Header Border

ঢাকা, সোমবার, ২৩শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল) ২৭.৫১°সে

বিএনপির ১০ দফায় গুরুত্ব দিচ্ছে না আওয়ামী লীগ

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর সময় হাতে রেখে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় গণসমাবেশে ১০ দফা দাবি তুলে ধরেছে বিএনপি। এর মধ্যে সরকারের পদত্যাগ, সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীর মুক্তি ও সাজা বাতিল, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সন্ত্রাস দমন আইন বাতিলের দাবি রয়েছে। একই সঙ্গে আগামী দিনে কঠোর কর্মসূচির হুশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে বিএনপি। তবে এসব দাবি ও হুশিয়ারিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতেই বিএনপি এসব করছে বলে ক্ষমতাসীনরা মনে করছেন। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপ করে সরকারি দলের এমন অবস্থানই জানা গেছে।

এ অবস্থায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াতে পারে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে
আগামী দিনগুলোতে রাজনীতির অঙ্গন উত্তপ্ত হতে পারে। তবে সংঘাতের দিকে যাওয়ার আশঙ্কা কম।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘তারা তাদের কথা বলেছে। এটা নিয়ে মাইক্রোস্কোপ দিয়ে দেখার কী আছে? তারা দীর্ঘদিন ধরেই এসব কথা বলে যাচ্ছে। তারা বলে যেতে থাকুক। অপোজিশনে থেকে তারা তাদের কথা বলবে, আর আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। এটাই তো গণতন্ত্রের রীতি। আমাদের ময়মনসিংহের ফুলফুরের শামসু ভাই (গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাবা) বলতেন, ‘বিএনপিরে যা খুশি তাই বলতে দেন। তা না হলে আমরা আন্দোলন করমু কি দিয়া?’ সুতরাং কর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য টনিক মার্কা বক্তব্য বিএনপিকে দিতে হচ্ছে, দিচ্ছে।’

দলের আরেক সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘বিএনপি এক মাস আগে থেকে অনেক হুমকি দিয়ে আসছিল। তারা বলে আসছিলÑ সরকার ফেলে দেবে, ১০ তারিখে ঢাকা দখল করে ফেলবে, সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করবে, সংসদ ভেঙে দেবে, ১০ লাখ লোকের সমাগম ঘটাবে। এগুলোর কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে? এগুলোর কোনোটাই যেহেতু আলোর মুখ দেখেনি, তাই এসব দাবি আমলে নেওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। এ জন্য ১০ দফা, না কী যেন দিয়েছেÑ তা দেখিও নাই। এ নিয়ে আমাদের চিন্তাও নেই।’
কাজী জাফরউল্যাহ আরও বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগ করি। আমাদের সংগঠন মজবুত আছে। জাতীয় নির্বাচন ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে হবে। নেত্রী ইতোমধ্যে তারিখ ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই ২৪ ডিসেম্বর আমাদের জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনের পর আমরা কীভাবে নির্বাচনের পথে এগোব, সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। অতএব তারা কী হুমকি দিল, তা আমলে নেওয়ার সুযোগ নেই। ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা, আগামীতে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন, না কি তারেক হবেনÑ আর অন্যরা কোন কোন পদে যাবেনÑ এগুলো নিয়ে তাদের মাথাব্যথা, আমাদের নয়।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপি প্রমাণ করেছে তারা জঙ্গিবাদের দল। কারণ, জঙ্গি দমনের জন্য যে আইন করেছে সরকার, তা বাদ দেওয়ার কথা বলেছে তাদের পঞ্চম দফায়। অন্য সব দাবি দিয়েও জনগণের সঙ্গে তারা প্রতারণা করেছে বলে আমি মনে করি। এর আগে তো তারা ক্ষমতায় ছিল। তারা এসব কেন বাস্তবায়ন করেনি? আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কবর রচনা করেছেন খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়া একগুঁয়েমি করেছিলেন। তারেক রহমানের যেনতেন আচরণে প্রাসাদ ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই উদ্দেশ্যে এক কোটি একুশ লাখ ভুয়া ভোটার করা হয়েছিল, (নির্বাচন কমিশনে) দেড় শ জন ছাত্রদলের ক্যাডারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের বয়স বৃদ্ধি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ইয়াজউদ্দীনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ও রাষ্ট্রপতি করা হয়েছিল। এসব করেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কবর রচনা করেছিলেন তারা। সুতরাং এসব কিছুর পর এ দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না।

