Header Border

ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (হেমন্তকাল) ১৩.২৭°সে

বারবার আটকে যাচ্ছে পদোন্নতি,বাড়ছে ক্ষোভ-হতাশা !

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ  কর্মজীবনে নেই কোনো দুর্নাম; যোগ্যতা ও দক্ষতায় ঘাটতি নেই। তারা কেউ সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত বলে প্রতিষ্ঠিত- এমনটিও নয়। তবু এমন অনেকের পদোন্নতি আটকে যাচ্ছে। বারবার কেন পদোন্নতি আটকে, তাও জানেন না বঞ্চিতদের অনেকেই। ফলে অনেক কর্মকর্তাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। ক্ষোভ থেকে অনেকে কর্মস্থলে ঠিকমতো মনোনিবেশ করতে পারছেন না।

সব যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও কেন তারা পদোন্নতি বঞ্চিত, এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে মোটাদাগে চারটি কারণ জানা গেছে। এর মধ্যে আছে- আঞ্চলিক বিবেচনা, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার গুজব, ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সখ্যতা বা পরিচয়ের ঘাটতি এবং তাদের বিষয়ে নেতিবাচক প্রতিবেদন। তা ছাড়া ভালো কাজ করে আলোচনায় আসা অনেক কর্মকর্তাও সময়মতো পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হওয়ার নজির আছে। এতে প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে মনে করেন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা।

পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কেএম আলী আজম  বলেন, পদোন্নতি দেওয়ার একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা আছে। আমরা নীতিমালার ভেতরে থেকেই পদোন্নতি দিচ্ছি। নীতিমালার বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব পদে ৩৮৭ জন যোগ্য প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ৯২ জনের পদোন্নতির পর পদোন্নতিপ্রত্যাশী ১৫ ও ২০ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিসিএস ১৫ ব্যাচকে অতিরিক্ত সচিব এবং ২০ ব্যাচকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। সততা ও যোগ্যতা দেখে পদোন্নতি দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছেন এ দুই ব্যাচের কর্মকর্তারা।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতেই পদোন্নতি হয়। পদোন্নতির জন্য এসএসবি আছে। বোর্ডের সদস্যরা কর্মকর্তাদের প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে, মানদণ্ড ঠিক করে পদোন্নতি দেন। কিন্তু সব কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হয় না। কারণ আমরা প্রশাসনকে পিরামিড কাঠামোয় রাখতে চাই।

কর্মকর্তাদের ভাষ্য, পদোন্নতি নিয়ে সরকারের অনুশাসন হচ্ছে- চাকরিতে প্রবেশ করার পর কর্মকর্তাদের দক্ষতা দেখেই পদোন্নতি দিতে হবে। তবে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। কিন্তু সরকারের এ অনুশাসন ঠিকমতো মানা হচ্ছে না।

বারবার পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়া একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, ছাত্রজীবনেও কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না। চাকরিজীবনেও সরকারবিরোধী কোনো দলের সঙ্গে ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। অথচ পদোন্নতির সময় গোয়েন্দা প্রতিবেদন আমলে নিয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত করা হয়েছে।

বঞ্চিত অপর একজন বলেন, অনেক সময় জেলা বিবেচনায় অনেক যোগ্য কর্মকর্তা পদোন্নতিতে পিছিয়ে থাকেন। অন্তত চারটি জেলার কর্মকর্তারা পদোন্নতি ও ভালো দপ্তরে পদায়নে পিছিয়ে আছে বলে অভিযোগ। অথচ কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কিংবা সরকারবিরোধী দলের পৃষ্ঠপোষক হলেও ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে ঠিকই পার পেয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ আছে- সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সদস্যদের সঙ্গে ভালো পরিচয় ও সম্পর্ক থাকলে পদোন্নতির সময় সুবিধা মেলে। যাদের পরিচয় নেই তারা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। এবার যারা অতিরিক্ত সচিব হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পরিচিত বলে গুঞ্জন আছে।

একজন যুগ্ম সচিব বলেন, ব্যাচভিত্তিক সংগঠন এবং বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারলে পদোন্নতিতে এগিয়ে থাকা যায়। তারা ভালো ডেস্কে পদায়নও পান। যারা নেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে পারেন না, তাদের কপাল খারাপ।

