*সময় সংবাদ লাইভ রির্পোটঃ চলমান বিধি-নিষেধ শিথিল করলে বা পুরোপুরি তুলে নেয়া হলে মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে দৈনিক করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এপিডেমিওলজিকাল প্রজেকশন মডেলিংয়ের ওপর ভিত্তি করে এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন তারা। পূর্বাভাসে বলা হয়, বর্তমানে যে হারে সংক্রমণ কমছে এর ধারা আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে। তবে ঈদে মানুষের চলাচল বেড়ে যাওয়ায় পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে সংক্রমণ বাড়তে পারে। জুনের তৃতীয় সপ্তাহে যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
গবেষকরা বলেন, একইভাবে এই সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়তে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিন হাজার ৩০৬ জন এবং মারা গেছেন ৯৭ জন।
কোভিড-১৯ ইন্টারন্যাশনাল মডেলিং কনসোর্টিয়ামের সদস্য শাফিউন শিমুল গতকাল সোমবার সময় সংবাদ লাইভকে বলেন, ‘গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণের হার কমছে। চলাচলে বিধি-নিষেধ থাকায় মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ এই হার একই রকম থাকবে। তবে ঈদে চলাচল বাড়বে, ফলে সংক্রমণের হার আবার ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।’
এই কনসোর্টিয়াম গঠিত হয়েছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকসহ ৪০টি দেশের সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক মডেলারস ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে।
এই দলের গবেষকরা নিজ দেশের বিদ্যমান অবস্থার ওপর ভিত্তি করে মহামারি সংক্রান্ত বিদ্যা ও অর্থনৈতিক মডেল অনুসরণ করে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে কাজ করেন। যা ওই দেশের নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে।
কনসোর্টিয়ামের বিশ্লেষণ অনুসারে, গত বছর ৮ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে অথবা এ সংক্রান্ত বিভিন্ন জটিলতায় মারা গেছেন। এই দলের গবেষকরা বলছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ এমন মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারে পৌঁছাবে।
কনসোর্টিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনোমিকসের সহযোগী অধ্যাপক শাফিউন শিমুল বলেন, ‘এ ধরনের অনেক মৃত্যুর ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কোনো উপাত্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই এ ক্ষেত্রে আমরা বিভিন্ন দেশের গবেষণাপত্র ও অভিজ্ঞতার উপাত্ত ব্যাবহার করেছি। এ ছাড়া মহামারির কারণে চিকিৎসা না পেয়ে অন্যান্য রোগে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের বিষয়টিও আমরা বিবেচনায় রেখেছি। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ প্রত্যক্ষ করছে।
১৬ এপ্রিল থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে। গতকাল এই হার ছিল ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ। যা সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে কম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১১ হাজার ১৫০ জন মারা গেছেন। মৃত্যুহার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৪৯ শতাংশে।
এদিকে, বছরখানেক ধরে সংক্রমণ এড়িয়ে চললেও করোনা মহামারিতে ফিজির রাজধানী সুভায় এবার লকডাউন ঘোষণা করতে হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) কোভিড-১৯ রোগের ভারতীয় ধরন শনাক্ত হওয়ার পর আক্রান্তের ‘সুনামির’ আশঙ্কা করছে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশটি।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবর বলছে, চলতি মাসে নাদি শহরে একটি কোয়ারেন্টিন স্থাপনায় করোনার গুচ্ছ সংক্রমণের আগে ফিজিতে ব্যাপকার্থে কোনো কমিউনিটি সংক্রমণ ছিল না। স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা বিষয়ক স্থায়ী সচিব জেমস ফং বলেন, মঙ্গলবার একটি কোয়ারেন্টিন স্থাপনায় নতুন করে ছয়জন আক্রান্ত হয়েছেন। ভারতে যে টালমাটাল অবস্থা, তাতে করোনার এই ধরনকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। ফিজিতে কোনোভাবই এই দুঃস্বপ্ন ঘটতে দিতে পারি না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
জেমস ফং বলেন, মহামারির ব্যাপক সংক্রমণ বন্ধে আমাদের হাতে এখনো সময় আছে। কিন্তু সামান্য একটি ভুলে বন্ধু রাষ্ট্র ভারত, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থায় আমাদের নিয়ে যেতে পারে।
কঠোর আইসোলেশন পদক্ষেপে ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের কারণে ফিজিতে করোনা তেমন প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারেনি। ৯ লাখ ৩০ হাজার জনসংখ্যার দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১০৯টি করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।
কোয়ারিন্টিন স্থাপনায় এক সেনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর গুচ্ছ সংক্রমণ শুরু হয়েছে। পরে তার স্ত্রীর গায়েও ছড়িয়েছে। জেমস ফং বলেন, ওই সেনা বিদেশে কর্মরত ছিল। কিন্তু কোয়ারেন্টিন বিধি লঙ্ঘন করে তিনি সবার সঙ্গে মিশে যাওয়ায় এই সংক্রমণ আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।