*সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের অধীন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। দেশে অবৈধ মাদকের প্রবাহ রোধ, ওষুধ ও অন্যান্য শিল্পে ব্যবহার্য বৈধ মাদকের শুল্ক আদায় সাপেক্ষে আমদানি, পরিবহন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, মাদকদ্রব্যের সঠিক পরীক্ষণ, মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিতকরণ, মাদকদ্রব্যের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে নিরোধ কার্যক্রমের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে নিবিড় কর্ম-সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা অধিদফতরের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু প্রবাদ বাক্যের সেই ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ এর মতো এই অধিদফতর চলেছে যুগের পর যুগ।
বদলে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে নতুন প্রকল্প-নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে অধিদফতরকে ঢেলে সাজানোর জন্য। একটি প্রকল্পের আওতায় এ আধুনীকায়নের কাজ চলছে। এ প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিশ্বমানের ইন্টারোগেশন ইউনিট স্থাপন, ক্রিমিনাল ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুকরণ, উন্নত গোয়েন্দা যন্ত্রপাতি ক্রয়, মোবাইল ট্র্র্যাকার স্থাপন, মাদক শনাক্তকরণ যন্ত্রপাতি ক্রয়, নৌ ইউনিট স্থাপন, ডগ স্কোয়াড ইউনিট স্থাপন ও ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাব স্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। ক্রিমিনাল ডাটাবেজে মাদক ব্যবসায়ীদের পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা থাকবে। পুরনো মাদক ব্যবসায়ী এবং নতুন করে যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হবে তারা এ ডাটার আওতায় আসবে। তালিকা ধরে যাতে তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা যায়।
এ ছাড়াও মাদক সংক্রান্ত অপরাধ কমানো ও মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে (ও উজঊঅগ ওঞ) নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে সংস্থাটি। এর মাধ্যমে অধিদফতরের কার্যক্রম অটোমেশনের আওতায় আসবে।
জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার সময় সংবাদ লাইভকে জানান, ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরকে যুগোপযোগী করার জন্য আমাদের পক্ষ থেকে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অধিদফতরের শীর্ষ থেকে কর্মচারী পর্যন্ত পোশাকের অনুমোদন পাওয়া গেছে। অস্ত্র‘র বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে। মাদক দমন করতে অস্ত্রের বড় প্রয়োজন।’
জানা গেছে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সন্দেহভাজন সদস্যদের ডোপটেস্ট করার প্রস্তুতি নিয়ে সেটি এখন চালুর অপেক্ষায়। শিগগিরই এই টেস্ট চালু করবে সংস্থাটি। রিপোর্ট পজেটিভ হলে সংশ্লিষ্টকে চাকরি হারাতে হবে। এর আগের বছর চালু করা একটি টেস্টে একজন সদস্যের পজেটিভ হওয়ায় তার চাকরি গেছে। স্বচ্ছতা আনার জন্য আবার সংস্থাটি টেস্ট চালু করেছে। এ ছাড়াও মাদকে সর্বোচ্চ সাজার বিধান রেখে আইন প্রণয়নসহ প্রশাসনিক সক্ষমতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ একাধিক সংস্থার কাছে ডগ স্কোয়াড রয়েছে। এ ডগ স্কোয়াড দিয়ে মূলত বিস্ফোরক শনাক্ত ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ডগ স্কোয়াড নেই। মাদকবিরোধী অভিযানের জন্য সংস্থাটির কর্মকর্তারা বিভিন্ন স্থানে যান। যে সব উপায়ে মাদক পাচার হয়ে আসছে তা তল্লাশি করা সম্ভব হয়না নানা কারণেই। এজন্য ডগ স্কোয়াডের প্রয়োজন জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে সংস্থাটি।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো অধিদফতরের প্রস্তাবে নেদারল্যান্ডস ও জার্মানি থেকে উন্নত জাতের কুকুর সংগ্রহের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দেশি কুকুর ব্যবহার করা যায় কি-না তা বলা হয়েছে পরীক্ষা ও নিরীক্ষার জন্য। ডগ স্কোয়াড পাওয়া গেলে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্ক্যানার ছাড়াও মাদক শনাক্ত হবে। এতে বিমানবন্দরে মাদক উদ্ধার কার্যক্রম আরো বড় আকারে পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
সূত্র জানায়, নৌ পথে মাদকের বড় চালান সারা দেশে পাচার হয়ে থাকে। এতে মাদকের বিস্তার সারা দেশে ঘটছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের নাফ নদ দিয়ে ইয়াবা বাংলাদেশে ঢুকছে। পাশাপাশি সাগরপথে উপকূল দিয়েও ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। এ রুটে অবৈধভাবে যাতে কোনো মাদকদ্রব্য ঢুকতে না পারে এজন্য কর্তৃপক্ষ নৌ ইউনিট স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। নৌ ইউনিটের সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যদের সঙ্গে সমন্বয় করে নৌ পথগুলোতে অভিযান চালাবে। এতে মাদকদ্রব্য পাচার অনেকটা কমে আসবে।
সূত্র জানায়, অধিদফতরের কাজকে আরো দ্রুতগামী করার জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ল্যাব স্থাপিত হলে অধিদফতরের কাজের মান ও পরিধি বাড়বে। সহজ হবে সকল কাজকর্ম।
সূত্র জানায়, মাদক ব্যবসায়ীরা মোবাইল ফোনে তাদের ব্যবসার তথ্য আদান-প্রদান করে থাকেন। তাদের শনাক্ত করতে আধুনিক বিশ্বের মতো মোবাইল ট্র্যাকার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। ক্রিমিনাল ডাটায় এবং মাঠ পর্যায়ে কমকর্তাদের তালিকায় যেসব ব্যবসায়ীর নাম থাকবে তাদের আধুনিক মোবাইল ট্র্যাকার দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের অবস্থান নির্ধারণ এবং তাদের আইনের আওতায় আনা যাবে।
জানতে চাইলে অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, একটি প্রকল্পের আওতায় অধিদফতরকে ঢেলে সাজানোসহ আধুনিকায়নের কাজ চলছে। বিভিন্ন ইউনিট স্থাপনের চেষ্টা হচ্ছে। এছাড়াও অধিদফতরের সকল কাজকর্মকে যুগোপযোগীসহ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মেলাতে যা কিছু করা দরকার তারও সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে, যাতে করে দেশকে মাদকমুক্ত পরিবেশ উপহার দেয়া সম্ভব হয়।