কেওক্রাডাং পাহাড় চূড়ায় উঠার সত্য ভ্রমন কাহিনী: ফজলে রাব্বী সানি
( ২০/০৪/১৯৯৮ থেকে ২৪/০৪/১৯৯৮ ইং )
অামরা তিন বন্ধু হাসিম মাহমুদ(হাসিম), জুলফিকার অালী(ভুট্টু) অার অামি মো:ফজলে রাব্বি সানি , এর অাগেও অামরা বান্দরবানে চিম্বুক পাহাড়ে গিয়েছি কিন্তু বগা লেক যাওয়া হইনি, যেমন চিন্তা তেমন কাজ, কোন রকম প্রস্তুতি নিয়ে রওনা হলাম বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। অামাদের চিন্তা হলো কম খরচে কি ভাবে যাওয়া যায় ? হ্যা অামরা কমলাপুর রেল ষ্টেশনে বিকালের মেইল ট্রেনে রওনা দিলাম চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে যথারীতি ভোর বেলায় পৌছলাম, সকালে হালকা নাস্তা করে বদ্ধার হাট বাস ষ্টেন থেকে লোকাল বাসে বান্দরবানে পৌছালাম, অামাদের অাগের থেকে জানা কি ভাবে রুমা পৌছাবো ( অামাদের অাগে চারুকলার বন্ধু রায়হান, নোয়েল, ছোট ভাই তামীম ও রিপন মামা বগা পর্যন্ত চিনে এবং গেছে, তাই অামাদের পথ চলা সহজ হয়েছে) চান্দেঁর গাড়ী (খোলা জীপ) করে রুমার সাঙ্গু নদী এ পাড়ে ( ১১ মাইল ) নামলাম, এরপর অার গাড়ী চলাচলে পথ ছিলনা, শুরু হলো নৌ পথে ভ্রমন, চারিদিকে উচুঁ পাহাড়ের মাঝ খান দিয়ে পাহাড়ি নদী খুব অপূর্ব ছিনছিনাড়ি অাশেপাশে উপজাতি বাচ্চা ছেলেরা অামাদের দিকে হাত নেরে অামাদের স্বাগত জানাচ্ছে, পাহাড়ি নদী খুব স্রোত, চিকন মতো নৌকা, মনে হয় যেন কোন বীন দেশের মানুষ অামরা, ঠিক বিকাল নাগাদ পৌছালাম রুমা বাজারে, সবারি অামাদের দিকে দৃষ্টি, খোজখবর নিয়ে অামরা পুলিশ ক্যাম্পের নিকট পৌছালাম, পুলিশ ভাইরা অামাদের কে দেখে অবাক ! অামি বললাম অামরা তিন জন বগা লেক দেখতে যাবো, শুনে পুলিশ ভাইরা বললো অাপনারা যেতে পারবেন না, অাশেপাশে ঘুরুন অার ঐ যে দেখা যায় রেষ্ট হাউজ, সেখানে এক রাত থেকে পরের দিন বাসায় চলে যাবেন, শুনে অামাদের অনেক মন খারাপ হলো, এতো দূর পযর্ন্ত অাসলাম বগা যেতে পারবো না ? যাক অাপাতত রেষ্ট হাউজে থাকি, কি অার করা, রেষ্ট হাউজের কেয়ার টেকার নাম মোস্তান ভাই, খুব ভাল মানুষ তাঁর সাথে পরিচয় হলো এবং বললাম অামরা তো বগা লেক যাবো , পুলিশ যেতে দিচ্ছে না কি করা, মোস্তান ভাই অাশ্বাস দিলো বললো অামি কখনো যাই নাই তবে পথ কোন দিকে বলে দিতে পারবো, রুমা বাজারের অাশেপাশে ঘুরলাম কিছুক্ষণ, রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে অামরা উপজাতিদের সম্পর্কে অালাপ অালোচনা করছি মোস্তান ভাই এর সাথে , মোস্তান ভাই বললো অামার অাগামী পরশু কাজ অাছে তা না হলে অামি অাপনাদের সাথে যেতাম, অামরা অনুরোদ করলাম অামাদেরও কাজ অাছে, অামরা তাড়াতাড়ি চলে অাসবো, এ কথায় মোস্তান ভাই অামাদের সাথে যেতে রাজি হলো, অাগামী কাল ভোরে অাজানের পরপরি অামরা রওনা দিবো ইনসাঅাল্লাহ্। অামরা পুলিশ রেষ্ট হাউজে ঘুমায় পরলাম.
