*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার টুয়েলভ পর্বেও হার দিয়ে শুরু করল বাংলাদেশ। গতকাল বাংলাদেশ শ্রীলংকার কাছে হেরেছে ৫ উইকেটে। বোলারদের ব্যর্থতায় গতকাল ম্যাচ হেরেছে টাইগাররা। শ্রীলংকার বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৪ উইকেটে বাংলাদেশ করেছিল ১৭১ রান। ম্যাচ জয়ের জন্য স্কোরটা যথেষ্টই ছিল। তবে বোলার আর ফিল্ডারদের কারণে শেষ পর্যন্ত ম্যাচ হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। বিশেষ করে লিটন দাসের দুটি ক্যাচ মিসের কারণে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। শুধু লিটন দাসের ক্যাচ মিসই নয়, সঠিক সময় সঠিক বোলারদের ব্যবহার করতে পারেননি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। সেই সাথে বোলারদের দায়িত্বহীন বোলিং আর অতিরিক্ত রান দেয়া ম্যাচ হারার বড় কারণ। তাইতো ১৭২ রানের বড় টার্গেট পেয়েও ৫ উইকেট আর ৭ বল হাতে রেখে ৫ উইকেটে প্রথম ম্যাচেই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে শ্রীলংকা। জয়ের জন্য শ্রীলংকার সামনে ১৭২ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। আবার ব্যাট করতে নেমে দলীয় ২ রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়েছিল লংকানরা। ব্যাট করতে নেমে ওপেনার কুসাল পেরেরা মাত্র এক রানে নাসুম আহমদের বলে বোল্ড হন। শ্রীলংকার বিপক্ষে ইনিংসের চতুর্থ বলেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন নাসুম আহমেদ। দারুণ এক ডেলিভারিতে স্ট্যাম্প ভাঙেন ওপেনার কুশল পেরেরার। ক্রস খেলতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে লঙ্কান ওপেনার করেন ১ রান। তবে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দলটি পৌঁছে যায় ৭১ রানে। অবশ্য ৭৯ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে একটা সময় জয়ের সুবাসও পাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি টাইগারদের। কারণ জোড়া ক্যাচ মিসের পরই ম্যাচ ঘুরে যায় শ্রীলংকার দিকে। শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যান চারিথ আসালাঙ্কা আর ভানুকা রাজাপাকসেই জয় এনে দিয়েছে শ্রীলংকাকে। শুরুর ধাক্কা সামলে পাথুম নিশাঙ্কা আর চারিথ আসালাঙ্কা দলকে এগিয়ে নিতে খাকে। ফলে দ্বিতীয় উইকেটে তাদের ৪৫ বলে ৬৯ রানের ঝড়ো জুটিতে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। অবশ্য নবম ওভারে সাকিব জোড়া আঘাতে টাইগারদের ম্যাচে ফেরান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার চার বলের ব্যবধানে তুলে নেন ২ উইকেট। ওভারের প্রথম বলে সাকিব বোল্ড করেন পাথুম নিশাঙ্কাকে। তিনি করেন ২৪ রান। সাকিবের চতুর্থ বলে রানের খাতা খোলার আগেই উইকেট হারান আভিষ্কা ফার্নান্ডো। এছাড়া সাইফউদ্দিনের বলে তুলে মারতে গিয়ে ৬ রানে উইকেট দেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। ফলে দশম ওভারে ৭৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপেই ছিল শ্রীলংকা। কিন্তু ইনিংসের ১২.৩ ওভারে আফিফ হোসেনের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে রাজাপাকসের ক্যাচ ফেলেন লিটন। ১৪ রান নিয়ে ব্যাট করছিলেন তিনি। এরপর মোস্তফিজুর রহমানের করা ১৪.