আলমগীর পারভেজ : আজ ‘১৪তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০২১’। বিজ্ঞানীরা বলছেন, অটিজম মস্তিষ্কের বিকাশজনিত সমস্যা। এই সমস্যার কারণে শিশু অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করতে পারে না। এরা একই কাজ বা আচরণ বারবার করে।এটি মানুষের হরমোনজনিত সমস্যার বহিঃপ্রকাশ।
অটিজম কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। এটির প্রতীকী রং নীল। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের প্রত্যেকের বৈশিষ্ট্য যেমন আলাদা; তেমনি তাদের প্রতিভাও ভিন্ন। কেউ হয়তো ভালো ছবি আঁকতে পারছে, কেউ বা নিজের কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারে। এসবই অটিজমে আক্রান্ত শিশুর সাফল্য বলে খুশি থাকতে হবে। তারা আরো বলেন, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর জন্য কেবল মাকে নয়, বাবাকেও কোয়ালিটি সময় দিতে হবে। জিমনেসিয়াম, সুইমিং পুলে সপ্তাহে অন্তত একদিন বিশেষ শিশুদের জন্য সুযোগ রাখা প্রয়োজন। অভিভাবকদের কাউন্সিলিং দরকার। কারণ এই শিশুদের অভিভাবকরা ভালো থাকলে তাদের সন্তানটিও ভালো থাকবে। তবে একটি গবেষণা বলছে, এক–তৃতীয়াংশ অটিস্টিক শিশুর মায়েরা পরিবার ও প্রতিবেশীর কাছ থেকে নেতিবাচক আচরণ পেয়ে থাকেন। ৪১ শতাংশ মা একাই অটিস্টিক শিশুর দেখাশোনা করেন। ৫৯ শতাংশ মাকে সহায়তা করেন গৃহকর্মী, স্বামী, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, অন্য সন্তান এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবেশী।
এক–তৃতীয়াংশ মায়ের অভিযোগ, প্রতিবেশীরা অটিস্টিক শিশুদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। অনেকে পাগল বলে, তাচ্ছিল্ল করে। অনেকে আবার এসব শিশু দেখে ভয় পায়। অটিস্টিক শিশুদের মায়েদের প্রায় অর্ধেক মানসিক রোগী। আইসিডিডিআরবির অসংক্রামক ব্যাধি শাখার বিজ্ঞানী আলিয়া নাহিদ বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয়, শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগলেও অনেক মা চিকিৎসকের কাছে যান না, যেতে পারেন না।
সম্প্রতি ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম (ইপনা)-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামের চেয়ে শহরে অটিস্টিক শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন এবং শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ২৫ শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন। মেয়ে শিশুর চাইতে ছেলে শিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। এছাড়া দেশে ১৬ থেকে ৩০ মাস বয়সি শিশুদের মধ্যে অটিজম বিস্তারের হার প্রতি ১০ হাজারে ১৭ জন।
যুক্তরাষ্ট্রের অটিজম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ অটিজম আক্রান্ত। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মতে, দেশের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির মধ্যে ২ দশমিক ৮৭ শতাংশ অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। তবে ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রায় দেড় লাখের মতো অটিজম আক্রান্ত মানুষ রয়েছে। প্রতি বছর তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরো প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিশু।
এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজ শুক্রবার দেশে পালিত হবে ১৪তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হয়েছে—‘আলোকিত হউক উদারতায়’। দিবসটি উপলক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তবে কারোনা সংক্রমণের কারণে এসব কর্মসূচির বেশির ভাগ অনলাইনে পরিচালিত হবে বলে জানা গেছে।
বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস-২০২১ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মহামারী-উত্তর বিশ্বে ঝুঁকি প্রশমন, কর্মক্ষেত্রে সুযোগ হবে প্রসারণ’ সময়োপযোগী হয়েছে বলে আমি মনে করি।
উল্লেখ্য, মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় চলতি অর্থবছর অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন দুই হাজার পাঁচশ ব্যক্তির প্রত্যেককে চিকিৎসা অনুদান বাবদ ১০ হাজার টাকা করে প্রদান করছে।