Header Border

ঢাকা, শনিবার, ৫ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (শরৎকাল) ৩০.২৭°সে
শিরোনাম
প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় ! সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় ! অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায় ! ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরাইলকে বয়কটের আহ্বান এরদোগানের আজ ঢাকায় সমাবেশ,৯ মহানগরে শোভাযাত্রা;নতুন বার্তা দেবেন তারেক রহমান মোজাম্মেল-শাহরিয়ার-শ্যামল ৭ দিনের রিমান্ডে ডিসি নিয়োগ নিয়ে আজও বিক্ষোভ সচিবালয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে কাছে ৯টি দফা দাবি জানিয়েছে নদী ও প্রাণ-প্রকৃতি নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর ট্রাস্ট’। ভারত পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে প্রভুত্বের রাজনীতি করেছে: মির্জা ফখরুল

রাজনীতিতে নতুন হিসাব-নিকাশ

সময় সংবাদ রিপোর্টঃ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এখনো প্রায় দুই বছর বাকি। তবে এরই মধ্যে পর্দার অন্তরালে রাজনৈতিক অঙ্গনে জোট ভাঙা-গড়ার নতুন হিসাব-নিকাশ শুরু হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে গেছে একটি ইসলামি দল। শোনা যাচ্ছে, ইসলামি দলগুলো নিয়ে নতুন একটি জোট গড়ার চেষ্টা চলছে। গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়াকে আহ্বায়ক করে এবং নিজেকে সদস্য সচিব করে ‘গণ-অধিকার পরিষদ’ নামে নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, জোট ভাঙা-গড়ার খেলা ততই জমে উঠবে। তবে এই ভাঙা-গড়া বিএনপি ও আওয়ামী লীগের চৌহদ্দির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে ১৪ দল থেকে কোনো শরিক দল অন্য জোটে যাচ্ছে কিনা, কিংবা অন্য কোনো দলকে জোটে ভেড়ানো যায় কিনা তা নিয়েও চিন্তা করছেন দলের শীর্ষনেতারা।

বিএনপি তো বৃহত্তম জোট বা ‘প্ল্যাটফর্ম’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে কাজ শুরু করেছে। ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট না ভেঙে কিভাবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করা যায়, তা নিয়ে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা ভেতরে ভেতরে কাজও শুরু করছেন। কোন কোন রাজনৈতিক দলকে নিরপেক্ষ সরকারের দাবির ব্যানারে আনা যায়, তা নিয়েও ভেতরে ভেতরে চলছে দেনদরবার। অন্যদিকে উভয় জোটের বাইরে থাকা বাম দলগুলো অতীতের মতোই নির্বাচন সামনে রেখে ভোটাধিকার আন্দোলন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে মাঠে থাকবে। তবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) নেতারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি বুঝে তারা নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন।

নতুন দল ও জোটের আত্মপ্রকাশ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন রাজনীতিবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ফাঁকা মাঠে গোল করছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন যখন আসন্ন হয়, তখন কিছু দল জোটে ভেড়ে। জোটে ভিড়লে কিছু পায়। তবে এসবের আমি ইতিবাচক কিছু দেখছি না। রাজনীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না।’নতুন দলের আত্মপ্রকাশ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব নতুন দল বুদ্বুদের মতো। মাঝেমধ্যে ফুটে ওঠে, আবার মিলিয়ে যায়। এভাবে রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে না। রাজনৈতিক দলকে জনগণের মধ্যে থেকে গড়ে উঠতে হয়।’

‘গণ-অধিকার পরিষদ’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে। একই রকম আলোচনা হয়েছিল ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি) আত্মপ্রকাশ নিয়েও। গত বছরের মে মাসে জামায়াত থেকে বেরিয়ে এই দলের ঘোষণা দেন ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মনজু। তিনি নিজে সদস্য সচিব হয়ে সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরীকে আহ্বায়ক করেন। এই পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ উপদেষ্টা জামায়াতে পদত্যাগী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। কিন্তু তেমন আলোচনায় নেই। দলটির অনেক নেতাকর্মী ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিতে যোগ দিয়েছেন।

রাজনীতিতে নতুন দল কিংবা জোট গঠনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘একটি দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বহু দল গঠিত হতে পারে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তবে অর্থবহ রাজনৈতিক দলকে অর্থবহ রাজনৈতিক দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে। সাইনবোর্ডসর্বস্ব দল করে নিজের প্রচার করা যাবে, কিন্তু মানুষের কোনো উপকারে আসবে না।’

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বলেন, ‘যে দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটেছে, সেটিকে স্বাভাবিকভাবে এখনই রাজনৈতিক দল বলা যায় না। কারণ দলটি এখনো নিবন্ধিত হয়নি। রাজনৈতিক দল হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে বলা যায়। তা ছাড়া তারা এখনো দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেনি। সুতরাং তাদের বিষয়ে এখনই মন্তব্য নয়। আগামীতে পরিস্থিতি বুঝে তাদের বিষয়ে মন্তব্য করব।’

