সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ সারাদেশে টানা গ্রেপ্তার অভিযানসহ নানামুখী চাপে থাকা হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। বিলুপ্ত কমিটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিও গঠিত হয়। এর পর কেন্দ্রীয় কমিটি বর্ধিত করা এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন নিয়ে প্রায় দেড় মাস ধরে চলছিল নানা দেনদরবার। অবশেষে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব করে ৩৫-৩৭ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত করেছে সংগঠনটি। সব কিছু ঠিক থাকলে আজ সোমবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অবস্থিত মহাসচিবের অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে হেফাজতের নতুন কমিটির ঘোষণা দেওয়ার কথা বলেছেন সংগঠনটির নেতারা।
হেফাজতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নতুন কমিটির হেফাজত নেতাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তারা সবাই অরাজনৈতিক মুখ হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের হেফাজতের নতুন কমিটিতে ঠাঁই না দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনটির নীতিনির্ধারকরা। একই সঙ্গে সহিংস কর্মকা-ে যুক্তদের রাখা হচ্ছে না নতুন কমিটিতে। এমনকি নতুন কমিটিতে হেফাজতের সাবেক আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমদ শফীপুত্র আনাস মাদানী ও তার অনুসারীদের ঠাঁই হচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে।
গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর কেন্দ্র করে ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে সহিংস কর্মকা- চালান অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনার পর হেফাজতকে ছাড় না দেওয়ার ঘোষণা আসে সরকারের শীর্ষমহল থেকে। এর পরই সংগঠনটির কেন্দ্রীয় শীর্ষস্থানীয় নেতাসহ সারাদেশে ব্যাপক ধড়পাকড় শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। নানামুখী চাপে বিপর্যস্ত হেফাজতে ইসলাম গত ২৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ওইদিন রাতেই পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়।
হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হন আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী ও সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী, সদস্য আল্লামা সালাউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী। এই আহ্বায়ক কমিটির সবাই জুনায়েদ বাবুনগরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। আহ্বায়ক কমিটির এই পাঁচজনের কারোই রাজনৈতিক দলের কোনো পর্যায়ের পদ নেই। তবে এদের কারও কারও সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতের বিলুপ্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মাওলানা রাশেদ বিন নুর সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, সোমবার বেলা ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে। কমিটিতে কারা থাকছেন, তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এই হেফাজত নেতা।
রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মের মহাসমাবেশ কেন্দ্র করে দোকানপাট, সরকারি স্থাপনা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, পুলিশ ফাঁড়ি, থানা ও গাড়িতে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ, হামলা, নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলার ঘটনায় ৮৩টি মামলা করা হয়। এসব মামলা হওয়ার পর হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। বরং সরকারের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের এক ধরনের কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে উঠতে দেখা যায়। তবে গত ২৬ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে সহিংস কর্মসূচি পরিচালনা করার জের ধরে হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় সরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে চালানো তা-বের ঘটনায় ঢাকা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ১৫৪টি মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তা-বের ঘটনায় ১২টি মামলা হয়। মোট ২৪৯টি মামলায় অজ্ঞাতনামা প্রায় পৌনে দুই লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এসব মামলায় হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় ৩০ নেতাসহ সারাদেশে ১ হাজার ২৩০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
হেফাজতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণার পর পুরনো মামলাগুলোর তদন্ত শেষে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার বিষয়ে বক্তব্য দেন পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৯ এপ্রিল রাতে ফেসবুক পেজে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম ভাঙচুর আর জ্বালাও-পোড়াওতে বিশ্বাস করে না; বরং হারাম মনে করে। এগুলোকে জায়েজই মনে করে না।’ ওইদিন রাতেই হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর নেতৃত্বে একটি দল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বাসায় যায়। সেখানে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন হেফাজত নেতারা। এর পর জুনায়েদ বাবুনগরীপন্থি ও আনাস মাদানীপন্থি হেফাজত নেতারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নতুন কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে হত্যার অভিযোগে হওয়া মামলায় জুনায়েদ বাবুনগরী, মামুনুল হক, আজিজুলসহ ৪৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পিবিআই।
সময় সংবাদ লাইভ।