সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ বিএনপির আন্দোলনের আহ্বানকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির নেতৃবৃন্দ মনে করছেন, নির্বাচনের রোডম্যাপ সামনে রেখে বিএনপি মরণ কামড় দিতে পারে। আন্দোলনের ক্ষেত্র হিসেবে তারা রাজপথের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ইন্টারনেটের দুনিয়াকে বেছে নিতে পারে।বিএনপির আন্দোলনের সিদ্ধান্ত মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে প্রস্তুতিও নিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার রোধে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের সমন্বয়ে দলের একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপকমিটি সারাদেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করছে। কর্মশালায় সহযোগিতা করছে দলটির গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ‘অযাচিত’ ম্যুভমেন্ট যেন তৈরি হতে না পারে সেজন্য সেখানে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ কঠোর মনিটরিংয়ে রয়েছেন। আর রাজপথে তীক্ষ দৃষ্টি থাকবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর একজন সদস্য সময় সংবাদ লাইভকে জানান, বিএনপি নেতাকর্মীরা এবার নিজেদের অবস্থান জানানোর শেষ চেষ্টা করে দেখবে বলে আমরা মনে করছি। কারণ দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রামে বিএনপি সক্রিয় ভূমিকা দেখাতে পারেনি। এতে হতাশ বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। ফলে এ আন্দোলনে যে শুধু সরকারকে জানান দেবে তা নয়, নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও একটা বার্তা দেওয়া হবে। সুতরাং আন্দোলনের এ আহ্বানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকম-লীর এক সদস্য বলেন, বিএনপি হয়তো মনে করছে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকায় আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত। এর উদাহরণও আছে। এ সুযোগটা তারা কাজে লাগাতে চাইবে। আওয়ামী লীগকে এ নিয়ে ভাবতে হবে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রহমান সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, বিএনপির আন্দোলনের কথা বলার ইতিহাস নতুন নয়। এসব বলে তো তারা ১২-১৩ বছর পার করেছে। আমার ধারণা, এ ধরনের বক্তব্য বিবৃতি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উৎসাহ জোগানোর কৌশল হতে পারে। দল হিসেবে তাদের আন্দোলন করার মতো সামর্থ্য ও সাহস কোনোটাই নেই। আরেকটা হলো, অযৌক্তিক কোনো দাবি নিয়ে মাঠে নামলে জনগণ তা গ্রহণ করবে না. বরং মানুষের কাছে আবারও প্রত্যাখ্যাত হবে। তিনি আরও বলেন, তাদের বরং উচিত হবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখা। একটি শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন কীভাবে গঠিত হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দিতে পারে। কমিশন শক্তিশালী হলেই নির্বাচন আরও সুষ্ঠু ও অবাধ হওয়ার সুযোগ থাকবে। সংবিধানের আলোকেই সে চিন্তা করতে হবে। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আফগানিস্তানের ভূত পাকিস্তানকে স্পর্শ করতে পারে, বাংলাদেশকে নয়। যারা এসব ভাবে তাদের ভাবনায় অস্পষ্টতা আছে। তারা আন্দোলনের আহ্বান করেছে। কিন্তু সেখানে দলের নেতাকর্মীদের সায় নেই। যদি থাকত তা হলে নিজ দলের নেতাকর্মীদের হুমকি দিয়ে আন্দোলনে আনতে হতো না। এ পরিস্থিতিতে অন্য দল বা জনগণ এ আহ্বানে সাড়া দেবে কী করে? নাছিম বলেন, তারা কাদের নিয়ে আন্দোলন করতে চায়? জামায়াত, জঙ্গি, ধর্ম ব্যবসায়ী এবং অতীতের মতো পেছনের দরজা দিয়ে যারা ক্ষমতায় আসতে চায় তাদের দিয়ে? জনগণ এ আন্দোলনকে সায় দেওয়া তো দূরের কথা, ধিক্কার জানাবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল বলেন, যতটুকু শুনছি বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলছে। পৃথিবীর কোথায় কে নিরপেক্ষ? আমি তো কাউকে না কাউকে ভোট দেই। অতীতে অনেককে রাষ্ট্রপতি বানানো হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বানানো হয়েছিল। তারা কি নিরপেক্ষ থাকতে পেরেছিলেন? সুতরাং, এসব কথা বলে তো লাভ নেই। দেশে সংবিধান আছে, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সংবিধান পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগকে জনগণ ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমি তো মনে করি এটাই নিরপেক্ষ সরকার। সুতরাং এসব কথাবার্তা বলে লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, আন্দোলন করতে হলে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণের ঐক্যে কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে। খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচার জন্য কর্মসূচি দিলে তো জনগণ মানবে না। একেবারে ঠান্ডা মাথায় মানুষ হত্যা করতে পারে তারেক জিয়া। এটির প্রমাণ ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা। আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারেক জিয়া। সেই মামলাসহ আরও বিভিন্ন মামলায় সে অভিযুক্ত এবং সাজাপ্রাপ্ত। সুতরাং সে কী বলে না বলে তা বিবেচ্য বিষয় নয়।
দলের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। আওয়ামী লীগ যত ক্রাইসিস ফেস করেছে পৃথিবীর ইতিহাসে তা কোনো রাজনৈতিক দল ফেস করেছে বলে আমার জানা নেই। সুতরাং আওয়ামী লীগকে অযাচিত আন্দোলনের কথা শুনিয়ে লাভ নেই। বরং আন্দোলনের ডাক দিলে আওয়ামী লীগের সুবিধা এই যে, দলের নেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ হবে।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সবুর বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ যত উন্নত হতে থাকবে, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে; তত বেশি গুজব-অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- বাধাগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টা করবে। যেহেতু তারা রাজপথে সেভাবে দাঁড়াতে পারবে না। তাই তাদের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে গুজব ও অপপ্রচার। আমাদের আগামী দিনে এই গুজব-অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা সারাদেশে ৬৯টি কর্মশালা সম্পন্ন করেছি। এখন ৭০তম কর্মশালা চলছে।
এম/পি….