সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্ট:: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডে বিচার না পাওয়ার কথা তুলে ধরে বলেছেন, আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানাসহ ১৫ আগস্ট যারা আপনজন হারিয়েছিলাম আমাদের কিন্তু বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না, বিচার চাইতে পারিনি। ১৯৮১ সালে যখন দেশে ফিরে আসি। এই হাইকোর্ট ভবনে বহুবার গেছি। আমার কিন্তু বিচারের বাণী নির্ভৃতে কেঁদেছে, আমরা বিচার চাইতে পারিনি।
নবনির্মিত ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন, ঢাকা এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও যুক্ত ছিলেন। ঢাকা চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন প্রান্ত থেকে বক্তব্য রাখেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার।
জাতির পিতার ভাষণের একটি অংশ, ‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন মৌলিক অধিকার রাজনীতি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা কিন্তু সংবিধানের কথা, সংবিধানের প্রস্তাবনায় কিন্তু এই কথাগুলো উল্লেখ রয়েছে। কাজেই সেখানে আইনের শাসন এবং সুবিচারের কথা বারবার উল্লখ করা আছে। অর্থ্যাৎ প্রত্যেকটা মানুষেরই বিচার পাওয়ার এবং বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সংবিধানে আমরা দেখি প্রতিটি মানুষের যে মৌলিক চাহিদাগুলো সেই চাহিদাগুলো কিন্তু বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। একটা রাষ্ট্র পরিচালনা কীভাবে হবে। তারপর মানুষের অধিকার কীভাবে নিশ্চিত হবে সেকথাও কিন্তু সেই সংবিধানে রয়ে গেছে।’
‘একটা রাষ্ট্রের তিনটা অঙ্গ থাকে, লেজিসলেটিভ, জুডিশিয়ারি এবং এক্সিকিউটিভ; এই তিনটা পরিপূরক হিসাবে কাজ করে। তবেই সেই রাষ্ট্র সুষ্ঠভাবে চলতে পারে এবং আমাদের সংবিধানে সেই নির্দেশনাটা খুব ভালোভাবে দেওয়া আছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথাও কিন্তু ৭২’র সংবিধানে তিনি উল্লেখ করে গিয়েছিলেন এবং তিনি নিজে একটা স্বাধীন নিরপেক্ষ বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন। মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়’ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, একটা ঘটনা আপনারা জানেন কি না? পাকিস্তান আমলে আমাদের দেশে সেখানে কিন্তু একটা নিষিদ্ধ ছিল যে বিচার বিভাগে কোনো নারী সেখানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। স্বাধীনতার পর কিন্তু জাতির পিতা সেটা সংশোধন করে দিয়ে নারীদেরও বিচার বিভাগে আসার যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।’
‘আমার সৌভাগ্য, আমি ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করার পর আমাদের উচ্চ আদালতে তখনকার যিনি রাষ্ট্রপতি ছিলেন তাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করে উচ্চ আদালতে যাতে আমাদের নারীরা আসতে পারে সেই ব্যবস্থাটা করে দিয়েছিলাম। কারণ রাষ্ট্রপতি পারে বিচারক নিয়োগ দিতে।’
‘আমরা আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারবদ্ধ এবং আমরা যখনি সরকারে এসেছি, আমরা কিন্তু সেটা নিশ্চিত করেছি। উভয় ক্ষেত্রে ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলেই যেন ন্যায় বিচার পায় এবং সকলের বিচার পাওয়ার অধিকারটা যেন প্রতিষ্ঠা হয়, সেদিকে আমরা বিশেষভাবে নজর দেই এবং আমরা সেভাবে কাজ করি
সংবিধানে কিন্তু স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, আইনে সবাই সমানভাবে সুযোগ পাবে। সংবিধানে ১৯ অনুচ্ছেদে বলা আছে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে। অর্থ্যাৎ সকল নাগরিকে রাষ্ট্রের কাছে সমান। সে ধনী হোক, দরিদ্র্য হোক, সে যেই হোক; তার যেন সমান একটা অধিকার থাকে সেটা নিশ্চিত করা একান্তভাবে দরকার বলে অবহিত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার কারণ জনগণের নাগরিক অধিকার, এটাই হচ্ছে সবথেকে মৌলিক কথা। কিন্তু দুভার্গ্যরে বিষয়টা হচ্ছে, আমি এবং আমার ছোট বোন রেহানাসহ ১৫ আগস্ট আমরা যারা আপনজন হারিয়েছিলাম; আমাদের কিন্তু বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না, বিচার চাইতে পারিনি।’
১৫ আগস্ট আমাদের জাতির জন্য আমাদের দেশের জন্য একটা কলঙ্কময় দিন। সেই দিন জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা দিন এইভাবে বিভিন্ন বাড়িতে যেয়ে মানুষগুলোকে যে হত্যা করা হল, আর এই হত্যার পর সেই খুনিদেরকে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দেওয়া হলো। যেখানে সংবিধানে প্রতিটি ক্ষেত্রে বলা আছে, সকলের আইন বা বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। আমরা কিন্তু বঞ্চিত থাকলাম। আমরা বিচার চাইতে পারতাম না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৮১ সালে আমি যখন ফিরে আসি বাংলাদেশে। এই হাইকোর্ট ভবনে বহুবার গেছি। কিন্তু আমার কিন্তু বিচারের বাণী নির্ভৃতে কেঁদেছে। আমরা বিচার চাইতে পারিনি। কতবার গিয়েছি।’
‘সেই বিচারের পাওয়ার সুযোগটা করতে হলো যখন আমি সরকারে আসতে পারলাম ১৯৯৬ সালে। তখনই সেই ইনমেডনিটি অর্ডিন্যান্সটা বাতিল করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হলো। এখানেও বাধা এসেছিল। পার্লামেন্টে আমাদের মেজরিটি ছিল। মেজরিটি নিয়েই এটা আমরা বাতিল করতে পারতাম। সেখানেও কেউ কেউ প্রবল বাধা দিল। কোর্ট পর্যন্ত গড়াল। আমি ধন্যবাদ জানাই যারা যেই সময় সহযোগিতা করেছিলেন এবং ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করতে এবং সেই বাতিল হওয়ার পরেই কিন্তু আমরা বিচার করতে পারি। আর সেই বিচারের রায়ে খুনিদের সাজা হয় এবং সাজা আমরা কার্যকর করতে পেরেছি’ বলে জানান তিনি।
‘কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, এই বিচারটা করবার সময়ও প্রবল বাধা। এমনকি যেদিন প্রথম বিচারের রায় হবে, বিএনপি হরতাল ডেকেছিল যেন জজ সাহেব কোর্টে যেতে না পারে। রায় দিতে না পারে। রাস্তাঘাটে তারা বাধা দিয়েছিল। এটাই কিন্তু আমাকে দেখতে হয়েছে। আমাদের মতো যারা আপনজন হারিয়েছিলাম আমাদেরকে সেটাও দেখতে হয়েছে।’
কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, আমরা আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছি, আমরাই কিন্তু সবসময় বিচারের ব্যাপারে আমাদের সবসময় আন্তরিকতা রয়েছে। আর বিচার বিভাগের স্বাধীন উন্নয়নের জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।