সময় সংবাদ রিপোর্ট : বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষে (বেবিচক) বর্তমানে ৫৯ জন কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক কর্মরত। এর মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র কনসালটেন্ট, কনসালটেন্ট, বিশেষ পরিদর্শক, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির প্রধানসহ অন্যান্য সদস্য। এর মধ্যে বিশেষ পরিদর্শক তথা সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর পদে নিয়মিত পাইলট পাওয়া যাচ্ছে না বেতনের অভাবে। তাই তাদেরসহ চুক্তিভিত্তিক সবার বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেবিচকের বিভিন্ন কর্মচারীদের সম্মানী বাড়ানো হয়েছে। বেবিচকের বোর্ডসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।জানা গেছে, আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুযায়ী বেবিচকে ‘একটিভ’ ও ‘টাইপ রেটেড ফ্লাইট অপারেশনস ইনসপেক্টর’ দরকার। সে জন্য ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ‘সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশনস ইনসপেক্টর’ নিয়োগ দেওয়া হয়। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ‘একটিভ’ পাইলটদের বেতন তুলনামূলক বেশি। কোভিড মহামারীর কারণে দেশে ‘একটিভ’ পাইলট প্রাপ্যতা সহজ ছিল। এ কারণে ওই পদে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বেতনে ৩ জন পরিদর্শক নিয়োগ করা গেছে।কিন্তু পরবর্তী সময়ে এ পদে নতুনভাবে কিছু পরিদর্শক নিয়োগের সার্কুলার করা হলে মাত্র দুজন প্রার্থী পাওয়া যায়। ফলে কোভিড-পরবর্তী বর্তমান পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বিদ্যমান বেতনে তাদের না পাওয়ার শঙ্কাই বেশি।
এ জন্য বিশেষ পরিদর্শকদের বেতন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা করার প্রস্তাব করেছে বেবিচক। সামগ্রিক বিবেচনায় চুক্তিভিত্তিক পদে কর্মরত সিনিয়র কনসালটেন্ট, কনসালটেন্ট, বিশেষ পরিদর্শক, জুনিয়র কনসালটেন্ট ও বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির প্রধানসহ সদস্যদের মাসিক বেতন বাড়ছে।বেবিচকের বিভিন্ন বিভাগে বর্তমানে ৫৯ জন কর্মকর্তা সিনিয়র কনসালটেন্ট, কনসালটেন্ট, বিশেষ পরিদর্শক, জুনিয়র কনসালটেন্ট হিসেবে চুক্তিভিত্তিক কর্মরত। এর মধ্যে ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস বিভাগেই ৫০ জন। অপরদিকে দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটিতে চারজন সদস্য আছেন।এ ছাড়া বেবিচকে অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি বিভাগে চার জন ও ফাইন্যান্স বিভাগে একজন কর্মরত। চুক্তিভিত্তিক কর্মরতদের মধ্যে বিশেষ পরিদর্শক (সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর) আছেন ৩ জন। তাদের মাসিক বেতন ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বিমান দুর্ঘটনা ও তদন্ত কমিটির প্রধান একজন। তিনি পান ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা। বিমান দুর্ঘটনা ও তদন্ত কমিটির সদস্য ৩ জন পান একই হারে। এ ছাড়া বিশেষ পরিদর্শক (সিনিয়র ইন্সপেক্টর/সিনিয়র কনসালটেন্ট) ৯ জন। তাদের বেতনও একই রকম। বিশেষ পরিদর্শক / কনসালটেন্ট ২৪ জন আছেন।
বেতন ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা করে। জুনিয়র কনসালটেন্ট ৭ জন বেতন পান ৭২ হাজার ১৫০ টাকা করেবেবিচকে আছেন ৮ জন ডেজিগনেটেড ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর। তাদের বেতন ৪৫ হাজার ১৫০ টাকা করে। এ ছাড়া অ্যাভিয়েশন মেডিক্যাল এক্সামিনার ৪৫ জন আছেন। বেতন নেন ৩৬ হাজার ১৫০ টাকা করে। এর মধ্যে প্রথম ছয়টি পদের ব্যক্তিরা পূর্ণকালীন। আর ডেজিগনেটেড ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর ও অ্যাভিয়েশন মেডিক্যাল এক্সামিনার খ-কালীন হিসেবে কর্মরত। তবে তারা পূর্ণকালীন দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত।