সময় সংবাদ রিপোর্টঃ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য নানা কৌশল গ্রহণ করেছে টানা তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল আওয়ামী লীগ। মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা এবারো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আন্তর্জাতিক বিশ্বকে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর জন্য নতুন করে হিসেব করতে হচ্ছে। সরকারি সমর্থনে বিএনপির বিকল্প হিসেবে ‘তৃণমূল বিএনপি’ ও ‘বিএনএম’সহ বিরোধী দল ও জোট গঠন করেও নির্বাচনী পালে হাওয়া তুলতে পারছে না শাসক দল। এ দিকে মনোনয়ন জমা দেয়ার সময়সীমা শেষ হলেও ক্ষমতাসীন জোটের আসন ভাগাভাগি এখনো হয়নি। এ নিয়ে জোটের শরিকদের মধ্যে নানা ক্ষোভ ও হতাশা কাজ করছে। অবশ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সামনে রেখে জোট নেতাদের ডেকেছেন জোট প্রধান শেখ হাসিনা। জোটের আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আজকে সন্ধ্যায় গণভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র বলছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণ করার ব্যাপারে বছরের শুরু থেকেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র ও সংস্থা সরকারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। এ দিকে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির মধ্যে দ্বন্দ্ব মারাত্মক আকার ধারণ করায় তাদের ওপর এবার আস্থা পায়নি আওয়ামী লীগ। ফলে বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না- এমন চূড়ান্ত আভাস পেয়েই আগেভাগে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল ‘তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএমের মতো দলকে নিবন্ধন সহযোগিতা দিয়ে বিএনপির বিকল্প হিসেবে রাজনীতির মাঠে দাঁড় করায়। তৃণমূলে জনসমর্থন ও নেতাকর্মী না থাকায় যদিও দল দু’টি নির্বাচনে ৩০০ আসনে মনোনয়ন দিতে সক্ষম হয়নি। তৃণমূল বিএনপি দিয়েছে ১৫১টি এবং বিএনএম দিয়েছে মাত্র ৪৯টি আসনে মনোনয়ন। এ ছাড়া মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির সাথে আসন সমঝোতা না হলেও তারা ৩০০ আসনে ৩০৪ জন দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। ক্ষমতাসীন জোটের শরিক জেপি ২০টি, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল ৬টি, গণতন্ত্রী পার্টি ১২টি, ন্যাপ ৬টি, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩৩, জাসদ ৯১ ও তরিকত ফেডারেশন ৪৭টি আসনে মনোনয়ন দিয়েছে। বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে একটি জোট নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ওই জোটের প্রার্থীরা কল্যাণ পার্টির অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তারা ৩০০ আসনের মধ্যে মাত্র ১৮টি আসনে মনোনয়ন দিতে সক্ষম হয়েছে।
আওয়ামী লীগ ও জোটের একাধিক শীর্ষ নেতার সাথে আলাপকালে জানান, বিএনপি ও তার মিত্ররা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে পেক্ষাপট ভিন্ন হতো। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় এবার আগেভাগে আসন সমঝোতা করা হয়নি। ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ অতীতে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও এবার সেই সুযোগ থাকছে না। নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য জোটের প্রত্যেক দল তাদের মার্কা নিয়ে নির্বাচন করবে। ইতোমধ্যে ৪৪টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ২৯টি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। এ ছাড়া নির্বাচন প্রাণবন্ত করার জন্য দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অতীতের মতো বহিষ্কারের পন্থা বাদ দিয়ে মাঠে জনপ্রিয়তা যাচাই করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ইতোমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ৭৪৭ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে জোটের শরিকদের যেসব আসনে ছাড় দেয়া হবে ওই সব আসনেও নির্বাচন হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জয়লাভ করতে হবে। তবে কৌশলে ছাড় দেয়া আসনে জোট প্রার্থীদের জিতিয়ে আনার সুযোগ করে দেয়া হবে। মূলত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য এই কৌশল নেয়া হয়েছে।
ক্ষমতাসীন জোটের আসন বণ্টনের বিষয়ে জোটের শরিক গণআজাদী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট এস কে শিকদার গতকাল বলেন, ৩০ বছর ধরে রাজনীতি করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অবিচল থাকা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটে আছি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে। গত নির্বাচনের সময়ও তিনটি আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু মূল্যায়ন করা হয়নি। তিনি বলেন, আগামীকাল (আজ সোমবার) গণভবনে সন্ধ্যা ৬টায় শরিকদের ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী ও জোটনেত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে আসন বণ্টনের বিষয়ে চূড়ান্ত হতে পারে। আশা করি, জোটনেত্রী আমাদের দলকে মূল্যায়ন করবেন।
জোটের আরেক শরিক জাসদের সহসভাপতি মো: শহীদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য মূলত এবার আগেভাগে জোটের আসন বণ্টন হয়নি। বিএনপি ও তার শরিকরা যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করত তাহলে আগেভাগেই জোটের সাথে সমঝোতাও হয়ে যেত। তিনি বলেন, এবার মূলত নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে প্রত্যেক দল তাদের মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এভাবে জনপ্রিয় প্রার্থীরা ভোটের মাঠে জয়ী হয়ে আসবে। আর কিছু আসনে জোটের জন্য কৌশলে ছেড়ে দেয়া হবে।
ক্ষমতাসীন জোটের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না অশুদ্ধ হবে অথবা একতরফা হবে এ কথা আসছে কেন? নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টি দল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সবাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নয়। এ সময় তিনি মহাজোটের শরিকরা আওয়ামী লীগের কাছে আসন ভাগাভাগির বিষয়ে আগ্রহ দেখালে সে বিষয়ে আলোচনার সুযোগ রয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে প্রকৃতপক্ষে বিরোধী দল হয়ে ওঠার এখনই মোক্ষম সময়।