সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার অনুমতি দেওয়ার আইনগত এখতিয়ার সরকারের আছে বলে মনে করে বিএনপি। ফৌজদারী দণ্ডবিধির ৮৯৮ এর ৪০১ ধারায় সরকারকে এই এখতিয়ার দেওয়া আছে বলে এ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান।
বিদেশে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার আইনগত দিক তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ফৌজদারী দণ্ডবিধি ৮৯৮ এর ৪০১ ধারায় শর্তহীন অথবা শর্তযুক্ত ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আদালতের কোনো আদেশ থাকলেও তাও সরকার অনুমতি দিতে পারে।’
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অনুমতি না দেওয়ার পর আইনিগত ও রাজনৈতিক দৃষ্টি কোনো থেকে ব্যাখ্যা দিয়ে গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা মির্জা ফখরুল। খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারের ঘোষিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনারা (সরকার) বলেছেন, অনুমতি দিতে পারছেন না। কেন পারছেন না যে যুক্তিগুলো দিলেন, সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি। তারা বলেছেন যে, সাজাপ্রাপ্তদের বিদেশে পাঠানোর নজির নেই। এটা তারা ভুল ব্যাখ্যা দিয়েছেন, জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন।’
কয়েকটি নজির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১৯৭৯ সালে আমাদের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী আসম আবদুর রব জেলে ছিলেন। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব তাকে এই আইনে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। এরপরে আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন এম মনসুর আলী সাহেবের ছেলে মোহাম্মদ নাসিম সাহেব ২০০৮ সালে বর্তমান সরকার সাজাপ্রাপ্ত উনি তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপর আমি নাম বলব না, দুই সহোদর ভাই অত্যন্ত উচ্চপদস্ত প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তার ভাই, তারা কিন্তু এই ৪০১ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তাদেরকে মাফ করে দিয়ে বাইরে পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং কেন এই সমস্ত খোঁড়া যুক্তি, সোজা বলেন যে, আমরা দেবো না।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বলার মতো তো বদান্যতা আপনাদের নাই, সেই বড় যে হৃদয় সেটা আপনাদের নাই। শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের এটা ছিল। থাকলে বেগম খালেদা জিয়াকে অনেকদিন আগে আপনারা ছেড়ে দিতেন, রাজনীতি করতে দিতেন।’
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো ‘ক্রিটিক্যাল’ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এখনো ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে আছেন তার (খালেদা জিয়া)। যদিও আল্লাহর রহমতে অনেক ইম্প্রুভ করেছেন। এখন তিনি রুম এয়ারে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন অর্থাৎ রুমের মধ্যে তার অক্সিজেন লাগছে না। তার প্রেসার, টেম্পারেচার, অক্সিজেন যেটাকে স্যাচুরেশন বলে এগুলো এখন আপাততভাবে আল্লাহর হুকুমে কিছুটা নরম্যালের দিকে চলে এসছে। তার মূল কতগুলো বিষয় আছে যে বিষয়গুলো এখনো বিপদজনক অবস্থার মধ্যে আছে। তার কিডনির সমস্যা আছে, হার্টের সমস্যা আছে-এই নিয়ে ডাক্তাররা এখনো অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। আমরা দলের পক্ষ থেকে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ এভারকেয়ার হাসপাতাল তারা সর্বাত্মক আন্তরিক নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করছেন। তারা কোনো কিছু বাকি রাখছেন না এবং কি তারা বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ নিয়ে আসছেন প্রতিনিয়ত, দেশের বাইরেও তারা যোগাযোগ রাখছেন বড় বড় চিকিৎসকদের সঙ্গে, সেভাবে তারা এখানে চিকিৎসা করার চেষ্টা করেছেন।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘একমাত্র এভারকেয়ার হাসপাতাল সবচেয়ে বেশি টেকনোলজিক্যাল দিক থেকে উন্নত। তারপরেও এনাফ না। ওরা নিজেরাই মনে করে যে, অনেক লিমিটেশনস আছে। সেই লিমিটেশনগুলো দেখে তখন উনার পরিবার উনাকে বাইরে নেওয়ার আবেদন করেছিল।’
উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের আবেদনের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তারা (সরকার) এই আবেদন করার পরপর এমনভাবে কথা বললেন, সবাই আশাবাদী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু দুঃখজনকভাবে হঠাৎ করে বলে তাদের টোন বদলে গেল। কেন পারছেন না সে ব্যাপারে তারা যে যুক্তিগুলো দিলেন সেই যুক্তিগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য যুক্তি, খোঁড়া যুক্তি।’
সময় সংবাদ লাইভ।