সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট: বাড়ছে পদ্মা সেতু নির্মাণের সময়সীমা ও পরামর্শক ব্যয়। আগামী বছর ৩০ জুন পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণ কাজের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে। তবে প্রকল্পের ডিফল্ট লাইবেলিটি মেয়াদও আরো এক বছর বাড়িয়ে ৩০ জুন ২০২৩ সাল করা হচ্ছে। এই মেয়াদ বাড়ানোর কারণে একই সাথে বাড়ছে পদ্মা সেতুর নির্মাণ ও নদীশাসন তদারকিতে নিয়োগকৃত পরামর্শকের মেয়াদ। পরামর্শক কোম্পানির মেয়াদ আরো ৩৪ মাস বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এর ফলে কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ৩৪৮ কোটি টাকা প্রদান করতে হবে।
আজ বুধবার অনুষ্ঠেয় ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজ তদারকিতে পরামর্শক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের (কেইসি) মেয়াদ চলতি আগস্টে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় পরামর্শক সেবার মেয়াদ আরো ৩৪ মাস বাড়ানো এবং বর্ধিত সময়ে জন্য কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ প্রেক্ষাপটে পুনঃপ্রস্তাবের মাধ্যমে নিয়োগকৃত কেইসির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন বর্ধিত সময়ের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ৩৪৮ কোটি টাকা দিতে হবে।
পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয়কে দায়ী করেছে সেতু বিভাগ। সেতু বিভাগের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজাইন ফেইজ জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্য মতে কনস্ট্রাকশন ফেইজ জিওটেকনিক্যাল ইনভেস্টিগেশন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যের তারতম্যের কারণ মূল সেতুর ৪২ পিয়ের এর মধ্যে ২২ পিয়েরের একটি অতিরিক্ত পাইল সংযোজন করে পিয়ের রিডিজাইন করায় শিডিউল অনুযায়ী নির্মাণকাজ ব্যাহত হয়েছে। ফলে মূল সেতুর নির্মাণকাজ বিলম্বিত হয়।
অপর দিকে ২০১৫ সালের নদীশাসন কাজের মাওয়া প্রান্তে বর্ষা মৌসুমে ৩.৫ থেকে ৪ মিটার সেকেন্ড প্রবল স্রোতে পানি প্রবাহিত হওয়ার কারণে ৫.৭৯ লাখ ঘনমিটার দুইটি ইরাসন হোলের সৃষ্টি হয়। ফলে জরুরি ভিত্তিতে ডিজাইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক ছয় কেজি চালের বস্তা এবং ১২৫ ও ৮০০ কেজি জিওব্যাগ দ্বারা ইরোসন হোল দুইটি ভরাট করে পুনরায় নকশা প্রস্তুত করে সøপ প্রটেকশনের মাধ্যমে প্রবল ভাঙন থেকে রক্ষা করা হয়। এ কাজেও অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়।
সেতু বিভাগ থেকে আরো বলা হয়েছে, ২২টি পিয়েরের পাইল ও কনস্ট্রাকশন প্রণয়নের ঠিকাদারকে ইস্যু করতে বিলম্বের কারণে সিকোয়েন্স অনুযায়ী স্টিল ট্রাস ইরেকশন বিলম্ব হয়। তা ছাড়া গত জানুয়ারি থেকে করোনাভাইরাস মহামারী কারণে ঠিকদারদের লোকবল কমে যায় এবং সুপারভিশন কনসালট্যান্টের ছয়জন বিদেশী পরামর্শক বাংলাদেশ ত্যাগ করে। ফলে মূল সেতুর নদীশাসন কাজের গতি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন করা যায়নি।
এ ছাড়াও সম্প্রতি প্রবল বন্যায় মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে ব্যাপক ভাঙনের ফলে সেখানে রক্ষিত প্রায় ১২৫টি রোডওয়ে সø্যাব ও ১৯২টি রেলওয়ে স্টিঙ্গারর বিম নদীতে পড়ে যায়। ফলে ওই কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড রক্ষাবেক্ষণসহ এই রোডওয়ে সø্যাব ও রেলওয়েব স্টিঙ্গার বিম উদ্ধারপূর্বক (যদি সম্ভব হয়) সেতু সম্পূর্ণ নির্মাণ করতে বিলম্ব হতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজের মেয়াদ ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে এবং প্রকল্পের ডিফল্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড হচ্ছে এক বছর। অর্থাৎ ২০২৩ সালে জুন পর্যন্ত। সে হিসাবে পরামর্শক সেবার সময়সীমা আরো ৩৪ মাস বাড়ানো প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।
ইতঃপূর্বে প্রকল্পের মেয়াদ ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মেয়াদ বাড়ানোর কারণে চলতি আগস্ট পর্যন্ত কেইসির প্রাপ্য অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬০৯ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে মূল সেতু নির্মাণ ও নদীশাসন কাজ তদারকিতে মোট পরামর্শক ব্যয় দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৯৫৭ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
সেতু বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি হচ্ছে ৮১ শতাংশ। এর মধ্যে মূল সেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং নদী শাসনের অগ্রগতি ৭৪ শতাংশ। জানা গেছে, পদ্মা সেতু নির্মাণব্যয় ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।