সময় সংবাদ রিপোর্ট:প্রায় এক যুগ দলের বাইরে থাকা কথিত সংস্কারপন্থি নেতাদের ফিরিয়ে আনছে বিএনপি। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে একত্র হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে ফিরছেন তারা। পর্যায়ক্রমে অন্য নেতাদেরও দলে ফিরিয়ে আনা হবে। তবে বিভিন্ন সময় দল থেকে বহিস্কৃত নেতাদের বিষয়ে এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না শীর্ষ নেতারা। অভ্যন্তরীণ আপত্তি ও বাধার মুখে আপাতত তাদের দলে ফেরানোর পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে।
ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে ২০০৭ সালের ২৫ জুন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব প্রয়াত আবদুল মান্নান ভূঁইয়া দলে ১৫ দফা সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
দলের ১২৭ জন সাবেক মন্ত্রী-সাংসদ তাকে সমর্থন দেন। তার পর থেকে এ অংশ ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। সংস্কার প্রস্তাবের পর খালেদা জিয়া গ্রেফতারের আগে দলের মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব আশরাফ হোসেন ও দপ্তর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে বহিস্কার করেন। দলের মহাসচিব হিসেবে নিয়োগ পান প্রয়াত খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।
এর পর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে সংস্কারপন্থি অনেক নেতাকে পদ-পদবি দিয়ে সক্রিয় করা হয়। কিন্তু আরও অর্ধশতাধিক নেতা দলের বাইরে থেকে যান। বিভিন্ন সময়ে তাদের দলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।
কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সবার অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের আগে দলকে ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে এসব হেভিওয়েট নেতাকে দলে ফেরানো হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যারা এখনও অন্য কোনো দলে যোগ দেননি এবং এলাকায় যাদের জনপ্রিয়তা রয়েছে, এমন নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় শীর্ষ নেতারা এ-সংক্রান্ত কাজ করছেন। গত ১৫ অক্টোবর এসব নেতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের ব্যস্ততায় তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
আজ আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে সক্রিয় হচ্ছেন ১৪ সংস্কারপন্থি নেতা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান, মোফাজ্জল করিম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শাহ মো. আবুল হোসাইন, সাবেক সংসদ সদস্য জহিরউদ্দিন স্বপন, সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, চাঁদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য এস এ সুলতান টিটু, মনি স্বপন দেওয়ান, বগুড়ার সাবেক দুই সাংসদ ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ। এর বাইরে সাবেক সাংসদ ও দলের বরগুনা জেলার সাবেক সভাপতি নূরুল ইসলাম মণি ও সাবেক সাংসদ ইলেন ভুট্টোর আনুষ্ঠানিক প্রত্যাবর্তনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও আলোচনায় রয়েছে।
তাদের মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য এস এ সুলতান টিটু সমকালকে জানান, এ ধরনের একটি উদ্যোগের কথা তিনি শুনেছেন। তবে তাকে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
সংস্কারপন্থি বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও যারা দলে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, সাবেক হুইপ ও পিরোজপুর জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক সাংসদ ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, সাবেক সাংসদ শামীম কায়সার লিঙ্কন, ময়মনসিংহ এলাকা থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন খান দুলু, রাজশাহীর আবু হেনা, মৌলভীবাজারের সাবেক সংসদ সদস্য এম এম শাহীন, সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ শাম্মী শের, শাহরিয়া আক্তার বুলু প্রমুখ।
এদিকে, বিভিন্ন সময়ে বহিস্কৃত নেতাদের বিএনপিতে ফিরিয়ে আনার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা হলেও সময়-সুযোগমতো তাদেরও দলে সক্রিয় করতে চাইছেন শীর্ষ নেতারা। বহিস্কৃত এমন নেতাদের মধ্যে পাবনা জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টু, চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আলহাজ এম এ হান্নান, ঢাকা মহানগর জাসাস দক্ষিণের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর শিকদার প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।