অবশ্য কর্মকর্তাদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসএসবির একজন সদস্য। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের এসিআর ও সামগ্রিক যোগ্যতা দেখেই পদোন্নতি দেওয়া হয়। অন্য কিছু বিবেচনার সুযোগ নেই। পদোন্নতিবঞ্চিতরা ক্ষোভ থেকেই এমন অভিযোগ করেন।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না পাওয়ার বেদনা অসীম। পদোন্নতিবঞ্চনা প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীর সেবার স্পৃহা, দায়িত্ব পালনের আগ্রহ নষ্ট করে তাকে হতাশায় নিমজ্জিত করে। এর ফল সুদূরপ্রসারী। পদোন্নতি বঞ্চনা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। রাজনৈতিক, আঞ্চলিক কিংবা ব্যক্তিগত বিবেচনা কখনই পদোন্নতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পারে না।

চরম হতাশার স্বর উঠে এলো বিসিএস ১১ ব্যাচের একজনের কণ্ঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ কর্মকর্তা বলেন, আমার ব্যাচমেটরা অতিরিক্ত সচিব হয়ে এখন সচিব হওয়ার পথে। অথচ আমি পড়ে আছি যুগ্ম সচিবের টেবিলে। ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। ব্যাচমেটের অধীনেই দীর্ঘদিন কাজ করছি। ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে বাসায় আর না ফিরি…।

১৯৮২ বিসিএসের এক কর্মকর্তা জানান, তিনি ব্যাচে মেধাতালিকায় ছিলেন দ্বিতীয়। কিন্তু কথিত রাজনৈতিক তকমা তাকে পদোন্নতিবঞ্চিত করেছে। যুগ্ম সচিব হিসেবেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অবসর নিতে হয়েছে তাকে। আত্মীয়স্বজনদের কাছে বড় মুখ থাকল না। স্বজনরা মনে করে কর্মজীবনে দুর্নীতির কারণে হয়তো তার পদোন্নতি হয়নি। তার মতো পদোন্নতি বঞ্চনার দুঃখ নিয়ে প্রতিবছরই চাকরিজীবন পার করছেন বহু কর্মকর্তা।

জনপ্রশাসনবিষয়ক একাধিক গ্রন্থের রচয়িতা সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, বলা হয় প্রশাসনে দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তার অভাব। অথচ বাস্তবতা হলো প্রশাসনে যোগ্য, দক্ষ ও সৎলোকের অভাব নেই। অথচ তারা রাজনৈতিক নোংরামির কারণে পদোন্নতি পান না এবং ভালো দপ্তরে পদায়নও পান না। এতে করে প্রশাসন চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত প্রশাসন গড়তে হলে রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কর্মকর্তাদের ভালো দপ্তরে পদায়ন ও পদোন্নতি থেকে বাদ রাখতে হবে। কারণ দলীয় সমর্থক দিয়ে ভালো প্রশাসন হয় না।

সম্প্রতি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির যে অভিযোগ উঠেছে তা জানতে এসএসবির সভাপতি ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

তবে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এসএসবি নিশ্চয়ই যোগ্যতা বিবেচনা করেই পদোন্নতি দিচ্ছে বলে আমি মনে করি।

পদোন্নতি বঞ্চনার আলোচিত তিন ঘটনার মধ্যে ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে বেশ কিছু অভিযান চালিয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হন মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী। এর আগে ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মালিকানাধীন কোকো-৩, ৪ ও ৫ জাহাজ আটক করেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মালিকানাধীন কিউসি স্টার, কিউসি পেইনটেইন ও কিউসি অনার জাহাজকে বন্দর আইন অমান্যের অভিযোগে জব্দ করেন। একই বছর সাকা চৌধুরীর প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে থাকা ৫০ কোটি টাকার সরকারি জমিও তিনি উদ্ধার করে সাহসের পরিচয় দেন। বর্তমান সরকারের সময় দুদকের মহাপরিচালক হওয়ার পর একের পর এক দুঃসাহসিক অভিযান চালানো অবস্থায় তাকে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর অধিদপ্তরে বদলি করা হয়। সচিব হতে পারেননি ১৯৮৫ বিসিএস ব্যাচের চৌকস এই কর্মকর্তা।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভেজালবিরোধী অভিযান চালিয়ে আলোচিত হন বিসিএস ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তা সারোয়ার আলম। তার ব্যাচকে উপসচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। সারোয়ারের পদোন্নতি হয়নি।

দুর্নীতি দূর করার কথা বলে লঘু শাস্তি পেয়েছেন রেল মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. মাহবুব কবীর মিলন। তাকে তিরস্কার নামের লঘুদণ্ড দেয় সরকার।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

অভ্যুত্থানের ৪ মাস পেরোতেই ঐক্যে ফাটলের সুর
হঠাৎ উধাও বোতলজাত সয়াবিন তেল, বিপাকে ক্রেতারা
চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !

আরও খবর