সময় সংবাদ রিপোর্টঃ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রায় দেড় কিলোমিটার সীমানাপ্রাচীর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে ব্যবস্থাপক মো. আবদুল্লাহ আল ফারুকের বিরুদ্ধে। বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মূল্যের দীর্ঘ ওই প্রাচীরটি তিনি বিক্রি করে দেন মাত্র ১৫ লাখ টাকায়। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় প্রাচীরের ৩০০ ফুট ভাঙার পর। এক কান, দুকান হয়ে খবর পৌঁছায় বাংলাদেশ বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যানের কাছে। তার নির্দেশে দেয়াল ভাঙার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলে বিপাকে পড়েন সেই ব্যবস্থাপক। নিলাম ছাড়াই দেয়াল বিক্রি ও ভাঙার ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করেন।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক মো. আবদুল্লাহ আল ফারুক অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। সময় সংবাদ লাইভকে তিনি বলেন, ‘বিমানবন্দরের নিরাপত্তাজনিত কারণে ইঞ্জিনিয়ারিংবিভাগের সিভিল ডিভিশনের অনুমতি সাপেক্ষে দেয়ালটি অপসারণ করা হয়। বিষয়টি কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রকল্প পরিচালকও (পিডি) অবগত।’ দেয়াল বিক্রির অভিযোগ অসত্য ও কাল্পনিক দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘একটি মহল আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ কক্সবাজার বিমানবন্দরের পিডি ইউনুস ভূঁইয়া অবশ্য বলেন, ‘ওই সীমানাপ্রাচীরটি ভাঙা ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না।’ অভিন্ন মন্তব্য করে কক্সবাজার বিমানবন্দরের সিভিল ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সোহেল রানাও সীমানাপ্রাচীরটি ভাঙার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। বেবিচক সদরদপ্তর সূত্র বলছে, চেয়ারম্যানের দপ্তরে গত ৫ সেপ্টেম্বর একটি প্রতিবেদন দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে-৩৫ প্রান্তে পুরনো জীর্ণ সীমানাপ্রাচীরের পরিত্যক্ত ইট ও অন্যান্য মালামাল নিলামের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু সদরদপ্তর ওই নিলাম আবেদনে সাড়া না দেওয়ায় ব্যবস্থাপক আবদুল্লাহ ফারুক নিজেই খালেক নামে স্থানীয় এক ঠিকাদারের কাছে সীমানাপ্রাচীর বিক্রি করে দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বেবিচক সদরদপ্তরের প্রশাসনিক শাখা থেকে দেয়াল ভাঙার কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে ওই ব্যবস্থাপকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এর পরই ঘটনা ধামাচাপা দিতে নানামুখী কৌশল অবলম্বন করেন আবদুল্লাহ আল ফারুক। জবাবে গত ২৫ সেপ্টেম্বর সদরদপ্তরে একটি প্রতিবেদন দেন। এতে উল্লেখ করা হয়- বিমানবন্দরে উন্নয়নের স্বার্থে রানওয়ের পশ্চিম পাশে ও মীর আক্তার কোং লিমিটেডের পরিত্যক্ত জায়গা মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী প্যারালাল টেক্সিওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়ায় নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকা বাড়ানো প্রয়োজন। নিয়মানুযায়ী রানওয়ের উভয়পাশে ৫০০ ফুট এলাকা বাধা মুক্ত থাকা প্রয়োজন। কিন্তু রানওয়ের পশ্চিম পাশে প্রায় আট ফুট উঁচু সীমানাপ্রাচীর থাকায় আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দরে উন্নতিতে তা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট হবে। তা ছাড়া অত্যন্ত পুরনো, জীর্ণ সীমানাপ্রাচীরের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙা থাকায়, বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় হুমকি সৃষ্টি হচ্ছে। তাই বিমানবাহিনীর নবনির্মিত অ্যাপ্রোনের সঙ্গে রানওয়ে-৩৫ প্রান্তের সংযোগে নির্মিত টেক্সিওয়ের জন্য প্রায় ৩০০ ফুট সীমানাপ্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, পিঅ্যান্ডকিউএস সার্কেল ও প্রকল্প পরিচালকের পরামর্শেই দেয়াল ভাঙা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ভেঙে ফেলা সব মালামাল সংরক্ষণ করা হয়েছে এবং যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই তা নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রানওয়ের পশ্চিম পাশে বাকি প্রায় ৮০০ ফুট সীমানাপ্রাচীর অক্ষত আছে। সেটিতেও অবশ্য নিরাপত্তা ও অপারেশনাল কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই জরুরি ভিত্তিতে বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকার আয়তন বাড়াতে উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় রানওয়ের পশ্চিম পাশে ও মীর আক্তার কোং লিমিটেডের পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন অস্থায়ী স্থাপনা ও বাকি সীমানাপ্রাচীর অপসারণ জরুরি। পুরনো মালামাল নিলাম সংক্রান্ত সব কার্যক্রম গ্রহণের জন্য সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে।বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশে অবস্থিত সীমানাপ্রাচীর বিক্রির অভিযোগটি আমার কানেও এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’সময় সংবাদ লাইভকেকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ের পশ্চিম পাশে অবস্থিত সীমানাপ্রাচীর বিক্রির অভিযোগটি আমার কানেও এসেছে। এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’