২২/০৪/১৯৯৮ ইং খুব ভোরে রওনা হলাম অামরা তিন বন্ধু অার মোস্তান ভাই, অামরা চার জনে হতে চিকন বাশঁ , রুমা বাজারে পূর্ব দিকে এক পাহাড়ি পথে হাটা শুরু করলাম, খুব বিপদ জনক পথ , প্রায় ৪৫ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেল উচুঁ পথ , খুব সাবধানে পথ চলতে হচ্ছে অামাদের, প্রথমেই একটা উপজাতি পাড়ায় এসে পৌছলাম, পথের অবস্থা দেখে একটু ঘাবড়ে গেলাম কারণ এমন পথ তো কোন সময় পার হইনি , একটু কষ্টই হলো, কিন্তু অাশেপাশের পাহাড়ি সুন্দর্য্য দেখে কিছুটা কষ্ট দূর হয়ে গেল, তবে অামরা সবাই এক মত হলাম ,খুব অাস্তে ধীরে হাটবো, তবে যে ভাবেই হোক সন্ধ্যার অাগেই বগা লেক এ পৌছাবো, উপজাতি পাড়ায় কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে অাবার পথ চলা শুরু করলাম, পাহাড়ি উচুঁ নিচু পথ মাঝে মাঝে পাহাড়ি জঙ্গলা গাছের মধ্যে দিয়ে পথ চলা, পাখির কলতান কি অপূর্ব মনপ্রানে অামাদের কে দোলা দিতে লাগলো, চলার মাঝে হঠাৎ মোস্তান ভাই বললো , সবাই একটু দাঁড়ান, অামরা সবাই মুর্তি মত দাড়ায় পড়লাম, ঝোপের মধ্যে কি যেন নড়াচড়া করছে, হ্যা ! সাপ, খুব ভদ্র ভাবে অামাদের একটু দূরেই সাপটি হেলে দুলে চলে গেল, অাবার পথ চলা এবার একটু সহজ পথ , তেমন একটা উচুঁনিচু না, অাবার একটু বড় গাছের নিছে রেষ্ট নিলাম অামরা সবাই, বন্ধু হাসিম গান ধরলো ” সুন্দর পৃথিবী..অারো লাগে সুন্দর ” অাবার পথ চলা, এবার শুধু নিচের দিকে পাহাড়ি পথ নিচের দিকে চলা খুব কঠিন, মাঝে মাঝে কিছু পাহাড়ি খাদ , কয়েক শ ফিট নিচে, খুব সাবধানে নামতে শুরু করলাম, তবে অামাদের কাছে বাশঁ থাকায় অনেক উপকার হয়েছে, এখন অামাদের উদ্দেশ্য ঝিড়ি পথ বের করা, হাটছি তো হাটছি, অনেকক্ষণ পর অামাদের কানে পানি পড়ার শব্দ পেলাম, বুঝলাম খুব কাছাকাছি ঝিড়ি পথ অাছে, অামাদের সবারই মনে একটি অালাদা ভাল লাগা সৃষ্টি হলো, হ্যাঁ, দূরে উপর থেকে পাহাড়ি ঝিড়ি পথে দেখা পেলাম, চলতে চলতে ঝিড়ি পথে এসে মনে হলো এক লাফ দিয় ঝিড়ি পথে গোসল করি, পাহড়ি ঝর্নার পানি খুব ঠান্ডা, কিন্তু না, এ পানি খাওয়া যাবে না, কারণ মোস্তান ভাই বললো, ঝিড়ি পথের পানি ভাল হয় না , বেকটেরিয়া থাকে, অনেক মৃত জন্তু জানোয়া, পশু পাখি ঝিড়ি পথে মরে থাকে, কি করা পানি অার খাওয়া হলো না, হাত মুখ ধুয়ে অাবার ঝিড়ি পথের পাশ দিয়ে হাটা শুরু করলাম, হাটতে হাটতে মাঝে মধ্যে ঝিড়ি পথ পাড় হতে হয়, খুব স্রোত কমর পানি পর্যন্ত হয়, ঝিড়ি পথে চলার পথে কিছু উপজাতিদের সাথে দেখা , মনে মনে ওরা খুশি , অামরা তাদেঁর এলাকায় বেড়াতে এসেছি, কয়েকজন মুরং জাতিকে দেখলাম ঝিড়ি পথে মাছ ধরছে, কি অপূর্বদৃশ্য মনে হয় যেন ছবি অাঁকা কিছু, দূরে কয়েকটা বাশেঁর তৈরী বাড়ি ঝিড়ি পথের ধারে দেখতে পেলাম, কিছু সমতল ভূমি অাছে ওখানে ওরা চাষাবাদ করে, অাস্তে অাস্তে বাড়ি গুলির সামনে অামরা পৌছালাম, দেখি কয়েকজন উপজাতি বসে অাছে, তাদের কাছে পেঁপে, কলা অার কি জানি বড় অালুর মতো, অামরা তাদের থেকে দাম করে পেঁপে কলা কিনে নিলাম,অিাবার কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে পথ চলা শুরু করলাম, পাহাড়ি ঝিড়ি পথ দিয়ে পথ চলা, মজাই অালাদা এবার ডুকলাম দুই পাহাড়ের ফাঁকে ঝিড়ি পথ দিয়ে, বড় বড় পাথর ফাকেঁ ফাকেঁ পথ চলা,ঝিড় ঝিড় পানির শব্দ বন ঝাউরের পথ, হঠাৎ ভুট্টুর পা পিছলে গেল, অাল্লাহ্ রক্ষা, তেমন কিছু হয় নাই, সামান্য ছিলে গেছে, কি অার করা কিছুক্ষণ রেষ্ট, ভুট্টেুা কে মোস্তান ভাই হেণ্প করলো, পাহাড়ি