সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট:শ্রম আইনের তোয়াক্কা না করেই ঈদের ছুটির পর পোশাক কারখানাগুলোয় শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মচ্ছব শুরু হয়েছে। জোর করে শ্রমিকদের কাছ থেকে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিচ্ছেন মালিকপক্ষ। কেউ রাজি না হলে লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে ভাড়াটিয়া গুন্ডাবাহিনী বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা। নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলেও তা আমলে নিচ্ছেন না দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।
করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকাকালীন সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে কোনও মালিক শ্রমিক ছাঁটাই করবে না। মালিকরাও এই সিদ্ধান্ত মেনে নেন। কিন্তু ঈদের পর কারখানা খোলার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিক ছাঁটাই শুরু হয়। কারখানায় প্রবেশ করার পরেই ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে আইডি কার্ড। কোনো কারখানায় জোর করে বের করে দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ভুক্তভোগী শ্রমিকদের।
গাজীপুর, শ্রীপুরের এমএইসসি ফ্যাশন লিমিটেডের ছাঁটাই হওয়া এক শ্রমিক সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, জীবনের চেয়ে চাকরির মূল্য অনেক বেশি। বর্তমান পরিস্থিতিতে চাকরি না থাকলে না খেয়ে মরতে হবে। চাকরি বাঁচানোর জন্য করোনার ভয় না করে কাজে যোগ দিয়েছি। কিন্তু জোর করে অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। যারা স্বাক্ষর করছে না তাদের মারধর করা হচ্ছে। আইডি কার্ড নিয়ে কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে। এ কারখানায় প্রায় সাড়ে তিনশ শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে।
শ্রমিকরা অভিযোগ করছেন, মালিকদের কথামতো স্বাক্ষর না করলে মারধর করা হচ্ছে। আহত কয়েকজন শ্রীপুর সদর থানায় অভিযোগ করতে গেলে কর্তব্যরত কর্মকর্তারা অভিযোগ না নিয়ে শ্রমিকদের থানা থেকে বের করে দেয়।
সূূত্র জানায়, গাজীপুর, সাভার, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় অর্ধশত কারখানা শ্রমিক ছাঁটাই করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য কারখানাগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের ডেকো গার্মেন্টস লিমিটেড, ওয়েমার্ট ফ্যাশন লিমিটেড, রিদিশা ফ্যাশন, ট্রাউজার লাইন, ফ্রস্টার ইন্টারন্যাশনাল, ডেল্টা টেক্সটাইল লিমিটেড। দেশি মালিকানাধীন কারখানার বাইরেও রয়েছে বিদেশি মালিকানাধীন কারখানা।
এদিকে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, মালিকদের অঙ্গীকার ছিল তারা এই আপৎকালীন সময়ে কোন শ্রমিক ছাঁটাই করবে না। শ্রমিকদের বেতন ভাতা দেওয়ার জন্য সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়েছেন। তারপরেও শ্রম আইন লঙ্ঘণ করে শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক অব্যাহতিপত্রে স্বাক্ষর নিচ্ছে। তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। জোর করে কার্ড ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কারখানা শ্রমিকদের কাজে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। অভিযোগের পর অভিযোগ আসছে। এই বিপদের সময় তারা কই যাবে? কে চাকরি দেবে? মালিকরা ন্যূনতম মানবিকতা দেখাতে পারেনি। তাই শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ না হলে শ্রমিকরা জীবন বাঁচাতে আবার রাস্তায় নামবে। শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি ড. রুবানা হক সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, মে মাসে কোনো কারখানায় ছাঁটাই হওয়ার কথা না। কোনও কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিজিএমইএ আইনানুগ ব্যবস্থা নিবে। একই সঙ্গে কারখানা মালিকদের প্রতি শ্রমিক ছাঁটাই না করার জন্য অনুরোধ জানান।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগের দিন শেষ কর্মদিবসে (২৪ মে) পর্যন্ত ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ সদস্যভুক্তসহ মোট ৭ হাজার ৬০২টি পোশাক কারখানার মধ্যে মোট বেতন ভাতা পরিশোধ করে ৬ হাজার ৬৮২টি কারখানা। বেতনভাতা পরিশোধ ছাড়াই ৯২০টি কারখানা ছুটি ঘোষণা দেয়।
ঈদের বোনাস পরিশোধ করেছে ৬ হাজার ৩৪৪টি কারখানা। ১ হাজার ২৫৮টি কারখানা শ্রমিকদের বোনাস না দিয়েই কারখানা বন্ধ করে দেয়। বিজিএমইএর সদস্যভুক্ত কারখানাগুলোর মধ্যে ঈদের বোনাস পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৫৪৪ টি। বাকি ৩৩৮টি কারখানা শ্রমিকদের বোনাস না দিয়েই ছুটি দেয়। বিকেএমইএর সদস্য কারখানাগুলোর মধ্যে ১ হাজার ১৬টি কারখানা ঈদের বোনাস পরিশোধ করে। বাকি ৮৫টি বোনাস পরিশোধ না করেই কারখানা ছুটি দেয়। বিটিএমএর ৩৮৯ টি কারখার মধ্যে বোনাস পরিশোধ করে ৩৪২টি; বাকি ৪৭টি ঈদের বোনাস পরিশোধ না করেই কারখানা বন্ধ করে দেয়।
বেপজার অন্তর্ভুক্ত ৩৬৪টি কারখানার মধ্যে ৩৫৩টি ঈদের বোনাস পরিশোধ করেছে; বাকি ১১টি বোনাস না দিয়েই ছুটির ঘোষণা দেয়। বিজিএমইএর সদসদ্যভুক্ত ১ হাজার ৮৮২টি কারখানার মধ্যে বেতন ভাতা পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৭২১টি। বিকেএমইএর সদস্যভুক্ত ১ হাজার ১০১টি কারখানার মধ্যে এপ্রিলের বেতনভাতা পরিশোধ করেছে ১ হাজার ৪১টি। বিটিএমএর সদস্যভুক্ত ৩৮৯টি কারখানার মধ্যে ৩৪৯টি বেতন বোনাস পরিশোধ করে। বাকি ৪০টি কারখানা বেতন ভাতা না দিয়েই ছুটি দিয়ে দেয়। বেপজার মোট ৩৬৪টি কারখানার মধ্যে ৩৫৬টি কারখানা বেতন ভাতা পরিশোধ করে।
বড় তিন সংগঠনের দসদ্যভুক্ত নয় এমন কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৬টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৮৯টি কারখানা। বাকি ৭৭৭টি কারখানা বোনাস পরিশোধ না করেই ছুটি ঘোষণা করে।