৩ ওভারে ডিপ কভারে আসালাঙ্কার ক্যাচও ধরতে পারেননি লিটন। আসালাঙ্কা তখন ৬৩ রানে ব্যাট করছিলেন। এই দুই ক্যাচ মিসের কারনেই ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলংকা। জীবন পেয়ে আসালাঙ্কা আর রাজাপাকসে ৫২ বলে ৮৬ রানের জুটি গড়ে তোলেন। শেষ পর্যন্ত ১৯তম ওভারে নাসুম রাজাপাকসেকে ৫৩ রানে বোল্ড করলেও ম্যাচ হাত ছাড়া হয়ে যায় অনেক আগেই। আর ৪৯ বলে ৮০ রানে অপরাজিত ইনিংস খেলে আসালাঙ্কা ম্যাচ জিতেই মাঠ ছাড়েন। জয়ের জন্য শ্রীলংকা ১৮.৫ বলে ৫ উইকেটে ১৭২ রান করে ম্যাচ জিতে ৫ উইকেটে। বাংলাদেশের পক্ষে সাকিব আর নাসুম নেন দুটি করে উইকেট। সাইফুদ্দিন নেন একটি উইকেট।
এরআগে, শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও মুশফিকুর রহিমের জোড়া হাফ-সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৪ উইকেটে ১৭১ রান করে বাংলাদেশ। নাইম ৬২ রানে আউট হলেও মুশফিক ৫৭ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন। ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাস শুরুটা করেছে ভালোই। দুই ওপেনারের সাবধানি ব্যাটিংয়ে প্রথম ৫ ওভারে ৩৮ রান করে বাংলাদেশ। তবে ষষ্ঠ ওভারে লিটনকে আউট করে এই জুটি ভাঙ্গেন শ্রীলংকার পেসার লাহিরু কুমারা। ফলে দলীয় ৪০ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মিড-অফ দিয়ে বাউন্ডারি মারার চেস্টা করেন লিটন। কিন্তু সেটি তালুবন্দী করেন শ্রীলংকার অধিনায়ক দাসুন শানাকা। ফলে ব্যক্তিগত ১৬ বলে ১৬ রান করে মাঠ ছাড়েন ওপেনার লিটন। লিটনের বিদায়ে নাইমের সঙ্গে জুটি করে মোটেও ভালো করেননি সাকিব আল হাসান। ৭ বলে মাত্র ১০ রান করে আউট হন সাকিব। পেসার চামিকা করুনারত্নে সরাসরি বোল্ড করে ফেরান সাকিবকে। ফলে ৫৬ রানে বাংলাদেশ হারায় দ্বিতীয় উইকেট। সাকিব আউট হলেও নাইমের সাথে জুটি করে দলকে ভালোই এগিয়ে নেন মুশফিকুর রহিম। মুশফিকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রানের গতি ধরে রাখার চেষ্টায় ছিলেন নাইম। আর ৪৪ বলে নিজের হাফসেঞ্চুরিও তুলে নেন এই ওপেনার। এবারের আসরের এটা তার দ্বিতীয় ফিফটি। দলীয় ১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেট ১২৯ রানে। তবে নাইম-মুশফিক দুই সেট ব্যাটসম্যান থাকায় বড় স্কোরের আশা ছিল টাইগারদের। কিন্তু ১২৯ রানে বাংলাদেশ হারায় নাইমের উইকেট। ফার্নান্দোকে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন নাইম। ৫২ বলে ৬ চারে ৬২ রান করে আউট হন নাইম। আউট হওয়ার আগে মুশফিকের সাথে তৃতীয় উইকেটে ৫১ বলে ৭৩ রান যোগ করেন নাইম। মুশফিকের সাথে ব্যাট করতে নেমে ভালো করতে পারেননি আফিফ হোসেনও। মাত্র ৭ রান করে আউট হন তিনি। তবে ১৯তম ওভারের প্রথম বলে নিজের হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। ৩২ বলে আসে তার হাফ- সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম আর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটা তার ষষ্ঠ হাফ-সেঞ্চুরি। আফিফের বিদায়ের পর শেষ নয় বলে ২১ রান যোগ করেন মুশফিক ও অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। ফলে ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭১ রানের বড় স্কোর গড়ে বাংলাদেশ। মুশফিক ৩৭ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় অপরাজিত ৫৭ রান করেন। ২টি চারে ৫ বলে অপরাজিত ১০ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। শ্রীলংকার করুনারত্নে, ফার্নান্দো ও কুমারা ১টি করে উইকেট নেন।