পাথর পথে চলার একটা শিক্ষা হলো, পানির নীচে পাথর , খুব খেয়াল, ঐ পাথরটি পিচ্ছিল ও হতে পারে, যে সব পাথর শেওলা দিযে ডাকা ,সেই সব পাথরের উপর পা ফেলা যাবে না , যাক অামাদের এই রেষ্ট টি না নিলেও হতো, অাবার পথ চলা, কিছু দূর যাওয়ার পর , বিশাল পাথরের কাটাঁ পথ দিয়ে যেতে হবে, বুঝ এবার, সামনের দিকে মুখরেখে কাধ ও পিঠ নুয়ে প্রায় ২৫ ফুট যেতে হবে, পরে গেলে নীচে পাথর ভরা পানিতে , নিশ্চিৎ পা বা মাথা ভাঙ্গা ! যাক, খুব কষ্টে অাল্লাহ্ রহমতে অামরা পাড় হলাম, চলছি পাহাড়ি পাথ, অাঁকা বাঁকা , পিচ্ছিল পাথর পানির জল ধারা, মাঝে মাঝে ছোট ছোট পাহাড়ি ঝর্না, হাত ছোয়ালেই ঠান্ডা পানির পরোশ, কেমন জানি একটি পাহাড়ি গন্ধ পাওয়া যায়, বুকভরা নিশ্বাস , খুব ভাল লাগে, পাহাড়ি পোঁকার কিট কিট অাওয়াজে নিস্তদ্ধতা ভেঙ্গে দেয় মাঝে মাঝে, দূর অাকাশের মেঘের ভেলা, চিল হয়তবা ঈগল ঠানা মেলে নীচে অামাদের কে দেখছে, দূরে মেঘের সাথে পাহাড় গুলো লুকোচুড়ি খেলছে, এবার চলার পথেই গান শুরু করলো, একটার পর একটা গান গাইছে, অামরাও এগুচ্ছি ধীমে তালে।সূর্য্য টা পশ্চিম অাকাশে হেলে পড়েছে , দূরে ঐ পাহাড় টি উঠতে হবে, ঝিড়ি পথ ছেড়ে অাবার পাহাড়ি পথে উপরের দিকে উঠা শুরু করলাম, হঠাৎ হাসিম বললো, কিরে তোর পায়ে রক্ত কেন ? অামার তো চোখ বড় বড় ! দেখি একটা জোক অামার পায়ে বসে রক্ত খেয়ে ফুঁলে ফেঁপে অাছে, যাক এই যাত্রায় মোস্তান ভাই উদ্বার করলো, মোস্তান ভাই বললো পাহাড়ি চলার পথে জোক থাকে, সাথে লবণ নিয়ে রাখতে হয়, জোক লবণ কে ভয় পায়। এই পাহাড় টি ঝোপঝাড় বেশী, যাক খুব সাবধানে একটু দ্রুত হাটছি, কারণ গাছের পাতার মধ্যেও জোক থাকে, বৃষ্টির সময় জোক বেশী দেখা যায়, তবে সময় বৃষ্টি শুরুর দিকে, অাদ ঘন্টা খানিক উচুঁ নীঁচু পথে হাটলাম, ঐ দূরে একটা পাহাড় দেখা যাচ্ছে ওটাই বগা মুখ পাড়া, মনে শান্তি পেলাম কাছা কাছি চলে অাসছি, অাবার পাহাড়ের নিচের পথ, চলছি ঝিড়ি পথের সন্ধানে, চলছি তো চলছি , অালকা শুনলাম পানির শব্দ, বুঝলাম ঝিড়ি পথ কাছা কাছি, ঝিড়ি পথ পেলাম, এবার ঝিড়ি পথে অনেক পানি, পানি পার হতে হবে, কমড় পর্যন্ত পানি ,কি করা, প্যান্ট ভিজেই পাড় হতে হলো, ঝিড়ি পথ দিয়ে হাটা চলা, একটি মুরং পাড়ার পাশ দিয়ে অন্য দিকে বিশাল পাহাড়, অামাদের কে এই বড় পাহাড় টাই পাড় হতে হবে, অাবার উচুঁ পাহাড়ের দিকে উঠা শুরু করলাম,পাহাড়টা অনেক খাঁড়া, কি করা উঠতে হবে, অামরা সবাই সাবধান হলাম, শুরু হলো, একি পাহাড় ঘেসে রাস্তা, যত উঠছি , নীচের ঘিড়ি পথ ,অন্ধকার অার কথার পতিধ্বনি শোনা যায়, ওয়ে..,ওয়ে, হ্যাঁ অনেক দূর পাহাড়ের সাথে ধাক্কা লেগে অাবা ফিরে অাসে, খুব মজার অভিগ্যতা হলো, বড় একটি গাছের পাশে একটু বসার স্থান ,দেখে ভাল লাগলো, অামরাও কিছুক্ষণ বসলাম, উপজাতিদের চলার পথে বিস্রামের স্থান, চলছে অাবার পথ চলা, ঐ দেখা যাচ্ছে বগা লেক পাড়া, পাহাড়ের উপরে একটা পুকুর, প্রকৃতির একটা অাজব খেলা ! হাজার ফুট উপরে একটা লেক, মনটাই শান্তি হয়ে গেল সবার, এবার নীচে নামতে হবে তারপর কিছুক্ষণ হাটা, অাবার উপরে উঠা, চলছি পাহাড়ি চলার পথে, হালকা ঝিড়ি পথ, তারপর উপরে উঠা, এবার কিন্তু খাঁড়া পথ , কোন সমস্যা হচ্ছে না ,তালে তালে উঠতে লাগলাম, একটা ভিন্ন শিহরণ জাগ্রত হলো অামাদের প্রত্যেকের শরীরে, অার একটু পরেইতো বগা লেক দেখতে পাবো, শেষ পর্যন্ত উঠলাম, অতভূৎ শিহরণে চোখ ভিজে গেল, বিশাল একটা লেক, চারদিকে পাহাড় মাঝখানে পুকুর কি অাজব না !
