সময় সংবাদ লাইভ রিপোর্টঃ বিশ্বে করোনায় মৃত্যু যেভাবে বেড়েই চলেছে এতে আগামী ১ এপ্রিল ২৯ লাখ মানুষের বেশি মারা যাবেন বলে পূর্ভাবাস দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন। সবচেয়ে ভয়ের বিষয় হলো- সবশেষ তিন মাসেই মৃত্যু হয়েছে ১০ লাখ মানুষের। ২০২০ সালের শুরুটা হয়েছিল করোনা ভাইরাসের মাধ্যমে। যা এখন বিশ্বজুড়ে অদৃশ্য এক আতঙ্কের নাম।
গত ২২ জানুয়ারি ২০২০ ভাইরাসটিতে প্রথম মৃত্যুর পর এখন প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে সেই তালিকা। শুক্রবার মৃত্যুর মোট সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২০ লাখ। মৃত্যুর সংখ্যা লাখ অতিক্রম করে গত বছরের ৯ এপ্রিল। মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ২৫ জুন ৫ লাখ ছাড়ায় করোনায় মৃতের সংখ্যা। এর মাত্র তিন মাস পর ২৫ সেপ্টেম্বর ১০ লাখ, তার প্রায় আড়াই মাস পর ৩রা ডিসেম্বর ১৫ লাখ অতিক্রম করে মৃতের সংখ্যা। আর সবশেষ ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে। এ হারে মৃত্যু হতে থাকলে, আগামী পহেলা এপ্রিল ২৯ লাখ মানুষের বেশি মারা যাবেন বলে পূর্ভাবাস দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স এন্ড ইভালুয়েশন।
এ অবস্থায় করোনার সাথে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে বিশ্ববাসীতে জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে হবে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতিসংঘের জরুরি কর্মসূচির প্রধান মাইক রায়ান বলেন, বিশ্বের সব বিজ্ঞানী আজ এক হয়ে, একটি টিম হয়ে কাজ করছে। আমরা সবাই ভাইরাসটি নিয়ে কাজ করছি, জানা চেষ্টা করছি। আশা করি আমাদের জয় হবেই। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৪টি দেশে মৃতের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়েছে। যাদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে মৃতের দিক দিয়ে ভাইরাসটির উৎপত্তিস্থল চীনের অবস্থান ৪৫।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় ২১ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়। এই সময়ে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৭৮। গত এক দিনে মারা যাওয়া ২১ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট ৭ হাজার ৮৮৩ জনের মৃত্যু হল। আরও ৫৭৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ২৭ হাজার ৬৩ জন হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৬৩৩ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৪ লাখ ৭১ হাজার ৭৫৬ জন হয়েছে। আগের দিন অর্থাৎ শুক্রবার ১৩ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর; যা গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
আর গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা গত সাড়ে আট মাসে সবচেয়ে কম। গত বছরের ২ মে ৫৫২ জন রোগী শনাক্তের খবর দেওয়া হয়েছিল। এরপর শনিবারই সবচেয়ে কম রোগী শনাক্ত হল। বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ। গত ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।
গত ২৪ ঘণ্টায় মোট ১২ হাজার ২১৫টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৭৮ জনের দেহে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৪ লাখ ৪৪ হাজার ৭টি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নমুনা পরীক্ষা ৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ বাড়লেও শনাক্তের সংখ্যা ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪.৭৩ শতাংশ এবংএ নাগাদ শনাক্তের হার ১৫. ৩০ শতাংশ। গত এক সপ্তাহে মৃতের সংখ্যা ৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ কমেছে। সেই সঙ্গে ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে সুস্থতার হারও। সার্বিকভাবে শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯.৫১ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১.৪৯ শতাংশ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনে সর্বাধিক।
শনিবারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যে ২১ জন মারা গেছেন, তাদের মধ্যে পুরুষ ১৩ জন, নারী ৮ জন। এই ২১ জনের মধ্যে ২১ জনই হাসপাতালে মারা গেছেন। নতুন করোনাভাইরাসে পুরুষের সংক্রমণ হার বেশি। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৫ হাজার ৯৭৬ জন পুরুষ। নারী মারা গেছে ১ হাজার ৯০৭ জন।
গত এক দিনে মৃত ২১ জনের মধ্যে ১২ জনের বয়স ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে। এছাড়া ৪ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে। ৩ জনের বয়স ছিল ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। আর ১ জনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে।
এই পর্যন্ত যারা মারা গেছেন, তাদের বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে জানানো হয়, ষাটোর্ধ্ব রোগীদের মৃত্যুর হার ৫৫ দশমিক ০২ শতাংশ, ৫১ থেকে ৬০ বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ২৫ দশমিক ১৯ শতাংশ, ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ১১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ৩১ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ২১ থেকে ৩০ বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ, ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ ও শূন্য থেকে ১০ বছর বয়সী রোগীদের মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে মারা গেছে ১৩ জন। বাকিদের মধ্যে ৬ জন চট্টগ্রাম ও ২ জন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা।
এলাকাভিত্তিক বিশ্লেষণে মৃতের হার ঢাকা বিভাগে ৫৫ দশমিক ৪১ শতাংশ, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ, খুলনায় ৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, বরিশালে ৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, সিলেটে ৩ দশমিক ৮১ শতাংশ, রংপুরে ৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ময়মনসিংহে ২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
এ পর্যন্ত ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন, ৪ হাজার ৩৬৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৪৪৭ জন, রাজশাহীতে ৪৫০ জন, খুলনায় ৫৪২ জন, বরিশাল ২৪০ জন, সিলেটে ৩০০ জন, রংপুরে ৩৫৩ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১৮৩ জন।