সময় সংবাদ রিপোর্টঃ কখনো কখনো রিল্যাক্স করাটাও অনেক বড় কাজ!’- অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেমিফাইনালের আগের দিন নিজের স্যোশাল মিডিয়ার ফ্যান পেজে এমন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম। রিল্যাক্স মুডে বসে আছেন, চোখে সানগ্লাস -এমন একটি ছবিও সঙ্গে যোগ করে দিয়েছেন। সত্যিই পাকিস্তানের এই অধিনায়ক অন্যরকম। ভয়ংকর টেনশনের মধ্যেও তিনি নিজেকে ফুরফুরে রেখেছেন। আসলে এই পাকিস্তান দলটাই যেন বেশ বিচিত্র ধরনের। নিকট অতীতের কোনো বিশ্বকাপে খেলা পাকিস্তানের দলকে এমন নির্ভার কখনো দেখা যায়নি।
সেমিফাইনালের লড়াই। প্রতিপক্ষ ভয়ঙ্কর অস্ট্রেলিয়া। একটু এদিক সেদিক হলেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যাবে। তারপরও এ নিয়ে যেন বিন্দুমাত্র ভাবনা নেই পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের। গতকাল বুধবার (১০ নভেম্বর) দুবাই স্পোর্টস সিটির আইসিসি একাডেমি মাঠে তারা অনুশীলন করলেন। কোনো ক্রিকেটারের মধ্যে বিন্দুমাত্র টেনশনের ছায়া লক্ষ্য করা যায়নি। প্রত্যেক ক্রিকেটারই ভীষণ উচ্ছ্বাসিত। তারা হাসির ছলেই অনুশীলন করছেন।
এই পাকিস্তানকে আগের যেকোনো সময়ের পাকিস্তান দলের সঙ্গে মোটেও মেলানো যাবে না। এটা সম্পূর্ণ আলাদা একটা দল। রণক্ষেত্রে মানে বাইশগজে তারা যতটা খুনে ম্যাজাজে থাকে, মাঠের বাইরে যেন ঠিক ততটাই শান্ত-শিষ্ট। একেবারে যেন দুশ্চিন্তা মুক্ত। একজন অধিনায়ক, একজন কোচ এবং একজন বোর্ড সভাপতি-তিন মাথার ভাবনা যখন এক বিন্দুতে মিলে যায় সেই দলের বাড়তি কোনো চিন্তা থাকার কথাও নয়। বিশ্বকাপের কিছুদিন আগেও এই পাকিস্তান দলকে কে ফেবারিটের তালিকায় রেখেছিল?কেবলমাত্র পাকিস্তানের অন্ধভক্ত ছাড়া অন্য কেউ যেন বিশ্বাসই করেছি এই দলটির পক্ষে সেমিফাইনাল খেলা সম্ভব। কারণ তারা এমন এক দলে যেখানে ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মতো ভয়ংকর দুই প্রতিপক্ষ আছে। কিন্তু পাকিস্তান এবারের আসরে কিনা সেই ভয়ংকর দুই প্রতিপক্ষকে হারিয়েই তাদের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল। তারপর একে একে গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করে ছাড়ল। এখন সেই পাকিস্তানই শিরোপার অন্যতম দাবিদার।হঠাৎ পাকিস্তানের বদলে যাওয়ার শুরুটা কিন্তু বোর্ড সভাপতি হিসেবে সাবেক অধিনায়ক রমিজ রাজার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে। তার আগে বেশ ধুঁকছিল পাকিস্তান। কিন্তু রজিম রাজা দায়িত্ব পাওয়ার পর কোচ হিসেবে নিয়োগ দিলেন ম্যাথু হেইডেন। অজি তারকার প্রথম কাজ ছিল পুরো দলকে আগে ‘কুল’ করে দেওয়া।
কারণ পাকিস্তানে প্রতিভা অনেক। কিন্তু তারা সঠিকভাবে নিজেদের প্রতিভাটা কাজে লাগাতে পারছিল না। অজি কোচ দায়িত্ব নিয়ে দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে বসলেন, নিজের পরিকল্পনার কথা জানালেন। তারপর সেই দলটিকে নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে চলে আসলেন। হেডেনের ‘কুল-মস্তিষ্ক’ নীতিতেই কাজ হয়ে গেল পাকিস্তানের। একের পর এক আসতে থাকে সাফল্য।আজ বৃহস্পতিবার সেমিফাইনালে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। এই বিশ্বকাপে ভয়ঙ্করন আরেকটি দল। এখন পর্যন্ত এই আসরে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়টি কিন্তু অজিদেরই। পাকিস্তানের মতো অপরাজিত নয় তারা। প্রথম ম্যাচেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদম সুবিধা করতে পারেননি অ্যারোন ফিঞ্চরা। কিন্তু এরপর থেকে প্রতিটি ম্যাচে যাকে সামনে পেয়েছে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে তারা জিতছে খেলেছিল মাত্র ৩৮ বল। যেমন বোলিং তেমন অসাধারণ তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। আর অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডিং তো বরারবই দুর্দান্ত।এই দলটিকে আজ খেলতে হবে ক্যারিশম্যাটিক দল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। শক্তি-সামর্থ্যরে দিক দিয়ে পাকিস্তান থেকে পিছিয়ে নেই অজিরা। বরং পাওয়ার হিটারের কথা চিন্তা করলে খানিকটা এগিয়েই রাখতে হবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ম্যাথু হেইডেন। পাকিস্তানের কোচ একজন অস্ট্রেলিয়ান হওয়ায় যেন খানিকটা শঙ্কাতেই আছেন তারা। কারণ হেইডেন যে অসিদের হাঁড়ির খবর সবই জানেন।তবে টি-২০ ফরম্যাটটা এমন, ভালো খেলতে পারলে প্রতিপক্ষের শক্তিমত্ত্বা কিংবা পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো ভাবনার কিছু নেই। এই ফরম্যাটে যেমন নির্দিষ্ট দিনে দাপট দেখিয়ে যে কেউ জিতেও যেতে পারে, আবার অতি আত্মবিশ্বাসের কারণে যে কেউ হারতেও পারে।
এম/পি….