সময় সংবাদ রিপোর্ট: রমজান মাস হচ্ছে আল্লাহতায়ালার নৈকট্যলাভের বিশেষ মৌসুম। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে যাচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। পশ্চিমাকাশে রমজানের চাঁদ উদিত হলেই আরম্ভ হবে এই মহিমান্বিত মাস। এই মাসে প্রত্যেক বালেগ ও সক্ষম মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর রোজা রাখা ফরজ।সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জন করাই হলো রমজানের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’রোজায় পানাহার এবং শারীরিক চাহিদাকে সংযত করার মাধ্যমে এবং আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায় জীবন পরিচালনার মাধ্যমে মানুষের মাঝে এক আধ্যাত্মিক বোধ তৈরি হয়। ফলে মানুষ যাবতীয় অহঙ্কার, কুপ্রবৃত্তি ও নফসের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর প্রিয় বান্দায় পরিণত হয়। যার প্রেক্ষিতে রোজাদারের জন্য ইহজগতের শান্তি, পরলৌকিক কল্যাণ ও মুক্তির সনদ ঘোষিত হয়।
রোজা ফরজ হয় হিজরি দ্বিতীয় সালে। রোজার তাৎপর্য সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আসে তখন জান্নাতের সব দরজা উম্মুক্ত করে দেওয়া হয় এবং মাসব্যাপী তা খোলা থাকে, কোনো দরজাই বন্ধ করা হয় না।’রমজানের প্রস্তুতিকে একশ্রেণির মুসলমান বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকেন, আবার অন্য একটি শ্রেণি রয়েছেন যারা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। মুসলমান হিসেবে সবার জন্য প্রয়োজন রমজানের প্রস্তুতির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে যথাযথভাবে রমজানের ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল হওয়া। কারণ এ মাসের ইবাদত-বন্দেগির সওয়াব অন্য সব মাসের ইবাদত-বন্দেগি থেকে ৭০ গুণ বেশি।মহান আল্লাহ বলেন- ‘তোমাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই রোজা রাখে।’ -সুরা বাকারা-১৮৫।কোরআনুল কারিম ও সহিহ হাদিসে এ মাসের অনেক ফজিলত ও গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। এই মাসের যথাযোগ্য মর্যাদা দান ও এর থেকে পূর্ণাঙ্গ ফায়দা অর্জনের জন্য চাই যথেষ্ট পূর্বপ্রস্তুতি। রাসূলুল্লাহ (সা.) রজব মাসের শুরু থেকেই রমজানের জন্য নিজে প্রস্তুতি নিতেন এবং সাহাবাদেরও প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিতেন।
রমজান মাসের প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাস থেকেই নফল রোজা রাখা। হাদিসে বর্ণিত আছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (সা.)কে রমজান মাসের রোজা ছাড়া অন্য কোনো মাসের রোজা এত অধিক গুরুত্বসহকারে পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাস ছাড়া অন্য কোনো মাসে অধিক পরিমাণে রোজা পালন করতে দেখিনি।’ – বুখারি : ১৮৬৮; মুসলিম :১১৫৬।
শাবান মাসের রোজা রমজান মাসের রোজা পালনে মন ও শরীরকে প্রস্তুত করে এবং উৎসাহিত করে।মুসলিম বান্দা তার রবের কাছে বেশি বেশি দোয়া করবে যাতে তিনি তাকে রমজান মাস পাওয়ার তাওফিক দান করেন, ইসলামের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং শারীরিকভাবে সুস্থ রাখেন, সর্বদা যেন তার আনুগত্য করার এবং তার হুকুম মতো আমল করার তাওফিক দান করেন।