লেকের পাড়েই উপজাতিদের বাস, এ পাড়াকে বলে বগা লেক পাড়া।পাহাড়ের গাঁ গেসে রাস্তা, অারেক পাশে বগা লেক, চলছি দূরে লেক পাড়ে কয়েক জন উপজাতি দাড়িয়ে অামাদের কে দেখছে, মনে হচ্ছে অামরা ভিন্ন গ্রহের মানুষ, কাছা কাছি অাসতেই অামি বললাম লারামের ঘর কোনটা, পাহাড়ি ঘর থেকে একটি ছেলে এসে বললো অামি লারাম, ও তুমি লারাম, অামরা ঢাকা থেকে এসেছি, তোমার কথা অামার বন্ধু রায়হান বলেছে, তখন লারাম চিন্তে পারলো, মোস্তান ভাই অাবার ওদের কথা কিছু বুঝে,ওনি অনেক দিন রুমাতে থাকে তাই, লাল রাম বোম, সবাই লারাম বলে ডাকে, লারাম ,বগা লেকের হেড ম্যানের ছেলে, অামাদের থেকে ৭/৮ বছরে ছোট হবে, অামাদের সাথে কথা বলা দেখে রিয়েল মুন বোম অাসলো পরিচয় হলো, তখন বিকাল ছুই ছুই, লারাম বললো , অামাদের পাড়ার বেশী বাগ লোক জুমে গেছে, তিন চার দিন পরে অাসবে পালাক্রমে, এখন প্রায় সব ঘরই খালি, হেড ম্যান ও জুমে গেছে, লারাম অামাদের কে নিয়ে তাদের ঘরে গেল, কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে লারামকে নিয়ে বগা লেক পুকুর ঘাটে অাসলাম, কি স্বচ্ছ পানি ! নিজেকে দেখা যায়, অামরা চার জনেই গোছল করলাম মজা করে অামরা সবাই সাতাঁর জানি সমস্যা নাই, পুকুর ঘাট থেকে লারামের সাথে অারো বন্ধুত্ব গবীর হয়ে গেল, কিছু কিছু বাংলা কথা লারামের বুঝা যায়, লারাম বললো, রিয়াল মুনে বাড়ি একদম খালি অামরা রাতে রিয়াল মুনের বাসায় থাকবো, উচুঁ বাশেঁর মাঁচা বাধানো বাসা , খুব সুন্দর এটা পাহাড়ের ডালে, রিয়েল মুন একটু কম কথা বলে, তবে অান্তরিকতার অভাব নাই, রিয়েল মুন অাজ রান্না করবে, লারাম জানালো, রিয়াল মুনের বাসা দেখে অামার অবাক ! স্পেনিস গিটার অাছে, ওরা গান গায় গীটার দিয়ে, বিকাল টা মুনের বাসায় বারান্দায় অার টুংটাং গীটার হাসিম গান করলো, রিয়েল মমুন তাদের অান্চলিক গান করলো, সূর্য্য টা পাহাড় অারাল হয়ে গেলে, পাহাড়ে সন্ধা অনেক তাড়াতাড়ি হয়, সূর্য্য পাহাড় অারাল হলেই অন্ধকার নেমে অাসে, রিয়েল মুন মুরগী জবাই করার জন্য প্রস্তুত হলো, মুনকে বললাম জবাইটা অামরা করবো, মোরগটা জবাই করে মুনকে দিলাম, রান্না শুরু হয়ে গেল, গল্প অার গুনগুন গান ,ভালই লাগলো সবার, গল্প করার মাঝে অামরা কেওকারাডাং সম্পর্ক অালেচনা করছিলাম এবং বললাম, তোরা তো এখানে রিসোটের মতো করতে পারো, বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ অাসবে, থাকবে ঘুরবে, থাকা খাওয়ার জন্য পয়সা নিবে, শুনে ওরা একটু অভাকই হলো, লারাম বললো অামি যাই নাই কেওকারাডাং চূড়া পর্যন্ত তবে দার্জিলিং পাড়া গেছি, বগার উত্তর পূর্ব কোনায়, লারাম কে বললাম কেওকারাডাং পৌছাতে কতক্ষণ সময় লাগবে ? লারাম বললো ভোরে রওনা দিলে ১২ টা সারে ১২ টায় পৌছাবো, লারাম কে বললাম তুমি কেওকারাডাং এত কাছে যাও নাই কেন ? বললো, ওখানে তো পাড়া নাই, তাই যাওয়া হয় নাই, এটা যে সর্বচ্চ উচুঁ পাহাড় বাংলাদেশে ( তখন কার সময়ে ) জানো ? লারাম কথাটা ততোটা গুরুত্ব মনে করে নাই, অামরা যাবো, তুমি নিয়ে যাবা, হ্যাঁ যাবো, সিদ্ধান্ত নিলাম অামরা কাল ভোরে কেওকারাডাং পথে রওনা হবো, এখানে উল্লেখ্য যে অামরাই প্রথম সিভিলিয়ান চূড়ায় উঠবো, মন অানন্দে টকবক করতে লাগলো, গল্প চলার মধ্যে রান্না করা শেষ, রিয়াল মুনের, লারাম সহ খাওয়া দাওয়া পর্ব , অামরা তিন জন হুহা হুহা শুরু করলাম ! এত ঝাল !! অাল্লাহ !!্ চিন্তাই করি নাই, তবে উপজাতিদের ঝাল খাওয়া তাদের নিত্য দৈনন্দিন খাবার, যাক খাওয়া দাওয়া শেষ করে, কিছুক্ষণ অাড্ডা মেরে , রিয়েল মুন মোটা কম্বল ( ওদের নিজেদের তৈরী) বিছিয়ে দিল, অামরা ক্লান্তির ঘুম শান্তিতে পাড়লাম।
