সময় সংবাদ রিপোর্ট:আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) ভূমিকা কী হবে, তা অনেকটাই নির্ভর করছে বিএনপির ভূমিকার ওপর। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচন করবে জাপা। আর বিএনপি নির্বাচনে না এলে মহাজোট থেকে বেরিয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে দলটি। বিষয়টি চূড়ান্ত হবে নির্বাচনী তফসিলের পর। তবে মহাজোটের শরিক দল হিসেবে আপাতত ৩০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জোর প্রস্তুতি রয়েছে জাপার। এসব আসনে দলীয় প্রার্থীও চূড়ান্ত করেছেন জাপার শীর্ষ নেতারা। গতকাল রবিবার বনানীতে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভাপতিম-লীর সদস্য ও দলের এমপিদের সঙ্গে বৈঠকের পর নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের তিন নেতাকে ডেকে নিয়ে দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
বৈঠকে উপস্থিত জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে এখন পর্যন্ত ৩০টির মতো আসনের আশ্বাস পাওয়া গেছে। তবে আরও কিছু বেশি আসনের প্রত্যাশায় আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে ৬ সংরক্ষিত সাংসদসহ জাতীয় পার্টির মোট ৪০ জন সাংসদ রয়েছেন। ৩০ আসনের মধ্যে কারা কারা জায়গা পেতে পারেন, এ বিষয়ে ওই নেতা এরশাদের বরাত দিয়ে বলেন, দশম জাতীয় সংসদের অধিকাংশ এমপিই মূলত আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন। যারা এমপি হওয়ার পর জনবিচ্ছিন্ন রয়েছেন, নানা ধরনের অসৎ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছেন, তারা অবশ্য মনোনয়ন পাবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে রাজনৈতিক পারঙ্গমতার মাধ্যমে যারা দলে নিজেদের ইমেজ তৈরি করেছেন, তারা যে পদেই থাকুন না কেন, তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। জাপার নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ৪ নেতা জানান, ৩০টি আসনের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২ প্রার্থীকে দল থেকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-১৭ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, ময়মনসিংহ-৪ আসনে রওশন এরশাদ, পটুয়াখালী-১ আসনে এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার, লালমনিরহাট-৩ আসনে জিএম কাদের, রংপুর-১ আসনে মসিউর রহমান রাঙ্গা, গাইবান্ধা-১ আসনে শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম, ঢাকা-৪ আসনে সৈয়দ আবু হোসেন, ঢাকা-৫ আসনে আবদুস সবুর আসুদ, ঢাকা-৬ আসনে কাজী ফিরোজ রশীদ, চট্টগ্রাম-৯ আসন থেকে জিয়া উদ্দিন বাবলু, কিশোরগঞ্জ-১ থেকে মুজিবুল হক। জানতে চাইলে জাপা মহাসচিব এবিএম রহুল আমীন হাওলাদার অবশ্য সংক্ষিপ্ত তালিকার বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, আমাদের তিনশ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। তবে বিএনপি নির্বাচনে এলে আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে থাকব। সে ক্ষেত্রে আমাদের দলের চেয়ারম্যান ইতোমধ্যেই বলেছেন, ৭০টি আসন আওয়ামী লীগের কাছে প্রত্যাশা করছেন। সংক্ষিপ্ত তালিকার বিষয়ে দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, আমি মনে করি জাতীয় পার্টি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। কেউ হয়তো অনুমান করে আপনাদের এই সংক্ষিপ্ত তালিকার কথা জানিয়েছে। জাপার সব সিদ্ধান্ত নেবেন এরশাদ : আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কিত জাতীয় পার্টির (জাপা) সিদ্ধান্ত গ্রহণের একক দায়িত্ব দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বনানীতে দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের প্রেসিডিয়াম ও সংসদ সদস্যদের যৌথসভায় সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাপা এককভাবে না জোটগতভাবে নির্বাচন করবে এবং দলীয় মনোনয়ন কে পাবেন, কে পাবেন না সে ক্ষেত্রেও চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করা হবে। সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা আমাদের সময়কে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। যৌথসভা শেষে দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টি আগামী জাতীয় নির্বাচন মহাজোটের সঙ্গী হিসেবে নাকি এককভাবে করবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপির গতি প্রকৃতি দেখে। আমরাও চাই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ। পাশাপাশি একক নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানান দলটির মহাসচিব। আর সেই লক্ষ্যে আগামী ২০ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন তিনি। জানান, ২০ অক্টোবর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটের মহাসমাবেশ সফল করার বিষয় নিয়েও সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মহাসমাবেশ সফল করতে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয় বলে জানান হাওলাদার। তিনি বলেন, সেটি হবে স্মরণকালের সেরা সমাবেশ। সেখানে দলের চেয়ারম্যান দেশের সব নেতাকর্মীর উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেবেন; বার্তা দেবেন দেশের জনগণের উদ্দেশেও। জাপা মহাসচিব বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে ৩০০ আসনে নির্বাচন করবে জাতীয় পার্টি; আর বিএনপি নির্বাচনে এলে ফের মহাজোট থেকেই নির্বাচন করবে। তবে তিনি এও যোগ করেন যে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলতে কিছু নেই। এরশাদের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে ড. কামাল হোসেনের বৈঠক হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে হাওলাদার বলেন, ড. কামাল হোসেন সিঙ্গাপুর যাননি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। যৌথসভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদ, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এমএ সাত্তার, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুসহ পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় সংসদ সদস্যরা।