সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট:খুলনায় প্রতিদিনই বাড়ছে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু। সব শেষ গত শুক্রবার একদিনে করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে সাতজন। এসব পরিসংখ্যান খুলনার করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছে বলে মনে করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু করা হয় গত ২৩ মার্চ। ওইদিন থেকে গত শুক্রবার পর্যন্ত করোনা উপসর্গ নিয়ে এ ওয়ার্ডে মারা গেছে ৫১ জন। এর আগে আরো দুজনের উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়।
এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে গত শুক্রবার ৩৭৭টি নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে ১৪০ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে খুলনার বাসিন্দা ১৩৩ জন। বাকি সাতজনের মধ্যে একজন যশোর, দুজন নড়াইল, তিনজন বাগেরহাট ও একজন পিরোজপুরের।
খুমেক হাসপাতালের করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সার্বিক সমন্বয়কারী এবং খুলনা মেডিকেল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ এসব তথ্য সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, খুলনা জেলায় গতকাল পর্যন্ত মোট করোনা পজিটিভ হয়েছে ৮০০ জন। এর মধ্যে গত চারদিনে পজিটিভ ৩৪০ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছে ৯৪ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে ১০ জন।
খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এবং করোনা সাসপেকটেড আইসোলেশন ওয়ার্ড ও ফ্লু কর্নারের মুখপাত্র ডা. মিজানুর রহমান বলেন, গত শুক্রবার একদিনে করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন মহানগরীর খলিশপুর কাশিপুরের জরিনা বেগম (৬০), রূপসার খাজাডাঙ্গা এলাকার মোহাম্মদ আলী (৬০), নড়াইলের কালিয়ার কার্ত্তিক (৪০), যশোরের অভয়নগরের রুমা বেগম (৩৫), নগরীর ৫ নম্বর ঘাটের জামসেদ আলম (৬০), সোনাডাঙ্গার নাসিম আহমেদ (৬০) ও টুটপাড়ার ফিরোজ আহমেদ (৬৯)।
আরএমও বলেন, জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তারা সবাই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। গত ১৯ মার্চ খুমেক হাসপাতালে মোংলার বাবুল চৌধুরী নামের একজন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনিই খুলনার প্রথম করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি। তবে তার নমুনা পরীক্ষা করা হয়নি। ১৯ মার্চ নড়াইলের শেখ রবিউল ইসলাম নামে একজনের মৃত্যু হলে তারও নমুনা পরীক্ষা হয়নি। ২৬ মার্চ মারা যান নগরীর হেলাতলার মোস্তাহিদুর রহমান রুবেল। ঢাকাস্থ আইইডিসিআর থেকে তার নমুনা পরীক্ষা হয়। কিন্তু ফলাফল নেগেটিভ আসে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, মহানগরীতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এখানে গত শুক্রবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯৫ জন। এছাড়া রূপসায় ৫০ ও দীঘলিয়ায় ৩৬ জন আক্রান্ত হয়েছে। দাকোপে ২২, ফুলতলায় ১৮, তেরখাদায় ১৫, ডুমুরিয়ায় ১৪, পাইকগাছায় ১০ জন আক্রান্ত হয়েছে। মৃতদের মধ্যে খুলনা মহানগরে ৫, রূপসায় ৪ ও দীঘলিয়ায় একজন রয়েছে।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. সুজাত আহমেদ বলেন, খুলনায় মূলত ঈদ মার্কেট থেকেই করোনা ছড়িয়েছে বেশি। এছাড়া মানুষের সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক ব্যবহারে অনীহা, গাদাগাদি করে গণপরিবহনে চলাচল, পাড়া-মহল্লায় অবাধ আড্ডা করোনা পরিস্থিতিকে ভয়ঙ্কর করে তুলছে। এরই মধ্যে খুলনা মহানগরীসহ রূপসা ও দীঘলিয়ার মোট ১৪টি পয়েন্টকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে তা লকডাউনের সুপারিশ করা হয়েছে।
খুলনা করোনা প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা সমন্বয়ক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। প্রয়োজনে লাঠিচার্জ করতে হবে। মানবতার চেয়েও মানুষকে বাঁচানো জরুরি।
তিনি বলেন, যেহেতু করোনায় মৃত্যু হার কম। এ কারণে অনেকেই আতঙ্কিত হচ্ছেন না। কিন্তু যার পরিবারের একজন মারা গেছে, তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। ফলে কঠোর লকডাউন দিয়ে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করতে হবে।