২৩/০৪/১৯৯৮ ইং খুব ভোরে উঠলাম অামরা, যতারীতি এক এক করে বাথরুমে যাওয়া অাসা, রিয়েল মুন তাদের বাথরুম দেখায় দিল, বাথরুম থেকে এসেই অামরা তিন জন এক জনের দিকে এক জন তাকানো শুরু করলাম, বিশাল অভিগ্যতা, বাশেঁ মাছার উপর বাথরুম, নীচ দিয়া খালি, বাথরুম করার সাথে সাথে কৈ থেকে শুকড় এসে সব ক্লিন করে দেয়, যাক বাবা, ভয়ে ভয়ে বাতরুম সারলাম, সকালে রিয়াল মুন তাদের গাছ থেকে পাকাঁ পেঁপে এনে দিল , সকালের নাস্তা ভালই হলো মনে হচ্ছে, যথা সময়ে লারাম তার বাসা থেকে অাসলো, লারাম তাদের বাশঁ ঝাড় থেকে চিকন শক্ত বাশঁ কেটে নিয়ে অাসলো, ভোরে ভোরেই অামরা রওনা হলাম কেওকারাডাং এর উদ্দেশ্যে, রিয়াল মুন অার অামাদের সাথে গেল না, অামি, ভুট্টো, হাসিম, মোস্তান ভাই এবং লারাম রওনা হলাম, সবার হাতে বাশঁ বগা লেক পাড়ার উত্তর দিক দিয়ে, পথে মধ্যে সুন্দর একটা কাঠের ব্রীজ পার হলাম, মনের মধ্যে একটা অালাদা জোড় পেলাম লারামকে সাথে পেয়ে, চলতে লাগলাম পাহাড়ি পথে, ওরে বাবা ! এ দেখি অারো উচুঁ পাহাড় পথ , পাহাড়ি গাঁ ঘেসে এক অজানা পথে অামরা রওনা হলাম, অামরা দার্জিলিং পাড়া যাবো, সেখানে লারাম দের অাত্মিয় থাকে, খালি উপড়েই উঠছি, ঘিড়ি খাদ গুলি বিপদ জনক, কয়েক হাজার ফুট নীচে, সাবধানে চলছি অামরা, তবে লারামের ইন্সটাশণে, একটা পথ তো খুবই বিপদ জনক, পাহাড়ের ফাঁটল টা লাফ দিয়ে যেতে হবে, কি করা , নীচের দিকে না তাকিয়ে ছোট লাফে পার হয়ে গেলাম, সবারই একটু ভয় ভয় লাগছিল, লারাম সাথে ধাঁড়ালো দাঁ নিয়ে গেছে বিধায় মাঝে মাঝে পাহাড়ি জঙ্গলের গাছ কেটে কেটে পথ বাহির করতে হচ্ছে, বোম জাতিরা ভাল শিকারীও, তাই তাদের সাথে সব সময় গুলতি থাকে, কিছু দূর যাওয়ার পর একটা ছোট ঝর্না দেখা পেলাম, কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে, ঝর্নার পানিতে হাত মুখ ধুয়ে, অাবার রওনা হলাম হাসিমের গানে গানে মহুয়ার গন্ধে অামারা যেন মাতাল হয়ে গেলাম, কি রকম অানন্দ পাচ্ছি বুঝাতে পারবো না, চলছি পাহাড়ী পথে অামরা ৫ জন ,কোন জন মানব নাই, পাখি অওয়াজে পুরো পাহাড় কম্পিত করে, মাঝে মাঝে বন্য পোকা মাকরের শব্দে যেন সজাগ রাখতে র্নিদেশ প্রদান করছে অামাে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ী গেসা পথ তবে খুব একটা ভয় লাগছে না, লারাম বললো সামনে পাহাড়ে একটা ঝর্না অাছে বড়, নাম চিংড়ী ঝর্না হয়ে অামরা দার্জিলিং পাড়ায় যাবো, তাহলে অামরা চিংড়ী ঝর্না দেখতে যাচ্ছি, এবার নীচের দিকে নামা শুরু করলাম,চলছি অামরা ক’জন দুর্গম পাহড়ী পথে, যেতে যেতে অামরা শুনতে পেলাম পাহাড়ী ঝর্নার শব্দ, যত কাছে যাচ্ছি ততো শব্দ অারো জোড়ে শুনা যাচ্চে, বড় বড় পাথরের পথ দু’দিকে পাহাড় ঝর্নার পানির পথ, কি বিশাল বিশাল পাতরের ভিতর পিচ্ছলে পথ ,পৌছে গেলাম, কি অপুরুপ সুর্ন্দয্যর জল ধাড়া মন পাগল করে দেয়, ঝর্না পাশে কিছুক্ষণ বসলাম, চলার পথে গাছ থেকে পাকা জামবুরা ফল নিয়ে ছিলাম, সবাই খেলাম, এতে পানি পিপাসাও কাটলো, অাবার শুরু হলো পথ চলা, উপরের দিকে উঠতে হবে, পথ অনেক বিপদ জনক, প্রয়োজন হলে মাটিতে হাত রেখে উঠতে হবে, অবশ্য লারাম