বিএনপির ১০ দফা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, বিএনপির দাবিগুলো নতুন বোতলে পুরনো পানীয়। একমাত্র মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট আইনানুগ ক্ষমা প্রার্থনা ছাড়া অন্য কোনো আইন বা বিধিতে আদালত কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের সাজা রাষ্ট্র মওকুফ করতে পারবে না, তা তাদের কারও জানা আছে বলে মনে হয় না। অন্য দাবিগুলো চির পুরনো। তাদের ক্ষমতায় বসালে তারাও এসব বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারক ও লালনকারী বিএনপি যদি মুক্তবাজার অর্থনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন, সেটি তাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব।

বিএনপির দাবিগুলোর বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিপরীত অবস্থান কি রাজনীতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে?Ñ এ প্রশ্নে কারও কারও উদ্বেগ রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার বলেন, ‘আমি আশাবাদী রাজনীতি সংঘাতের দিকে যাবে না। আমার ধারণা, ২০১৪ সালের মতো আরেকটি সংঘাতময় পরিস্থিতি মেনে নেওয়ার ক্ষমতা এই জাতির নেই। আমার মনে হয়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দলÑ দুই দিক থেকেই এমন শুভবুদ্ধির উদয় হবে। ক্ষমতাসীনরা যেমন যথেচ্ছ আচরণ করতে পারবেন না, তেমনি বিরোধী দলগুলোও ইচ্ছামতো দাবি উত্থাপন করবেন এবং আশা করবেন দাবি পূরণ হবে সেটা হতে পারে না। এমন হলে দুই পক্ষের বাড়াবাড়িতে জাতির যে ক্ষতি, তা বাড়তেই থাকবে। ফলে দুই পক্ষই অধিকার ও দায়িত্বশীলতাÑ এই দুটো বুঝে কাজ করবে। কারণ, আমি মনে করি আমাদের রাজনীতিবিদদের সে পরিপক্বতা আছে।’
শান্তনু মজুমদার আরও বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের মুখের কথায় কোনো আপত্তি নেই। রাজনীতিতে ভাষা প্রয়োগ কখনো বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে; কিন্তু সহিংসতা অন্য জিনিস। আমি মনে করি, কথার খেলা চলুক, কথার কাটাকাটি হোক, কথার মারপ্যাঁচ চলুকÑ কিন্তু কোনোভাবেই যেন সহিংসতার দিকে পা না বাড়ান তারাÑ এটাই চাওয়া। আমি আশাবাদী, এ চাওয়া পূর্ণ হবে।’

এতটা আশাবাদী হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অধ্যাপক মজুমদার বলেন, ‘রাজনীতি যদি সহিংসতায় পর্যবসিত হয়, তা হলে এমন কী আছে যাতে দুই পক্ষের কোনো একটি অংশ লাভবান হবে? হবে না। সরকারি দলের ওপর জনগণের চোখ আছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেরও চোখ আছে। বিরোধী দল যদি মনে করেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে আছেন বলেই জাতির পবিত্র দায়িত্ব তাদেরকে ক্ষমতায় বসানো এবং সে কারণে তারা অসংযত আচরণ করতে পারেন কিংবা বাচ্চাদের মতো যে কোনো দাবি নিয়ে লাফিয়ে উঠতে পারেন, সেটা যুক্তিসঙ্গত নয়। এই দাবি পূরণ না করা মানেই অন্যায় করা হচ্ছে বলে অস্বাভাবিক পথে হাঁটতে শুরু করবেন, এমনটা কাম্য নয়।’
বিএনপির ১০ দফার বিষয়ে শান্তনু মজুমদার বলেন, বিএনপির ১০ দফা মূলত এক দফা। সেটা হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল। বাকিগুলো বলার জন্য বলা।

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর যে বার্তা দিলেন খামেনি
গড়ে ৪ জন প্রার্থী বিএনপির, একক প্রার্থী জামায়াতের
মাদকের করালগ্রাসে ক্ষতবিক্ষত বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম
‘সমাজকে মাদকমুক্ত করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে’
নেতানিয়াহুকে হামলা চালিয়ে যেতে বললেন ট্রাম্প
প্রতিশোধ নিতে প্রস্তুত ইরান

আরও খবর