সময় সংবাদ রিপোর্ট:নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গোপনীয়তা রক্ষার শপথ ভঙ্গ করেছেন দাবি করে তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছে ক্ষমতাসীন ১৪ দল।
বুধবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের অবস্থান জানান জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।
নাসিম বলেন, ‘মাহবুব তালুকদার যারা সাংবিধানিক পদে রয়েছেন, তাদেরকে যেকোনো বিষয়ে গোপনীয়পতা রক্ষা করতে হবে। তিনি এটা খুবই অন্যায় করছেন। এই ধরনের পদ থেকে এই ধরনের আচরণ তার করা উচিত নয়। অন্যথায় তার পদটি ছেড়ে দেয়া উচিত।’
নির্বাচন কমিশনে মাহবুব তালুকদারের দুই দফা নোট অব ডিসেন্ট নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। প্রথম দফা তিনি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আর সবশেষ গত সোমবার চারটি কারণে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেন।
এই নির্বাচন কমিশনারের দাবি, তিনি কমিশনে কথা বলতে পারছেন না। রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে উঠে আসা বিষয়বস্তুর বিষয়ে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
বিএনপি এরই মধ্যে মাহবুব তালুকদারের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আর তারা কমিশনের পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অবশ্য নির্বাচন কমিশনে ভিন্নমতকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এটাই গণতন্ত্র। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, কমিশনে ভিন্নমত নির্বাচন অনুষ্ঠানে কোনো বাধা নয়।
জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি
সেনা প্রধানের নিরুদ্ধে মিথ্যাচার করায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছে ১৪ দল। জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, দেশরক্ষা বাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের কথা জাফরুল্লাহ স্বীকারও করেছেন। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণ নেই।
১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ‘ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী একজন বুদ্ধিজীবী নামধারী ব্যক্তি। আমরা শুনেছি, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাথে তার আত্মীয়তার সম্পর্ক আছে। তিনি কতদিন আগে দেশপ্রেমিক সেনা প্রধানের নামে জঘন্য মিথ্যচার করেছেন। এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি ব্যাখ্যাও দেয়া হয়েছে। তিনি নিজেও একথা স্বীকার করেছেন তিনি অসত্য কথা বলেছেন। ১৪ দল দাবি করে এধরনের ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
গত ৯ অক্টোবর একটি বেসরকাটি টেলিভিশনের টক শোতে জাফরুল্লাহ একুশে আগস্টের হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডের উৎস নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে দাবি করেন ২০০৪ সালে আজিজ আহমেদ চট্টগ্রামের জিওসি থাকাকালে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খোয়া যায়। এ নিয়ে পরে কোর্ট মার্শাল হয় তার।
এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সেনাবাহিনী জানায়, আজিজ আহমেদ কখনও চট্টগ্রামের জিওসি ছিলেন না, আর তিনি তার চাকরি জীবনে কখনও কোর্ট মার্শালের মুখোমুখি হননি।
পরে জাফরুল্লাহ তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে তিনি দাবি করেন, আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে কোর্ট মার্শাল না হলেও কোর্ট অব ইনকোয়ারি হয়েছিল।
পরে সেনাবাহিনী থেকে এই তথ্যকেও অসত্য বলে জানানো হয়। আর জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয় সেনা সদরদপ্তরের পক্ষ থেকে। তার এই বক্তব্যের পেছনে কারা, সেটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয় এই ডায়েরিতে। পরে এই সাধারণ ডায়েরিটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়।
সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে ড. কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া এবং আরও কয়েকটি ছোট দল নিয়ে যে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়েছে তাতে মধ্যস্ততার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজেও এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে যোগ দিয়েছেন।
মো. নাসিম বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং নির্ধারিত সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অশুভ চক্রান্ত করেছে বিএনপি-জামায়াত জোট। এই জোট নতুন কিছু সঙ্গী জোগাড় করে ঐক্যের নামে নির্বাচনের বিরুদ্ধে একটি অশুভ চক্রান্ত শুরু করেছে।
বিএনপির দাবি নিয়ে ভাবার কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে ১৪ দলের মুখপাত্র বলেন, ‘যে দাবি অসাংবিধানিক, যে দাবির কোনো যুক্তি নাই। সে দাবি ভাববার কোন সুযোগই নাই। সে দাবি নিয়ে তারা আবার মাঠে নামার চেষ্টা করছে।’
১৪ দলের কর্মসূচি
১৪ দলের বৈঠকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় সমাবেশেরও সিদ্ধান্ত হয়। ২৬ অক্টোবর চুয়াডাঙায় এবং ২৯ অক্টোবর ঢাকার মতিঝিলে সমাবেশ হবে বলে জানান নাসিম। আর মতিঝিলের সমাবেশ থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা দেয়া হবে।