বাদে বাকি সবার মাটিতে হাত রেখে উঠছে, কিছু করার নাই , কিছু দূর উঠার পরে অাবার সেই পাহাড় ঘেসা পাহাড়ি পথ, চলছি অামরা পাহাড়ি পথে, দূরে দেখা যাচ্ছে দার্জিলিং পাড়া, অামরা যে পাহাড়ে অাছি তার থেকেও উপরে, বুঝা যাচ্ছে অারো উচুঁতে উঠতে হবে, অাবার পথ চলা অাকাঁ বাকাঁ পথে চলছি অামরা ক’জন, কিছু পথ বুঝা যায় না যে পথ অাছে,বন্য গাছ গাছড়ায় পথ বন্ধ হয়ে যায়, তখন লারাম তার দাঁ দিয়ে গাছ কেটে পথের সন্ধান করে, অামরা কাছাকাছি চলে এসেছি দার্জিিলিং পাড়ায়, অনেক উচুঁতে পাড়া টি, ধূসড় , গাছ পালা হীন খুব সুন্দর যেন প্রকৃতি নিজেই ছবি একেঁছেন, লারাম একটু অাগেই পথ চলতে লাগলো, কিছু দূর যাওয়ার পর সেই স্বপ্নের দার্জিলিং পাড়ায় পৌছালাম, দেখি লারাম মধ্য বয়সী এক লোক নিয়ে দাড়িয়ে অাছে অামাদের জন্য, লোকটির নাম ‘লালা বোম’ , লালা বোম অামাদেরকে দেখে খুব খুশি হলো মনে হলো, লারাম অামাদেরকে নিয়ে লালার বাড়িতে তাঁর বারান্দায় বসলাম, লালা কে বললাম,অামরা কেওকারাডাং পাহাড়ের চূড়ায় উঠবো, লালা লারামকে পথ দেখায় দিল, যথারীতি অামরা কিছুক্ষণ রেষ্ট নিয়ে অামরা ৫ জন কেওকারাডাং এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম ।( তখন লালার বাবা হেড ম্যান ছিল পাড়ার,এখন লালা হে ড ম্যান)
দুপুর ছুইঁ ছুইঁ , অামরা ৫ জন চলছি অামরা পাহাড়ি পথে, দার্জিলিং পাড়া টা মূলত কেওকারাডাং পাহাড়ের পদতলে, অামাদের এক অদম্য উৎসাহে অামরা এগুচ্ছি বড় বিজয়ের অাশায়, অাগের মত প্রত্যেকের হাতেই বাশঁ, বড় বড় গাছ পালা তেমন নেই তবে ঝাউ গাছ, বন্য লতা গাছ ভরা পথের দুই পাশে, শুধু উপরে উঠা পথ, অাঁকা বাঁকা পথের মাঝে চলছি তো চলছি, দূর্গম কোন পথ নয়, শুধু উপরে দিকে উঠা, টানা ১ ঘন্টা উঠার পর দেখা পেলাম দূ কেওকেরাডাং চূড়া, মনে মধ্যে দোলা কখন পৌছবো সেই কাঙ্খিত গন্তব্যে, কি সুন্দর প্রকৃতির ভিন্নাস, পাহাড় গুলি মনে হচ্ছে যেন বড় বড় ডেউএর খেলা,সবুজ চাদরে মিলে অাছে অাকাশের দূর সীমানায়, সাদা মেঘে কালো মেঘের লুকচুড়ি খেলা, দূরে পাহাড়ে উপজাতিদের জুম চাষের বাঁশ বাধা ঘর, শিল্পির অাঁকা ছবি গুলিও হার মানায়, যত কাছে অাসছি মনে শিহরণ অারো পুলকিত হচ্ছে, কিছুক্ষনের মধ্যেই চূড়াঁয় পা দিবো, কে অাগে উঠবে চূড়ায় অস্থির হয়ে গেলাম, যাক অামরা উঠলাম সেই কাঙ্খিত চূড়ায়, দুটো হেলীপেড অার চূড়ায় সিমেন্ট বাধাই কিছু লেখা একটা সীল খন্ড, হ্যাঁ অামরা কেওকেরাডাং চূড়ায় দাড়িযে, অাকাশের দিকে তাকিয়ে অাল্লাহ্ কাছে শুকরিয়া অাদায় করলাম, বুক ভরা নিশ্বাস নিতে কেন জানি পারছি না, বুঝলাম অনেক উঁচুতে তো অক্সিজেন কম থাকে ,চূড়ায় কিছু পাহাড়ি ঘাস ফুল দেখতে পেলাম, পূর্বে দিকে নিচে অার্মিদের ক্যাম্প দেখতে পেলাম, দূরে থেকে দেখা যায় ছোট ছোট ঘর সাড়িঁঁ সাড়িঁ, উত্তর পূর্বে ইন্ডিয়ার মিজরাম প্রদেশ, কিছুক্ষণ রেষ্ট ও হাটাহাটি প্রায় অাধ ঘন্টা কাটালাম কেওকারাডাং পাহাড় চূঁড়ায় , অাবার অাস্তে অাস্তে প্রকৃতির সৌন্দরয্য দেখতে দেখতে নিচের দিকে নামা শুরু করলাম অামরা।