২০১২ সালের আইকাও কো-অর্ডিনেশন ভেলিডেশন মিশন (আইসিভিএম) নামের অডিটে বাংলাদেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। ২০১৭ সালে আইকাও অডিটে আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন রেগুলেটরি কার্যক্রমকে অনন্য উচ্চতায় নিতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের ভূমিকা রয়েছে। আইকাও সেফটি রেটিং ৭৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং সিকিউরিটি রেটিং ৭৭ দশমিক ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।বেবিচক মনে করছে, বিমান দুর্ঘটনা ও তদন্ত কমিটির প্রধান থেকে শুরু করে অ্যাভিয়েশন মেডিক্যাল এক্সামিনার পর্যন্ত সর্বশেষ বেতন নির্ধারণ করা হয় ২০১৬ সালে। তখন ৮০ শতাংশ বাড়ানো হয়।
গত ৬ বছরে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ জন্য তাদের বেতন বা পরামর্শক ফি বাড়ানো প্রয়োজন।সূত্রমতে, বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির প্রধানসহ অন্যান্য সদস্য সিনিয়র কনসালটেন্টের সমান বেতন পান। প্রধান হিসেবে তার বেতন ২০ হাজার টাকা বাড়ানো যেতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় বিশেষ পরিদর্শক (সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর) এর জন্য ৭ লাখ ১৮ হাজার ৭৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া বিশেষ পরিদর্শকের (সিনিয়র ইনসপেক্টর/সিনিয়র কনসালটেন্ট) বেতন ৩ লাখ ২৪ হাজার, বিমান দুর্ঘটনা ও তদন্ত কমিটির প্রধান ৩ লাখ ৫০ হাজার ৭০০, বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত কমিটির সদস্য ৩ লাখ ২৪ হাজার, বিশেষ পরিদর্শক/কনসালটেন্ট ২ লাখ ৩৪ হাজার, জুনিয়র কনসালটেন্ট ১ লাখ ৪৪ হাজার, ডেজিগনেটেড ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর ৯০ হাজার ৩০০ টাকা এবং অ্যাভিয়েশন মেডিক্যাল এক্সামিনারদের জন্য প্রস্তাব করা হয় ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে পরিচালককে (প্রশাসন) প্রতিবেদন দিতে অনুরোধ করা হয়।
এদিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির সদস্য এবং সহায়ক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্মানীর হার ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর নির্ধারণ করা হয়েছিল। সে হিসেবে চেয়ারম্যান পদমর্যাদায় সম্মানী ৬ হাজার টাকা, যুগ্ম সচিব/সদস্য ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তার জন্য ৫ হাজার টাকা, পরিচালক/উপসচিব ও সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য ৪ হাজার টাকা, উপপরিচালক পদমর্যাদার হলে ৩ হাজার, সহকারী পরিচালক হলে ২ হাজার এবং সাচিবিক দায়িত্ব পালনকারী কর্মচারী সর্বোচ্চ ৩ জন) হলে ১ হাজার ৫০০ টাকা।গত ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরে সম্মানী শতকরা ৬৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। বেবিচক চেয়ারম্যানের জন্য ৮ হাজার, যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার জন্য ৬০০০, উপসচিব মর্যাদার ৫০০০, উপপরিচালক হলে ৪০০০, সহকারী পরিচালক হলে ৩০০০ টাকা এবং সাচিবিক দায়িত্বপালনকারী কর্মচারীদের জন্য ২৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।আর নিয়োগসংক্রান্ত কাজের জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়নে ৫ হাজার টাকা, উত্তরপত্র মূল্যায়ন প্রভাষক হলে ৫ হাজার টাকা, সহকারী শিক্ষক হলে ৩ হাজার টাকা, মৌখিক/ব্যবহারিক পরীক্ষা বোর্ডের সদস্য/বিশেষজ্ঞদের পারিতোষিক হার (প্রতি দিনের জন্য) ৫ হাজার, ভেন্যুর ফি প্রার্থী প্রতি ৬০ টাকা, ভেন্যুর প্রতিষ্ঠান প্রধান সম্মানী ৩০০০, পরীক্ষা কেন্দ্রের পরিদর্শকের পারিতোষিক প্রতি দিনের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা। পরীক্ষা কেন্দ্রের সহায়ক কর্মচারীদের পারিতোষিক প্রতি দিনের জন্য ৬০০ টাকা, লিখিত পরীক্ষার আসনবিন্যাস প্রার্থীপ্রতি ২ টাকা, ভেন্যুর জন্য বিবিধ (কাগজ, কলম ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি) ৫০০০ টাকা করা হয়েছে সর্বশেষ বোর্ডসভায়।