সময় সংবাদ রিপোর্ট : মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের শনাক্ত বাড়তে থাকায় উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ভাইরাসটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী ‘জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। যে কোনো স্বাস্থ্য সঙ্কটে এটিই সংস্থাটির জারি করা সর্বোচ্চ জোরাল সতর্কতা। খবর বিবিসি ও সিএনবিসি।
শনিবার এই ইস্যুতে বৈঠকে বসে ডব্লিউএইচও-এর নীতি নির্ধারকরা। তারা মাঙ্কিপক্স প্রার্দুভাবটিকে পুরো বিশ্বের মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে। কর্তৃপক্ষ বলছে, মাঙ্পিক্সের সম্ভাব্য মহামারী ঠেকাতে বৈশ্বিকভাবে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
এর আগে মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাব নিয়ে ‘বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করা হবে কিনা, তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞ গ্রুপের সদস্যরা। কিন্তু রোগটি নিয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক অ্যান্তোনিও গুতেরেস।
ডব্লিউওএইচও মাঙ্কিপক্স প্রার্দুভাবটিকে পুরো দুনিয়ার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য হুমকি হিসেবে দেখছে। বিশ্বের ৭৫টির বেশি দেশে ১৬ হাজারের বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত এই রোগে শনাক্ত হয়েছে বলে জানান ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস।
এই প্রাদুর্ভাবের ফলে এ পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে এই ধরনের আরো দুটি স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা রয়েছে – করোনভাইরাস মহামারী এবং পোলিও নির্মূলের অব্যাহত প্রচেষ্টা। তবে সঠিক কৌশলের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করা যেতে পারে বলে বিশ্বাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালকের।
সিডিসির হাই কনসিকোয়েনস প্যাথোজেনস অ্যান্ড প্যাথলজি বিভাগের উপপরিচারক ডা: জেনিফার ম্যাককুইস্টিন বলেন, শিশুদের শরীরে মাঙ্কিপক্স শনাক্ত হওয়ায় বিস্ময়ের কিছু নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত সমকামী, উভকামী কিংবা পুরুষের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা পুরুষের বাইরে কেউ এতে আক্রান্ত হচ্ছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ইউরোপ হলো মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল। কারণ, নিশ্চিত হওয়া মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত রোগীর ৯০ শতাংশই এ অঞ্চলের। চলতি বছরের ১৫ জুন থেকে এ পর্যন্ত ইউরোপে নতুন সংক্রমণ বেড়েছে তিনগুণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স বসন্তের একটি বিশেষ ধরন। সংক্রামক হলেও রোগীর সংস্পর্শে না এলে এই রোগ ছড়ায় না। বিভিন্ন বানর জাতীয় প্রাণীর মাধ্যমে এটি ছড়ায়। এ ছাড়া শ্বাসনালি, শরীরে তৈরি হওয়া কোনো ক্ষত, নাক কিংবা চোখের মাধ্যমেও অন্যের শরীরে প্রবেশ করতে পারে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ভাইরাস সম্পর্কে সবাইকে বিস্তারিত জানতে আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও। কিভাবে মাঙ্কিপক্স ছড়াচ্ছে তা চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও জোর দিয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যান্টিভাইরাল ভ্যাকসিন গ্রহণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাঙ্কিপক্স একটি বিরল ভাইরাল সংক্রমণ। যা সাধারণত মৃদু হয়। বেশিরভাগ আক্রান্ত ব্যক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। ভাইরাসটি খুব সহজে মানুষের মধ্যে ছড়ায় না এবং ব্যাপক হারে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুব কম।
এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সে আক্রান্তদের নির্দিষ্ট ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতিও নেই। পরিসংখ্যান অনুসারে, স্মলপক্সের টিকা ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাঙ্কিপক্সের বিরুদ্ধে কাজ করে।