মাথার উপর সূর্য্য কঠিন গরম নামছি অামরা ৫ জন পাহাড়ি বুকে অাঁকা বাঁকা পথে মোট মুটি তাড়াতাড়ি অামরা দার্জিলিং পাড়া চলে অাসলাম, নামার পথ তো ! মনে হয় যেন পিছন থেকে কেউ ঠেলছে, লালা বোমের বাড়িতে উঠলাম লালা অামাদের বাশেঁর হাত পাখা দিল, অামরা ফিরে অাসবো লালা বোম অামাদের জন্য পেঁপে কেটে দিল পা বিছিয়ে অামমাদের অভিগ্যতা শেয়ার করলাম এবং বললাম অাপনারা এখানে রিসর্ট করেণ সবাই ঘুরতে অাসবে, তবে লালা কথাটা অামোলে নিলো মনে হচ্ছে, লালাদের বাসার অারো লোক জন ছিল, অামাদের কথা শুনছিল, একটা কাগজে অামাদের নাম ঠিকানা লিখে দিলাম, লালা অামাদের কে একটা বানরের কন্কাল মাথা উপহার দিল ( বানোরের মথা টি ঢাকা ইউনিভার্সিটি চারুকলায় স্কাপচার ডিপার্টমেন্টে গচ্ছিত অাছে ), লালার কাজ থেকে বিধায় নিয়ে এবার রওনা হলাম বগা লেক পাড়া উদ্দেশ্যে ,চলছি অামরা পাহাড়ি পথে হেলে ধুলে ৫ জন, হাসিমের গানে তালে তালে হাটা , বুঝতে পারলাম অামরা সবাই মনের জোড় অনেক হয়েছে, সূর্য্য পশ্চিম অাকাশে হেলে পরেছে, প্রকৃতির মাতাল করা গন্ধে গন্ধে অামরা প্রায় বিকাল ৪ টা দিকে বগা লেক পাড়া পৌছালাম, মস্তোন ভাই বললো যে ভাবে হোক অাজকের মধ্যে রুমা পৌছাতে হবে, কি করা, অার একদিন থাকার ইচ্ছা অামাদের ছিল, উপায় নাই, যেতেই হবে মোস্তান ভাই কাজ , লারাম, রিয়াল মুন অনেক রিকোয়েষ্ট করলো থাকার জন্য, তাছাড়া তারা বললো, পাহাড়ী পথ তাড়াতাড়ি সন্ধা হয়, পথ চিনতে সমস্যা হবে, নাছর বান্দা মেমাস্তান ভাই, যেতেই হবে, লারামকে অামাদের কাড়িরর ঠিকানা একটা কাগজে লিখে দিলাম, লারাম ও রিয়েল মুনের সাথে বিধায় নিয়ে, বগা লেক পাড়ার উত্তর দিক দিয়ে পাহারের নিচে মুরং পাড়া হয়ে চলতে লাগলাম, চলছি অামরা পাহাড়ী পথে, বিকাল ছুঁই ছুঁই দূরে কয়েকজন উপজাতি মাথা কাপড়ের বেল্ট দিয়ে ঘড়ে ঝুড়ি বেধে বগা লেক পাড়া দিকে অাসতে লাগেলো, কাছা কাছি অাসলে অামরা লারাম কথা বললাম,, ওরা অামাদের কে বললো তাড়াতাড়ি হাটতে হবে ঐ সামনের পাহাড় পার হলেই ঝিড়ি পথ, ঐ পথেই অামাদের যেতে হবে, সন্ধার অাগেই অামাদের সামনের পাহাড়টা পার হতে না হলে অামরা পথ হারায় ফেলবো, কি অার করা একটু জোড়েই হাটা শুরু করলাম, সূর্য্য পশ্চিম অাকাশে হেলে পরেছে, অামরা ছুটছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, কিন্তু অার পারলাম না, অন্ধকার অামাদের ঘ্রাস করলো, তবুও হাটছি মাঝ পাহাড়ে এসে অারো অন্ধকার হয়ে গেল, প্রকৃতির এক নিস্তব্দ ঝি ঝি পোকার অাওয়জে পুড় পাহাড় কম্পিত হতে লাগলো,চাদেঁর হালকা অালোর সাহয্যে চলতে লাগলাম, চাদেঁর অালো দূরে দুটি পথ দেখা দিলো, অামরা সবাই কনফিউজ হলাম, কোন পথে অামরা যাব, মোস্তান ভাই বললো এই পথটাই মোটা পথ, এখান দিয়েই যেতে হবে, অাস্তে অাস্তে চাদেঁর অালো অারো পরিষ্কার হলো, হাতে অামাদের টচ্ লাইট অাছে একটা, মোস্তান ভাই টচ্ লাইটটি নিলো অাগে অাগে মোস্তান ভাই, একটু ভয় ভয় লাগলো কারণ কোথায় ঘিড়ি খাত ,পাহাড়ী চলার পথ কিছুই দেখা যাচ্ছে না, শুধু টচ্ এর অালো দেখা যাচ্ছে, এক সময় খালি উপরের দিকে উঠছি, ৪৫ ডিগ্রীর মত মনে হলো, এতো খাঁড়া পথ তো অামরা অাসি নাই ! অামরা কি ভুল পথে অাসলাম,হ্যা অামরা পথ হাড়িয়ে ফেলেছি, এখন উপায় ! কোন ভয় পাওয়া যাবে না, এক জন অারেক জন কে সর্তক করলাম, কি করা মোস্তান ভাই ? মোস্তান ভাই বললো, নিচের দিকে নামতে হবে, অার ঝিড়ি পথ খুজতে হবে, পাহাড়ের ডালেই অামরা ৪ জন সিদ্ধান্ত নিলাম , খুব অাস্তে অাস্তে নামবো, এক রকম বসে বসে নামা শুরু করলাম, গুট গুটে অন্ধকার, পাহাড়ী পোকার কিট কিট শব্দ, অার মোস্তান ভাই টচ্ এর অালো, পাহাড়ী গাছের জন্য চাদেঁর অালো মাঝে মাঝে দেখা যায়, বেশী ভাগ সময় গুট