হাদিস শরীফে এসেছে, রজব মাস এলে নবীজি (সা.) আল্লাহর দরবারে দোয়া করে বলতেন, হে আল্লাহ, আমাদের রজব ও শাবান মাসে বরকত দান করুন আর রমজান মাস পর্যন্ত আমাদের জীবন দান করুন।’ -বায়হাকি, শুআবুল ইমান ৩৭৫।রমজান মাস মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহ তায়ালার নিয়ামতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি নিয়ামত। কারণ এ মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমজান মাস হলো কোরআনের মাস। এ মাসে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। তাই এ মাসের আগমনে মনে খুশি ও আনন্দ অনুভব করা।
বিগত রমজানে অসুস্থতা বা সফরের কারণে কোনো রোজা কাজা হয়ে থাকলে, সেসব রোজা আদায় করে নিজেকে মুক্ত করে ফেলা।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু সালামাহ (রা.) বলেন, আমি হযরত আয়েশাকে (রা.) বলতে শুনেছি, ‘আমার ওপর বিগত রমজানের রোজা বাকি থাকত, যার কাজা আমি শাবান মাসের পরে আদায় করতে পারতাম না।’- বুখারি : ১৮৪৯; মুসলিম : ১১৪৬।আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহ.) বলেন, ‘হজরত আয়েশা (রা.)-এর হাদিস প্রমাণ করে যে, এক রমজানের অনাদায় রোজা পরের রমজান আসা পর্যন্ত বিলম্ব করা জায়েজ নেই। অর্থাৎ এক রমজানের কাজা রোজা পরবর্তী রমজান আসার পূর্বেই আদায় করতে হবে।’ -ফতহুল বারি : ৪/১৯১।হজরত সালামাহ ইবনে কুহাইল (রা.) বলেন, শাবান মাসকে কারীদের মাস বলা হতো। হজরত আমর ইবনে কাইস (রা.) শাবান মাস শুরু হলে তার দোকান বন্ধ করে কোরআন তিলাওয়াতের জন্য অবসর গ্রহণ করতেন। তাই রমজান মাসে বেশি বেশি কোরআন পাঠের প্রস্তুতিস্বরূপ এখন থেকেই কুরআন তেলাওয়াত করার অভ্যাস করা।
এখন থেকে নিয়ত বা সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আল্লাহ যদি সুস্থ রাখেন এবারের রমজানের সব রোজা পরিপূর্ণভাবে রাখব। রমজানের রোজা পালনে কোনোরূপ অলসতা করব না। পূর্ণ আন্তরিকতা ও যাবতীয় শর্তাবলি মেনে চলেই সকল রোজা পালন করব।রোজা ফরজ হয়েছে পরিবারের এমন প্রত্যেক সদস্যকে রোজা পালনে উৎসাহিত করতে হবে। ছোটদেরও দু-একটি রোজা রাখিয়ে অথবা সেহরি ইফতারিতে শামিল করিয়ে রোজার প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। রমজান মাস শুরু হওয়ার আগের মাসে কয়েকটি নফল রোজা রেখে অভ্যাস তৈরি করা যেতে পারে।এ ছাড়া রমজান আসার আগেই রোজা সম্পর্কিত মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা জরুরি। এ মাসে গরিব ও অসহায়দের মাঝে বেশি বেশি করে দান-সদকা করতে হবে। কেননা এমাসে দান-সাদকার সওয়াব অন্য মাসের চেয়ে বহুগুণে বেশি পাওয়া যায়।নফল নামাজ পড়ার অভ্যাস করা:
তারাবির নামাজ একটি বরকতময় ইবাদত। তাই প্রতিদিন যেন তা পূর্ণভাবে আদায় করা হয়, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। সাহরি খাওয়ার পূর্বমুহূর্তে নিয়মিত অথবা মাঝেমধ্যে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায়ের চেষ্টা করতে হবে।নিজের প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কেননা রোজার অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, মানুষকে নফসের দাসত্ব থেকে ফিরিয়ে আল্লাহর দাসত্বের অনুগামী করা।এভাবে পরিকল্পনার আলোকে যদি আমরা মাহে রমজান মাস অতিবাহিত করতে পারি তাহলেই এই মাসের পরিপূর্ণ হক আদায় হবে এবং রোজার প্রকৃত ফজিলত অর্জিত হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুক।