Header Border

ঢাকা, শনিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল) ৩০.৫৯°সে
শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় ! সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় ! অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায় ! ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরাইলকে বয়কটের আহ্বান এরদোগানের আজ ঢাকায় সমাবেশ,৯ মহানগরে শোভাযাত্রা;নতুন বার্তা দেবেন তারেক রহমান মোজাম্মেল-শাহরিয়ার-শ্যামল ৭ দিনের রিমান্ডে ডিসি নিয়োগ নিয়ে আজও বিক্ষোভ সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে ৯টি দফা দাবি জানিয়েছে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর ট্রাস্ট’। ভারত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রভুত্বের রাজনীতি করেছে: মির্জা ফখরুল

বাড়লো আরো খরচের বোঝা-সাধারণ মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

সময় সংবাদ রিপোর্ট : সামান্য রুটি-কলা-বিস্কুট থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তের তেল-নুন-সাবান- সবকিছুর আকাশচুম্বী দামের কারণে সংসার চালানো যখন অসম্ভব হয়ে পড়ছে, ঠিক তখনই বাড়ানো হলো গ্যাসের দাম। এতে দ্রব্যমূল্য নিয়ে পেরেশানিতে থাকা নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের সংসারের খরচ আরও বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়ার খবরে ইতোমধ্যেই এসব মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

দুশ্চিন্তায় রয়েছেন রাজধানীর কদমতলী এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এনামুল হক। কথা হলে মধ্যম আয়ের এ ব্যক্তি বলেন, করোনায় বেতন কমে যাওয়ায় সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাতে হয়েছে। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বাজারে জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের মতো সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট কেবল বাড়ছে। খাওয়ার পেছনে খরচ কমাতে বাধ্য হয়েছি। এখন আবার গ্যাসের দামটাও বাড়ছে। চারদিক থেকে খরচের চাপে দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে গ্যাসের নতুন মূল্যহার ঘোষণা করেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. আবু ফারুক।

নতুন মূল্য অনুযায়ী আবাসিকে এক চুলার দাম ৯৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা এবং দুই চুলা ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটারে প্রতি ইউনিটের খরচ ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮ টাকা। আর সার কারখানার জন্য ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়েছে। শিল্পকারখানায় আগে গ্যাসের মূল্য ছিল প্রতি ঘনমিটার ১০ টাকা ৭০ পয়সা। এখন বৃহৎ শিল্পকে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা, মাঝারি শিল্পকে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা করে দিতে হবে। বাণিজ্যিক গ্রাহকদের (হোটেল, রেস্তোরাঁ) ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিটের দাম ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা। তবে সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের দাম আগের মতোই প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা থাকছে। ১ জুন থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হয়েছে বলেও জানানো হয়।

এর আগে গ্যাসের দাম বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে পেট্রোবাংলা বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেছে, যে কারণে স্পট মার্কেট থেকে চড়া দরে এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে পেট্রোবাংলা।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এমনিতেই সাধারণ মানুষ নিদারুণ অর্থকষ্টে জীবন পার করছেন। তাদের মতে, করোনা মহামারীতে কাজ হারিয়ে অনেক মানুষের জীবন এমনিতেই দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। সমাজ-অর্থনীতির সব পর্যায়ে অর্থনৈতিক সংকটের চিত্র বিদ্যমান। এ সময় পরিস্থিতিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি উৎপাদন-বণ্টনসহ মানুষের জীবনকে আরও দুর্বিষহ করে তুলবে। তাই এ মুহূর্তে গ্যাসের দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। এ ক্ষেত্রে আরও সময় নেওয়া যেত বলে অভিমত দিয়েছেন তারা।

গ্যাসের দাম এখনই না বাড়িয়ে আরও সময় নেওয়া যেত বলে মনে করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে দেশে মূল্য সমন্বয় কিংবা ভর্তুকি সামাল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে- এটা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, দাম বাড়ানোর জন্য এটাই প্রকৃত সময় কিনা। করোনার ধাক্কা কাটিয়ে দেশের উৎপাদক ও ভোক্তারা এখন ঘুরে দাঁড়ানোর জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে মানুষ। এমন সময় দাম সমন্বয়ের প্রক্রিয়াটা আরও কিছু সময় স্থগিত রাখা যেত বলে মনে করি। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক বাজার ভালোভাবে পর্যালোচনা করে মূল্য সমন্বয় করা যেত। কেননা এমন সময় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে, বিশেষ করে আর্থিক সংকটে থাকা মানুষের ওপর চাপ আরও বাড়বে। তিনি আরও বলেন, ভুল নীতি, অব্যবস্থাপনা, সিস্টেম লস ও দুর্নীতি দূর করা গেলে দাম এত দাম বাড়ানোর দরকার হয় না। তাই সবার আগে এগুলো দূর করতে হবে। পাশাপাশি আমাদের দক্ষতাও বাড়াতে হবে।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মূল্যস্ফীতির জাঁতাকলে এমনিতেই জনগণ পিষ্ট। এমন সময় গ্যাসের দাম বাড়ানোয় তাদের কষ্ট আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে আরও সময় নেওয়া যেত। ক্যাবের পক্ষ থেকে কিছুদিন আগেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, কি করে দাম না বাড়িয়ে সাশ্রয়ী হওয়া যায়। আমি মনে করি, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এটা যথাযথ সময় নয়। যে ঘাটতি রয়েছে, তা অপব্যবহার, অব্যবস্থাপনা দূর করে সাশ্রয়ী হয়ে মেটানো সম্ভব। সরকার একদিকে বলছে ভর্তুকি দিচ্ছে, অন্যদিকে জ্বালানির ওপর ট্যাক্স বাড়াচ্ছে। এটা তো সাংঘর্ষিক হয়ে গেল।

অপরদিকে দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও ভোক্তারা মানসম্পন্ন গ্যাস পাচ্ছে না। এতে ভোক্তাদের ঠকানো হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গোলাম রহমান। তিনি বলেন, আগের দাম পরিশোধ করেই তো ভোক্তারা মানসম্পন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না। গ্যাসের সরবরাহ ও চাপ স্বাভাবিক থাকছে না, দিনের বড় একটা সময় গ্যাস সরবরাহ প্রায় বন্ধ থাকছে। এ রকম আরও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেখানে দাম বাড়ানোর পর মান কতটা উন্নত হবে তার নিশ্চয়তা কে দেবে।

গ্যাসের ভোগান্তি পোহানো রাজধানীর ধানমন্ডি ১৫-এর বাসিন্দা সাবিহা রিঙ্কু বলেন, ‘সকাল-দুপুর গ্যাস থাকে না। থাকলেও টিমটিমে আগুনে রান্না হয় না। শীতকালে সমস্যা আরও তীব্র হয়। প্রায় সময় হোটেল থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হয়। মাসে ৭০০ টাকার গ্যাসও খরচ হয় কিনা সন্দেহ আছে। অথচ আবার দাম বাড়ছে। দাম বাড়ানোর বেলায় ষোলআনা, অথচ সেবার বেলায় এক আনাও নাই।’

বিইআরসি বলছে, পাইপলাইনে সরবরাহ করা প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের পাইকারি দাম ৯ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ২২ দশমিক ৭৮ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা করা হয়েছে। পাইকারি মূল্যের সঙ্গে মিল রেখে বিতরণ পর্যায়েও দামের সমন্বয় করা হবে, তাতে যানবাহনে ব্যবহারের সিএনজি বাদে সব পর্যায়েই গ্যাসের জন্য খরচ বাড়বে বলে জানানো হয়। সর্বশেষ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছিল ২০১৯ সালের ১ জুলাই। তিন বছরের মাথায় তা আবার বাড়ানো হলো।

গ্যাসের নতুন মূল্যহার যৌক্তিক: এফবিসিসিআই

বিশ্বজুড়ে এলএনজির দাম বৃদ্ধি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে জ্বালানির বৈশ্বিক সরবরাহে অস্থিরতার মধ্যেও দেশে গ্যাসের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। গতকাল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আয়োজিত ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলেন গ্যাসের নতুন দাম সম্পর্কে জানানো হয়। নতুন মূল্যহার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিতরণ কোম্পানিগুলোর ১০০ শতাংশের বেশি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপরীতে ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সাড়ে ১৫ শতাংশ, বৃহৎ শিল্পে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ১০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বিপরীতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প খাতের জন্য দাম প্রায় ৩৭ শতাংশ কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে বাড়ানো হয়েছে ১২ দশমিক ৮১ শতাংশ।

কোভিড মহামারীপরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের এই পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত এই খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করবে। এ ছাড়াও সিএনজির দাম অপরিবর্তিত রাখার ফলে গণপরিবহনের ভাড়া আগের মতোই থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এফবিসিসিআই মনে করে, দেশের সব ধরনের শিল্প খাতের সক্ষমতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে এই নতুন মূল্যহার নির্ধারণ করা হয়েছে। শিল্পের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোকে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের যোগান নিশ্চিত করার আহ্বান জানান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায় !
ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরাইলকে বয়কটের আহ্বান এরদোগানের
আজ ঢাকায় সমাবেশ,৯ মহানগরে শোভাযাত্রা;নতুন বার্তা দেবেন তারেক রহমান

আরও খবর