গুটে অন্ধকার, প্রায় ঘন্টা দুই এক বসে বসে হাটলাম , চাড়িদিকে অন্ধকার, হঠাৎ মোস্তান ভাই বললো , দূরে ঝিরঝির পানি শব্দ শোনা যাচ্ছে, অাবার পাহাড়ী পোকার কিট কিট শব্দে অাবার বিলিন হয়ে যাচ্ছে, কিছুক্ষণ বসে পরলাম পাহাড়ি ডালের বড় গাছের গোড়ায়, অাহ্ কি কামড় ! গাছের গোড়ায় বসছি না, সেখানে পাহাড়ি লাল পিপঁড়ার কামড়, অামাকেই কামরালো ,কোন রকমে ঝাড়াটাড়া দিয়ে গাছের গোড়া থেকে সরে বসলাম, মোস্তান ভাই বললো, সবাই চুপ থাকেন, পানির অাওয়াজ অাবার পাওয়া যায় কিনা দেখি, হ্যা অামরা সবাই অাওয়জটা পেলাম, মনে একটা শান্তি অনুভব হলো, টচ্ এর বেটারিও মনে হয় শেষ ,নিবু নিবু করছে, যাক অাবার বসে বসে হাটা শুরু করলাম, ভভয় এবং বাচাঁর চেষ্টায় অামরা সবাই কাতর, ঘন্টা খানিক পরে অামরা পাহাড়ী পাথরে ঝিড়ি পথের সন্ধান পেলাম, গামছাটা পানিতে ভিজিয়ে শরীরটা মুছলাম সবাই, ক্লান্ত শরীর যেন কিছু মানছে না, অামি একটা বড় পাথরে হেলান দিয়ে বসে পরলাম, অার হাসিম, ভুট্টো এবং মোস্তান ভাই টচ্ এর মিট মিট অালো ও চাদেঁর অালোতে কিছু শুকনো গাছের ডাল পাতা জোগার করে তাতে অাগুন ধরালো , অার অামি ক্লান্ত শরীরে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি নিজেও টের পাই নাই ।
২৪/০৪/১৯৯৮ রোদের ঝাঁপটা মখে পরতেই ঘুম ভেঙ্গে গেল, দেখলাম বন্ধু হাসিম ও ভূট্টো ঝিড়ি পথের পানি তে হাত মুখ দোচ্ছে, মোস্তান ভাই কে দেখতে পেলাম না ! অামিও উঠে ঝিড়ি পথের পানিতে কাজ সারলাম, স্নিগ্ধ সকাল , অাশে পাশে বড় বড় পাহাড় দেখে থমকে গেলাম, এ পাহাড়ের উপর দিয়েই তো অাসলাম অামরা, রাত তো বুঝতে পারি নাই কি খাড়া পাহাড় অামরা পাড়ি দিয়ে এসেছি, বলতে না বলতেই মোস্তান ভাই এসে বললো, অামরা যেতে পারবো পথ পেয়েছি, রুমা বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করলাম, চলছি অামরা পাহাড়ী পথে, দূরে ৩/৪ জন উপজাতির দেখা পেলাম, পাহাগের উপর থেকে নামছে, বুকে অারো সাহস পেলাম, সকালের পাহাড় পথে চলা অন্যরকম মজা, বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়া, শিশির ভেজা পথ, প্রায় ঘন্টা দুই এক চলার পরে দূরে পাহাড়ে নিচে রুমা বাজার দেখতে পেলাম, ঐ উপজাতি মানুষ গুলো অামাদের কে ক্রস করে চলেগেল, ওদের হাটা অামাদের হাটা অনেক পার্থক্য অাছে, ঘন্টা খানেকের মধ্যে অামরা রুমা বাজারে পৌছেগেলাম, বাজারে হোটেলে অালু ভর্তা অার সব্জি দিয়ে পেট পুরে ভাত খেলাম অামরা ৪ জন, এবার বিধায়ের পালা, মোস্তান ভাই এর সাথে বিধায় নিয়ে রুমা বাজারে নৌকার ঘাটে অাসলাম, তারপর নৌকা, চান্দেঁর গাড়ী এবং বাসে করে সোজা ঢাকায়। ঢাকায় এসে ২/৩ শরীরটা কেমন যেন জর জর ভাব লাগতে ছিল, জর যেন নামছেই না ৩ দিনের মাথায় জর প্রায় ১০৩/ ১০৪ ডিগ্রী , লেন্ড ফোনে ফোন দিলাম বাল্য বন্ধু ড.জাহিদ কে, সব খুলে বললাম, জাহিদ তাড়াতাড়ি ব্লাড টেষ্ট করতে বললো, ৬ দিনের মাথা বাসায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলাম, অার বলতে পারবো না, ৩ দিন পর গ্যান ফিরলো,মৃতু্যর হাত থেকে অাল্লাহ্ বাচাঁয় নিল অামাকে, বুঝলাম হসপিটালে ( মনোয়ারা হসপিটাল ) তখন সব জানতে পারলাম, অামার CEREBRAL MALARIA হয়ে ছিল। ড.জাহিদ এবং ড.মজিবর রহমান সহয়োগিতায় অাল্লাহ্ দয়ায় বেচেঁ গেলাম। এ জন্য সারা জীবন বন্ধু ড.জাহিদের কাছে অামি কৃতজ্ঞ ,তারপর থেকে চলছি অামি ঢাকার পথে….