*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ করোনা, ক্যানসার, এইডস, জন্ডিস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়ার মতো রোগ নির্ণয়ের ‘ টেস্ট কিট’ ও ‘রি-এজেন্ট’- এর মেয়াদ বাড়িয়ে তা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হতো। প্রতিষ্ঠানটি চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নিম্নমানের ও মেয়াদোত্তীর্ণ মেডিকেল সামগ্রী দেশে এনে বিক্রি করত। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ছিল না সরকারি কোনো অনুমোদন। প্রায় দশ বছর ধরে রাজধানীর লালমাটিয়া ও বনানীতে অবৈধ এই ব্যবসা সঙ্গে জড়িত ছিল ‘বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ নামের প্রতিষ্ঠানটি।
বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে প্রায় চার ট্রাক (আট টন) অনুমোদনহীন, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল টেস্ট কিট, রি-এজেন্ট জব্দ করা হয়। এগুলো বাজারের ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরে অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ কিটগুলো র্যাব-২ এ কার্যালয়ে আনা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার। এর সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটির নয় কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী মো. শামীম মোল্লা, ব্যবস্থাপক মো. শহীদুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল বাকী ছাব্বির, অফিস সহকারী মো. জিয়াউর রহমান, হিসাবরক্ষক মো. সুমন, অফিস ক্লার্ক ও মার্কেটিং অফিসার জাহিদুল আমিন পুলক, সার্ভিস ইঞ্জিনিয়ার মো. সোহেল রানা, এক্সন টেকনোলজিস্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের এমডি মো. মাহমুদুল হাসান, হাইটেক হেলথ কেয়ার লিমিটেডের এমডি এস এম মোজফা কামাল।
লে. কর্নেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, চক্রটি ২০১০ সাল থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের নামে বিদেশ থেকে বিভিন্ন রোগের কিট এনে তা টেম্পারিং করে মেয়াদ বাড়াতো। এই তিন প্রতিষ্ঠান করোনা, ক্যানসার, এইডস, জন্ডিস, ডায়াবেটিস ও নিউমোনিয়া রোগের টেস্ট কিটের মেয়াদ বাড়িয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করত। র্যাব গোপন তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে, কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান অননুমোদিত মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকরণ, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ করোনার টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্টসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট মজুদ ও বাজারজাত করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের প্রতিনিধি সহযোগিতায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়া এলাকায় অবস্থিত বায়োল্যাব ইন্টারন্যাশনাল ও তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বনানী এলাকায় অবস্থিত এক্সন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস লি. এবং হাইটেক হেলথকেয়ার লি. নামের তিনটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে দেখা যায়, ওই তিন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রিন্টিং মেশিনের সাহায্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার খুব অল্প সময় রয়েছে, এরকম বিভিন্ন টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টের মেয়াদ বাড়ানোর কাজ চলছে। পরবর্তী সময়ে তাদের ওয়্যারহাউজগুলোতে তল্লাশির সময় বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। সেখানে মজুদকৃত বেশির ভাগ মেডিকেল ডিভাইস অননুমোদিত, প্রায় সবধরনের টেস্ট কিট এবং রি-এজেন্টের ব্যবহারের মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা দ্রুতই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে। র্যাব কর্মকর্তা বলেন, এমনকি ‘এইডস’ রোগ নির্ণয়ের জন্য নির্ধারিত প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট কিট ও রি-এজেন্টও রয়েছে এই তালিকায়, যা তাদের সংরক্ষণে মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় পাওয়া যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান, ২০১০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানগুলো একাধিক নামে পারস্পরিক যোগসাজশে, অবৈধভাবে ও অসৎ পন্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো অনুমোদন ছাড়াই মানহীন ও স্বল্প মেয়াদী টেস্ট কিট ও রি-এজেন্ট বিদেশ থেকে আমদানি, সংরক্ষণ ও দেশব্যাপী বাজারজাতকরণ করত। যা সরবরাহ করার পর্যায়েই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যেত। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল কে এম আজাদ, গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খাইরুল ইসলাম, আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, উপপরিচালক মেজর হুসাইন রইসুল আজম মনি প্রমুখ।