এদিকে টানা তিনবার ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চৌদ্দ দল। নিজেদের মধ্যে ‘মান-অভিমান’ থাকলেও জোটে তেমন টানাপড়েন নেই। হিসাব না মিললে ক্ষমতাসীন জোট থেকে দু-একটি দল বেরিয়ে যেতে পারে বলে গুঞ্জন আছে।

এ বিষয়ে জোটের শরিক দল বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘এসব বিষয়ে কথা বলার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি। এসবের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা জোটে থেকেও গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার প্রতিবন্ধকতা নিয়ে গঠনমূলক মন্তব্য করেছি। নির্বাচনী পরিস্থিতি ঘনিয়ে এলে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাব।’

নতুন দলের আগমন নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নতুন দল এবং নতুন ষড়যন্ত্র সবকিছুই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এসবের নেপথ্যে কারা আছে, তাও দেখছি। মোট কথা যা-ই হবে- সবকিছুর জন্য আওয়ামী লীগ প্রস্তুত আছে।’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘একটি সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতিকরা নতুন রাজনৈতিক দল গড়ার অধিকার রাখেন। কিছু তরুণ নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, এটি গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য ভালো খবর। তারা দেশ, স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের প্রতি শতভাগ কমিটেড থাকুন, ধারণ করুন এবং তারা যেন কোনো দেশবিরোধী অপশক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত না হয়, এই প্রত্যাশা করি। আমি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে সদ্য প্রসূত রাজনৈতিক দলটির জন্য শুভ কামনা করছি।’

চলতি মাসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিস। দলের আমির মাওলানা ইসহাক বলেন, ‘রাজনৈতিক জোট ইস্যুকেন্দ্রিক হয়। জোট কোনো স্থায়ী বিষয় নয়। আদর্শিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে খেলাফত মজলিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা একটি আদর্শিক রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বকীয়-স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নিয়ে ময়দানে ভূমিকা রাখবে এবং ২০ দলীয় জোটসহ সব রাজনৈতিক জোটের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করবে।’

এর আগে ২০১৬ সালের ৭ জুন ২০ দলীয় জোট ছেড়ে যায় মুফতি ফজলুল হক আমিনীর প্রতিষ্ঠিত ইসলামি ঐক্যজোট (নিবন্ধিত)। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (নিবন্ধিত), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) ও লেবার পার্টি, ২০১৯ সালের ৬ মে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ (নিবন্ধিত) এবং ১৪ জুলাই জোট ছেড়ে যায় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম (নিবন্ধিত)।

এমন পরিস্থিতিতে নতুন দল ও জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ‘দেশে মানুষের ভোটাধিকার নেই, মানবাধিকার নেই ও গণতন্ত্র নেই। এসব ফেরাতে একটি জনগণের সরকার দরকার। এ জন্য চাই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। আমরা এই দাবিতে আন্দোলনে আছি। এই আন্দোলনে যারা আসবে, তাদেরকেই আমরা স্বাগত জানাব।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না গত রবিবার এক আলোচনাসভায় বলেন, ‘বর্তমান সরকার যারা চালাচ্ছেন, তারা বুদ্ধিমান নয়, তারা চতুর, তারা ধূর্ত, তারা খল। আমরা যারা লড়াই করতে চায়- এটা বুঝেই লড়াই করতে হবে। সেই লড়াই করার জন্য বিএনপিকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিএনপি ডাকলে সবাই আস্থাটা পাবে।’

নতুন দল ও জোটের বিষয় পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ইতোমধ্যে নিজেদের একটা ভাবনাও জানান দিচ্ছে জাতীয় পার্টি। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে।’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)- এই আট দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট। এর মধ্যে গণসংহতি আন্দোলন জোট থেকে বের হওয়ার কথা ভাবছে বলে গুঞ্জন আছে। অনেকেই বলছেন, গণসংহতি আন্দোলনসহ আরও কয়েকটি বাম ঘরানার দল মিলে সদ্য গঠিত গণ-অধিকার পরিষদ, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে। এ বিষয়ে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক নেতা জুনায়েদ সাকি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আপাতত আমরা ভোটাধিকারের জন্য আন্দোলন করছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত পরে জানাব।’

আপনার মতামত লিখুন :

আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সাথে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা নিয়ে সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
সেনাবাহিনীর এই অভিযানে একজন অপরাধীও যেন বাদ না যায় !
অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও সময় দিতে চায় বিশ্ব সম্প্রদায় !
ফিলিস্তিনকে সমর্থন ও ইসরাইলকে বয়কটের আহ্বান এরদোগানের
আজ ঢাকায় সমাবেশ,৯ মহানগরে শোভাযাত্রা;নতুন বার্তা দেবেন তারেক রহমান

আরও খবর