার্টনিং বা প্যাকেজিং করলেই শিপমেন্ট দেয়া সম্ভব। লকডাউন দীর্ঘায়িত হলে স্বল্প সংখ্যক শ্রমিক দিয়ে এই কাজগুলো সম্পূর্ণ করার কথা ভাবতে হবে। ৩০ জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের একজনের শিপমেন্ট দেওয়ার কথা। এই সময়ের মধ্যে দিতে না পারলে অর্ডার বাতিল করার হুমকি দিচ্ছেন ক্রেতা। অথচ তার কাজের ৮০ শতাংশই কমপ্লিট।

 

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি ঘোষণা ছাত্রদলের
২০তম বিসিএস ফোরামের নতুন কমিটি : আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন,সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ্ আরেফ
আব্দুল্লাহ আরেফের অভিযানে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের ক্যাশিয়ার রুহুল আমিন আটক!
অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর
হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা
চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি

আরও খবর