সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ প্রেমের ফাঁদে ফেলে যুবতীদেরসঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন রাতুল। এরপর সেই দৃশ্য ওই প্রেমিকারই মোবাইলে ধারণ করতে। তিনি পরে সুযোগ বুঝে সেই মোবাইল নিয়ে গোপনে সটকে পড়তেন।ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইয়াসিন ওরফে রাতুল। মাত্র নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা তার। কম বয়সেই বহুমুখী প্রতারণার কৌশলে দক্ষ হয়ে ওঠেন তিনি।
সেই মোবাইল থেকে ভুক্তভোগীর সব ভিডিও কন্টেন্ট এবং ফেসবুক আইডির দখল নিয়ে রাখতেন রাতুল। সেটা দেখিয়ে দিনের পর দিন ওইসব তরুণীদের ব্ল্যাকমেইল করতেন।এমন একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার পুলিশ সেন্টার সিআইডি গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানী বাংলামোটর এলাকা থেকে মোহাম্মদ ইয়াসিন রাতুলকে গ্রেপ্তার করে। সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার মো. জিসান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, গতকাল ১৬ নভেম্বর শাহজাহানপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকালে তার কাছে থাকা প্রতারণা এবং ব্ল্যাকমেইলে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল সেট, দশটি সিম উদ্ধার হয়। যার ভেতর চারটি ফেক ফেসবুক আইডি এবং নয়টি জিমেইল একাউন্ট পাওয়া যায়।
সিআইডি সূত্রে জানা যায়, রাতুল নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে ঢাকার মিরপুরে চলে আসেন। প্রথমে স্থানীয় এক নেতার বাসায় বয় হিসেবে কাজ নেন। পরবর্তীতে মোহাম্মদপুর রিংরোডে এক শো রুমে সেলসম্যানের চাকরি নেন। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ান। শারীরিক সম্পর্ক ও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কাজে জড়িয়ে পড়েন।
রাতুলের প্রতারণার স্বীকার এমন একজন নারী সিআইডি সাইবার ক্রাইমে কাছে তার অভিযোগে জানিয়েছেন। সেই অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেছেন, ‘৬ মাস ধরে তার সাথে আমার পরিচয়, ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আমরা দেখা করি। একদিন আমাকে চাঁদপুর যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। আমার দুবন্ধুসহ রাতুলের সাথে লঞ্চে চাদপুর যাই। লঞ্চে থাকাকালীন আমার বন্ধুদের কোন একসময়ের অনুপস্থিতিতে আমার মোবাইলে কৌশলে নগ্ন ভিডিও ধারণ করে।তিনি বলেন, ‘আমরা লঞ্চ থেকে ঢাকায় নামার পর রাতুলের মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকায় আমার মোবাইল নিয়ে ফোন করার কথা বলে সদরঘাট থেকে সে সটকে পড়ে। আমি অনেক সময় তার জন্য অপেক্ষা করি কিন্তু সে আর আসে নাই।’
ওই নারী অভিযোগে আরও বলেন, ‘রাতুল আমার মোবাইলে থাকা বিকাশের ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেয় এবং পরেরদিন ন্যুড ভিডিও দিয়ে আমাকে হুমকি দেয় যে ২৫ হাজার টাকা না দিলে আমার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দিবে। আমার ফেসবুক আইডিও সে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। সে আমাকে এবং আমার মা বাবাকেও ফোন করে চাপ দেয় টাকার জন্য। বলে, টাকা না পেলে আজ ৪টার পর সে ভিডিও ছড়িয়ে দিবে।’
এছাড়া আরও এক ভুক্তভোগী নারীর তথ্য পায় সাইবার ক্রাইম ইউনিট। ওই নারী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালযের এক ছাত্রী। ছয় মাস আগে ভিকটিম তার ফেসবুক একাউন্টে একজন ইউটিউবার মেয়ের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তানজুমা আফরোজ নামের একজন মিডিয়া ব্যক্তির সন্ধান পায় যা আসামি রাতুলেরই তৈরিকৃত ফেক আইডি। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করেন। প্রথমে ফেসবুক চ্যাটিং এবং পরবর্তীতে ফোনালাপ হয়। উক্ত ফোনালাপগুলোতে আসামি বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে ভিকটিমের সঙ্গে মেয়ে কণ্ঠে কথা বলেন। পরবর্তীতে তানজুমা আফরোজ নামক ফেক আইডিটি আসামি রাতুলকে ভিকটিমের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দেয়।
এভাবে ভিকটিমের সঙ্গে উক্ত আইডিধারী আসামি সুসম্পর্ক তৈরি হয়। পরবর্তীতে এই সম্পর্ক প্রেমের রূপ লাভ করে। রাতুল এমন বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে ভিকটিমদের বিশ্বাস আস্থা অর্জন করে।আসামি ভিকটিমদের ভিডিও কলে আসার প্ররোচনা দেয় পরবর্তীতে সেই ন্যুড ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখে। এরপর আসামি ভিকটিমদের দেখা করার জন্য ডেকে আনে, প্রথম দেখাতেই সে ভিকটিমের মোবাইল ফোন কৌশলে চুরি করে পালিয়ে যায়। চুরিকৃত মোবাইল থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে ফরমেট দিয়ে সে মোবাইল বিক্রি করে দেয়।বিক্রির আগে ভিকটিমের ফোনের ফেসবুক, জিমেইল একাউন্টে দখল করে নেয়। সেই হ্যাককৃত ফেসবুকের সাহায্যে পরবর্তী কোন অন্য এক ভিকটিমকে টার্গেট করে।
সিআইডি জানায়, সাইবার পুলিশ সেন্টার সিআইডি এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আসামিকে শনাক্ত করে। এরপর বাদীর মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সিআইডি সাইবার মনিটরিংয়ের একটি বিশেষ টিম অভিযুক্ত রাতুলকে গ্রেপ্তার করে। এসময় তার মোবাইল থেকে অনেক মেয়ের ন্যুড কন্টেন্ট পাওয়া যায়।
এছাড়া রাতুলের মোবাইলে ফেক কল এবং ভুয়া হিস্ট্রির অ্যাপসসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন টেকনলজি বিষয়ে প্রচুর তথ্য পাওয়া যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।