সময় সংবাদ রিপোর্ট:সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে সাত মিনিটের মধ্যেই হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে তুরস্কের এক তদন্তকারী কর্মকর্তা। মধ্যপ্রাচ্যের অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকারে খাশোগির শেষ মুহুর্তের অডিও রেকর্ডিং সম্পূর্ণরূপে শুনেছেন বলে দাবি করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুর্কির ওই কর্মকর্তা। তিনি জানান, ‘ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটের জেনারেল অফিস থেকে খাশোগিকে টেনে হেঁচড়ে বের করে পড়ার ঘরের টেবিলে বসানো হয়। এ সময় তাকে নির্যাতনের আর্তনাদ যেন পশুত্বকে হার মানায়। পরে তাকে ওই কক্ষ থেকেও বের করে নেওয়া হয়। খাশোগিকে কোনো ধরনের জেরা করা হয়নি। তারা তাকে হত্যা করতে এসেছিল।’ তুর্কির ওই কর্মকর্তা জানান, ‘খাশোগির আর্তনাদ থমকে দাঁড়ায় যখন তাকে একটি অজানা পদার্থ দিয়ে ইনজেকশন দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ঘটনার দিন ইস্তানবুলে আসা ১৫ সৌদি নাগরিকের মধ্যে দেশটির সাধারণ নিরাপত্তা বিভাগের ফরেনসিক এভিডিয়েন্সের প্রধান সালাহ মুহাম্মদ আল-তৈবিগিও ছিলেন। তিনি খাশোগি জীবিত থাকা অবস্থায় তার শরীর টুকরো টুকরো করেন। কনস্যুলের পড়ার ঘরের একটি টেবিলেই এই নরহত্যা চালানো হয়। খাশোগির শরীর টুকরো করার সময় তৈবিগি কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শোনা অবস্থায় কাজটি করতে থাকেন এবং দলের অন্যান্য সদস্যদেরও তিনি গান শোনার পরামর্শ দেন। তৈবিগি বলেন, ‘আমি যখন এ কাজ করি তখন গান শুনি। আপনাদেরও তা-ই করা উচিত।’ তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তিন মিনিটের একটি অডিও দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ‘সাবাহ’ এর কাছে পৌঁছেছে। তা প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে বলে আরও জানান তুর্কি কর্মকর্তা। এর আগে তুর্কি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, গত ২ অক্টোবর খাশোগি গুম হওয়ার দিন ১৫ জন সৌদি নাগরিক ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছিল, তারাই খাশোগির নিখোঁজ ও সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। অন্ততপক্ষে তাদের কয়েকজনের সঙ্গে সৌদি সরকারের উচ্চপর্যায়ের সংযোগ রয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, খাশোগিকে যে কনস্যুলেটের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে সে ব্যাপারে তুর্কি কর্তৃপক্ষের কাছে অডিও ও ভিডিও প্রমাণ রয়েছে। খাশোগির সঙ্গে যার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেই হাতিস সেনগিজও দাবি করেছেন, তিনি খাশোগিকে কনস্যুলেট থেকে বের হতে দেখেননি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সৌদি অনুসন্ধানী সাংবাদিক জামাল খাশোগি গত সপ্তাহে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর আর বের হননি। সৌদি আরব অবশ্য বলছে, খাশোগি কনস্যুলেটে ভবন থেকে বের হয়ে গেছেন। তবে তুরস্কের পক্ষ থেকে এর প্রমাণ চাওয়া হলে তা সরবরাহে ব্যর্থ হয়েছে রিয়াদ। খাশোগি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই সৌদি আরবের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে তুমুল নিন্দার ঝড় শুরু হয়।